নিঃসঙ্গ সাঁকো-নৌকা, লকডাউনে বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ
বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ যেন কলাবস্তি। উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় লকডাউন পুরোপুরি মানা হচ্ছে। নিম্নবিত্ত পরিবারের অধিকাংশ বাসিন্দাই অর্ধাহার-অনাহারে রয়েছেন। কিন্তু প্রশাসনিক নির্দেশ উপেক্ষা করার সাহস তেমনভাবে কেউই দেখাচ্ছেন না। শিলিগুড়ির বিভিন্ন জায়গার লকডাউন ভাঙার ছবি যেখানে বারবার উঠে আসছে, সেখানে ব্যতিক্রমী পথে হাঁটছে মাটিগাড়া ব্লকের এই গ্রামীণ জনপদ।
মরার ভয়, বললেন ষাটোর্ধ্ব মণিমালা সিংহ। তাঁর বক্তব্য, আমরা শুনেছি রোগটা ছোঁয়াচে। অথচ মেডিকেল সামনেই। তাই তেমনভাবে এলাকার বাইরে কেউ যাচ্ছি না। সন্দেহ হলে বাইরের কাউকেও আসতে দিচ্ছি না। আর এই চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বাঁশের সাঁকোর মালিক তপন সাহা। লকডাউনের জন্য বন্ধ হয়েছে তাঁর রোজগারের পথ। বৃদ্ধা মা, স্ত্রী, তিন সন্তান নিয়ে ছজনের সংসার চালাবেন কী করে বুঝতে পারছেন না তিনি। বলেন, বাপঠাকুরদার আমল থেকে নৌকা-সাঁকোর ওপর নির্ভরশীল আমাদের পরিবার। পারাপারের রোজগার এবং টিউশন করে যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চালাই। কিন্তু এখন সব পথ বন্ধ। বুঝতে পারছে না ভবিষ্যত্ কি?
লকডাউনে নিঃসঙ্গ বাঁশের সাঁকো। বর্ষার প্রতীক্ষায় মহানন্দায় পড়ে রয়েছে একজোড়া নৌকাও। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে কিছুটা জল বেড়েছে এবং আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আরও কয়েকদিন বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় জল আরও বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু নদীতে জল বাড়লেও নৌকায় পারাপার শুরু হবে কি না, বুঝতে পারছেন না তপনবাবু। যা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি। কিন্তু প্রশাসনিক মহলকে স্বস্তি দিয়েছে কলাবস্তি। ভয়ের জন্য এলাকার বাইরে খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ যাচ্ছেন না। তাহলে বাজার বা আনাজ সংগ্রহ হচ্ছে কী করে? খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, এলাকার কয়েকটি দোকান থেকে চাল, ডাল, তেল কিনতে তেমন কোনও সমস্যা হচ্ছে না এখানকার বাসিন্দাদের। জিনিসে যাতে টান না পড়ে তার জন্য সপ্তাহান্তে দোকানদাররা মিলেমিশে শিলিগুড়ি শহরে এসে মাল নিয়ে যাচ্ছেন এবং এলাকায় ঢোকার আগে সাবান দিয়ে হাতমুখ ভালো করে ধুয়ে নিচ্ছেন। এমনই একজন রাম রায় বলেন, নিজেদের তো সাবধানে রাখতে হবে। একটু ঘুরপথ হলেও পঞ্চম মহানন্দা সেতু ব্যবহার করছি, যাতে যতটা সম্ভব মাল আনা যায়। এলাকাটি কৃষিনির্ভর হওয়ায় সবজির তেমন কোনও ঘাটতি নেই বলে জানান ইলা বিশ্বাস। বিপদের সময় নিজেরা সব ভাগাভাগি করে চলছেন বলে জানান তিনি। কিন্তু তাঁর মতো সকলেরই একটা আশঙ্কা, এমনভাবে চলবে আর কতদিন? সবকিছুতেই তো টান ধরছে। সবাই চাইছেন, পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে উঠুক।