হিন্দু বাড়িতে নমাজ পড়ে রোজা তুলছেন দুই কাশ্মীরি
লকডাউনে আটকে পড়েছেন এ রাজ্যে। কাশ্মীর থেকে এসেছিলেন তাঁরা। হাতে অর্থ নেই। কিন্তু তাঁদের রমজান মাস বিফলে যেতে দিচ্ছেন না হিন্দু পরিবার। হিন্দু পরিবারের অন্দরমহলে চলছে নমাজ পাঠ থেকে রোজা তোলা সবই। বাড়ির হিন্দু মহিলাদের এখন সময় কাটছে ঘরে থাকা দুই মুসলিম পরিবারের রোজা খোলার প্রস্তুতিতে।
এভাবেই লকডাউনে বর্ধমানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ইতিহাস লেখা হল নিঃশব্দে। বাংলার হিন্দু পরিবারের উদারতায় আতিথেয়তায় অবাক দুই কাশ্মীরি মুসলিম যুবক। তাদের ধর্মীয় রীতি মানার ব্যবস্থা করে দিতে পেরে তৃপ্ত হিন্দু পরিবার।
মঞ্জুর আহমেদ ও ফায়াজ আহমেদ। বাড়ি কাশ্মীরের শ্রীনগরের হজরতবাল এলাকায়। লকডাউনে আটকে পড়েছেন তাঁরা। কিন্তু তা বলে তাঁদের রমজান পালন ব্যর্থ হতে দেওয়া যায় কি! সেকথা ভেবেই এই দুই কাশ্মীরি যুবককে সেহেরি ও ইফতার করালেন রাইমণি দাস ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা।
প্রতি বছর শীতের মুখে আসেন শাল, উলের পোশাক, জ্যাকেট নিয়ে বর্ধমানে আসেন মঞ্জুর, ফায়াজ। ভাড়া থাকেন বর্ধমান শহরের ভাতছালা পাড়ার রাইমনি দাসের বাড়িতে। এবারও এসেছিলেন তেমনই। কিন্তু করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে হঠাৎ লক ডাউনে আটকা পড়েন তাঁরা। বাড়ি ফিরতে পারেননি।
শনিবার থেকে শুরু হয়েছে রমজান মাস। রোজা রাখা শুরু করেন তাঁরাও। কিন্তু নমাজ পড়বেন কোথায়। থাকেন তো হিন্দু বাড়িতে। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে মসজিদে যাওয়ারও উপায় নেই। তখনই মুসকিল আসান হয়ে দেখা দেন বাড়ির মালকিন রাইমনি দাস। নিজের বাড়িতেই নমাজ পড়ার ব্যবস্থা করে দেন।
রাইমণিদেবী বলেন, কাশ্মীর থেকে এলেও আমার কাছে ওরা দুই জন আমার ছেলের মতোই। লকডাউন চলছে। কি করে মসজিদে যাবে? তাই আমার বাড়িতেই ওদের নমাজ পড়ার ব্যবস্থা করেছি। রাইমণিদেবীর ছেলে পল্লব বলেন, ওঁরা বাইরে থেকে এসেছেন । লকডাউনে নিজেদের বাড়ি ফিরতে পারেননি। রমজান মাসে যা যা নিয়ম ওঁরা পালন করেন তার ব্যবস্থা করে আমাদের সময় কেটে যাচ্ছে। সেহেরি, ইফতারেরও ব্যবস্থা করেছি আমরা।
এই আতিথেয়তায় অবাক কাশ্মীরি যুবকরা। কোনও হিন্দু পরিবার এভাবে এগিয়ে আসবে, নিজেদের বেড রুমে মায়ের মতো যত্ন করে খেতে দেওয়া হবে কল্পনা করতে পারেননি। তাঁরা বললেন, বাংলার এক নতুন রূপ দেখলাম। ফিরে গিয়ে সবাইকে বলব। শিখলাম সবার উপরে ইনসান, ইনসানিয়ত। মানুষের সেবা করাই শ্রেষ্ঠ সেবা। ধর্ম পরিচয় সেখানে গৌন । এটাই মানবিকতা। ধর্ম তো আমরা নিজেরা সৃষ্টি করেছি। ইনসায়িত সবার আগে। এই পরিবার আমাদের ধর্ম পালনের সুযোগ করে দিয়েছেন। আজ বিপদের দিনে তাঁদের এই অবদান চিরদিন মনে রাখব।