সাইকেলে শাক বিক্রী, দুই মেয়ের জন্য লড়ছেন এক মা
দু’চোখে দুই মেয়েকে মানুষের মতো মানুষ করার স্বপ্ন। সেই লড়াই লড়তে পা দিয়েছেন সাইকেলের প্যাডেলে। সঙ্গে নিয়েছেন বিভিন্ন শাক ভর্তি ব্যাগ। ভোর রাতে সবজি আনতে যাওয়ার সময়ে ভয়ও লাগে। কিন্তু মেয়েদের বড় করার এই লড়াইয়ে তাঁকে যে জিততে হবেই। তাই দুই বছর ধরে ভোরবেলায় পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে শাক বিক্রী করছেন শিলিগুড়ি পুরনিগমের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের জ্যোতিনগরের বাসিন্দা সাথি সিংহ।
সাথি একসময় পেলকুজোতে বসবাস করতেন। সেসময় তাঁর স্বামী তাঁকে ছেড়ে চলে যান। দুই শিশুকে নিয়ে পথে এসে বসেন বছর তিরিশের এই মহিলা। দুই মেয়ে মুখের দিকে তাকিয়ে সিদ্ধান্ত নেন, কোনওভাবেই লড়াইয়ে পিছিয়ে যাবেন না। আশ্রয় নেন পেলকুজোতের এক ভাড়াবাড়িতে। সংসার চালানোর জন্য রাজমিস্ত্রীর কাজে যোগ দেন। বছর দুয়েক পরে কাজ বন্ধ হতেই ফের কর্মহীন হয়ে পড়েন তিনি।
সাথিদেবী জানান, সেসময় বাড়ির মালিক শাক বিক্রীর বুদ্ধি দেন। তবে বুদ্ধি পেলেও কাজ সহজ নয়। সেটা পরদিন ভোর সাড়ে তিনটের সময় লিউসিপাকুড়িতে শাক কিনতে গিয়ে সাথিদেবী বুঝে যান। তবে মনের সাহসের কাছে ভোররাতে একা সবজি আনতে যাওয়ার ভয়টা ছিল ক্ষীণ।
সাথিদেবী জানান, প্রতিদিন ভোররাতে লিউসিপাকুড়ি থেকে শাক নিয়ে আসতে মাঝেমধ্যেই ভয় লাগে। অনেকসময় ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি হলে রানিডাঙ্গা যেতে হয়। তবে আগে শাক কেনার পর টোটোয় করে শহরে আসতাম। জ্যোতিনগরে একজনের কাছ থেকে সাইকেল ভাড়া নিয়ে শহরে ঘুরতাম। দুই বছর হল, জ্যোতিনগরেই বাড়ি ভাড়া নিয়েছি। আমার ছোট মেয়ে এখন বয়স পাঁচ বছর। ও এখনও স্কুলে ভর্তি হয়নি। বড় মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে।
তিনি বলেন, লকডাউনের জেরে শহরের বিভিন্ন রাস্তা বন্ধ থাকায় অনেক খদ্দেরের কাছেই যেতে পারছি না। তবে লড়াইয়ে হারলে চলবে না। দুই মেয়ে দিকে তাকিয়ে শহরের অন্যান্য রাস্তায় ঘুরে বেড়াই। র্যাশন কার্ডের কুপনেও আমার নাম না আসায় যে ৬০-৭০ টাকা আয় হয়-তা দিয়ে কোনওভাবে তিনজনের সংসার চলে। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন বাড়িতে শাক বিক্রী করতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের কটূক্তি শুনতে হলেও তা যে লড়াইয়ে একটা অংশ, সেটাই তিনি বিশ্বাস করেন। তিনি বলেন, এভাবে বাড়ি বাড়ি শাক বিক্রী করায় মাঝেমধ্যেই অনেকের কাছে কটূক্তি শুনতে হয়। কিন্তু মেয়েদের বড় করার এই লড়াইয়ে এইসব অনেক ছোট। যে করেই হোক, কারও কাছে হাত না পেতে মেয়েদের বড় করতে পারলেই আমার লড়াই একদিন সার্থক হবে।