মোদীর রাজ্যে প্রায় অভুক্ত রাজ্যের বহু শ্রমিক
খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্যেই অভুক্ত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন বাংলার শ্রমিকরা। পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রাম, নদিয়ার নাকাশিপাড়া থেকে গুজরাটের সুরাটে এমব্রয়ডারির কাজে গিয়েছিলেন কয়েকশো শ্রমিক। লকডাউনে আটকে পড়া ওই শ্রমিকদের কোনও দিন একবেলা খাবারও জুটছে না। স্থানীয় প্রশাসনের কাছ মেলেনি সাহায্য।
কেতুগ্রাম থানার কান্দরা এলাকায় বাড়ি সিরাজুল হকের। তিনিও আটকে সুরাটে। বলেন, ‘কেতুগ্রাম থেকে আসা আমাদের সংখ্যা প্রায় একশো। এ ছাড়াও নদিয়া থেকে আরও শ’দেড়েক লোক এসেছে। করোনার জেরে হঠাৎ করে লকডাউন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় আমরা বাড়ি ফিরতে পারছি না। খেতে পাচ্ছি না। কোনও দিন একবেলা খেয়ে থাকছি। এখানে স্থানীয় কর্পোরেশন আমাদের দিয়ে একটি ফর্ম পূরণ করিয়েছে কিন্তু কোনও সাহায্য আসেনি। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, আমাদের ফেরানোর ব্যবস্থা করুন। না হলে আমরা খেতে না পেয়েই মরে যাব।’
মাস পাঁচেক আগে এই দলটি গিয়েছিল সুরাটের মাগদাল্লা রোডের গান্ধীকুটিরে। ঈদের আগে বাড়ি ফেরার পরিকল্পনা করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু তারই মধ্যে লকডাউন। ফলে টিকিট কেটেও বাড়ি ফিরতে পারেননি তাঁরা। লকডাউনের সুযোগ নিয়ে কারখানা মালিকরা তাঁদের প্রাপ্য টাকাও দেননি বলে অভিযোগ।
বর্ধমান থানা এলাকার কাটরাপোতার বাসিন্দা রমজান শেখ বলেন, ‘আমাদের এখানে সরকারের কোনও ব্যবস্থাপনাই নেই। কারখানা মালিকের কাছে আমাদের বকেয়া চাইতে গেলে লকডাউনের অজুহাতে সে টাকাও দিচ্ছে না। এদিকে আমাদের হাতও ফাঁকা। খেতে পাচ্ছি না। চরম কষ্টে আছি।’ তাঁরা জানাচ্ছেন, দিন দুয়েক আগে স্থানীয় কর্পোরেশন থেকে একটি ফর্ম দেওয়া হয়েছিল। শ্রমিকরা যে বাসে ফিরতে চেয়েছেন, সেই বাসের নম্বর ফর্মে উল্লেখ করতে বলা হয় তাঁদের। এদিকে সেই বাস রাজ্যে ফিরিয়ে আনার জন্য চেয়ে বসেছে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। রমজান বলেন, ‘নিজেরা খেতে পাচ্ছি না, হাতে টাকা নেই। এত টাকা কী ভাবে পাব?’
প্রসঙ্গত, সোমবারই ভিন রাজ্যে আটকে পড়া বাংলার মানুষদের ফেরানোর উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ নিয়ে তিনি একটি রূপরেখা তৈরির নির্দেশও দিয়েছেন সরকারি আধিকারিকদের। নদিয়ার নাকাশিপাড়া থানার বীরপুরের বাসিন্দা শাহিন আখতার বলেন, ‘আমাদের এলাকার অন্তত দেড়শো জন এখানে আটকে। কোনও সরকারি সাহায্য পাচ্ছি না আমরা। আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে একান্ত অনুরোধ, আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন। এ ভাবে থাকলে আমরা সবাই না খেতে পেয়ে মারা যাব। রোজার মাসে আমাদের এই অসহায়তার কথা শোনারও কেউ নেই। মালিক টাকা বাকি রেখেছেন। বাস বিশাল দর হেঁকেছে। আমরা ফিরব কী করে?’
প্রশ্ন একরাশ, কিন্তু জবাব দেবে কে?