বেকারত্বের ভয়ে অস্থির লক্ষ তরুণ গৃহশিক্ষক
দমদম এলাকায় কলাশাখার গৃহশিক্ষক শ্যামল শীল মাসে সাধারণত ৩০-৩৫ হাজার টাকা রোজগার করেন। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির অন্তত ৬০ জন পড়ুয়া জানিয়েছে, তারা আর পড়বে না। এদের কাছ থেকে মাথাপিছু ৫০০ টাকা করে নিতেন শ্যামল। এক ধাক্কায় তাঁর এ মাসের রোজগার ৩০ হাজার টাকা কমে গিয়েছে। শ্যামলের কথায়, ‘ওদের বাবা-মায়েরা কেউ টোটো চালান, কেউ খুব ছোট ব্যবসায়ী। এই আকালে তাঁরা বেতন দিতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন।’ মাত্র ১১০০ টাকা সম্বল এখন এই মাস্টারমশাইয়ের।
একই রকম হতাশ বরাহনগর, বালিগঞ্জ, জেলা শহরের বহু গৃহশিক্ষক। লকডাউনে নিয়মিত পড়ানো বন্ধের জেরে যাঁরা এখন কার্যত বেকার। প্রায় দু’মাসের কাছাকাছি বেতন না পেয়ে কপর্দকশূন্য অবস্থা। যাঁদের ব্যাঙ্কে কিছু ছিল, তা তলানিতে এসে ঠেকছে। যাঁদের তা নেই, সহায়তার মুখ চেয়ে আছেন। অনেকে বাড়িভাড়া মেটাতে পারছেন না। দেনায় ডুবছেন। মেটাতে পারছেন না মুদিখানার বিলও। কারও কাছে গিয়ে সাহায্যের কথাও বলতে পারছেন না সামাজিক অবস্থান, সম্মানে কুন্ঠিত হয়ে। বিকল্প পেশার কথাও ভাবছেন অনেকে। উৎসাহ নিয়ে অনলাইন ক্লাস, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ শুরু করেও পড়ুয়াদের সাড়া না পেয়ে অনেকেরই সে পথও বন্ধ হয়েছে।
২০০৯ সালে এসসিইআরটি ও রাজ্য সরকারের সমীক্ষা অনুযায়ী এ রাজ্যে কয়েক লক্ষ বেকার যুবক-যুবতী এই পেশার যুক্ত। দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গই গৃহশিক্ষকতার নিরিখে শীর্ষে। ওই সমীক্ষা মোতাবেক গ্রাম ও শহরের ৭১ শতাংশ প্রাথমিক ও ৮১-৮৫ শতাংশ উচ্চপ্রাথমিক পড়ুয়া গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে যায়। গৃহশিক্ষকদের বিভিন্ন সংগঠনের হিসেব, বর্তমানে এই সংখ্যাটা কোটির কাছাকাছি।
গৃহশিক্ষকদের তরফে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সরকারি ভাতার আবেদন করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ গৃহশিক্ষক কল্যাণ সমিতির তরফে কেন্দ্রীয় ভাবে তহবিল গড়ে দুঃস্থ শিক্ষকদের রেশন দেওয়াও চলছে। সংগঠনের পক্ষে সোহম ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা মুখ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীকে ই-মেল করেছি। সতর্কতা বজায় রেখে ছোট ছোট ব্যাচ করে হলেও পড়ানোর অনুমতি চেয়েছি। নইলে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।’