যে সিনেমাগুলি দেখলে বোঝা যায় ইরফান খান কত বড় মাপের অভিনেতা ছিলেন
ইহজগতের মায়া যে তিনি এত তাড়াতাড়ি ত্যাগ করবেন কে ভেবেছিল। কিন্তু নিয়তি হয়তো এটাই ছিল। অগণিত অনুরাগীদের কাঁদিয়ে চিরবিদায় নিলেন ইরফান খান।
ইরফান খান দেশের প্রথম সারির অভিনেতাদের মধ্যে একজন ছিলেন। আকস্মিক এই নক্ষত্রপতনে হয়তো সিনেমা তার ছন্দ হারাবে। কিন্তু এতদিন ধরে তিনি ইন্ডাস্ট্রিকে যা যা দিয়ে গেছেন তার জন্যে আমরা চিরঋণী থাকবো ইরফান খানের কাছে। ভালো থাকুন ইরফান।
দেখে নেওয়া যাক তার কাজগুলি:
দ্য ওয়ারিয়ার (২০০১)
পরিচালক আসিফ কাপাডিয়ার সিনেমা দ্য ওয়ারিয়ার। লাফকাডিয়া নামের এক ব্যক্তির জীবনের ওপর তৈরি এই সিনেমা। সে অকারণে নির্দোষ মানুষদের খুন করতো। এক সময় সেসব ছেড়ে অন্য জীবন বেছে নেয় লাফকাডিয়া। কিন্তু বুঝতে পারে এরকম ঘৃণ্য অতীত পেছনে ফেলে আসা এত সহজ নয়। ইরফানের এই সিনেমায় সম্ভবত একটিও সংলাপ ছিল না। কথা বলেছে তাঁর এক্সপ্রেশন।
হাসিল (২০০৩)
এই সিনেমাটি মুক্তির পর ইরফান জানান একঘেয়ে চরিত্র করতে করতে তিনি ক্লান্ত। এমনকি তিনি অভিনয় ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভাবছিলেন। এমন সময় তাঁর হাতে আসে হাসিলের রণবিজয় সিং-এর চরিত্রটি।এই চরিত্রটির গিরগিটির মতো বহু রূপ। এই মুহূর্তেই সে বন্ধু, পর মুহূর্তেই খুনি।
মকবুল (২০০৪)
মনোজ বাজপেয়ী নিজে বহুবার শিকার করেছেন যে বিশাল ভারদ্বাজকে তিনি বার বার অনুরোধ করেছিলেন মকবুলের চরিত্রটি তাঁকে দেওয়ার জন্যে। কিন্তু বিশাল ইরফানকেই মকবুলের চরিত্রে ঠিক করে ফেলেছিলেন। অসাধারণ স্ক্রিপ্ট। ইরফান খান এবং টাবুর চিত্তাকর্ষক অভিনয় এই সিনেমাকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে গেছে।
দ্য নেমসেক (২০০৬)
একদিকে ইরফান এবং টাবুর মতো দুঁদে অভিনেতা আর অন্যদিকে ঝুম্পা লাহিড়ীর গল্প। আর পরিচালনায় মিরা নায়ার। এই ছবি ভালো না হয়ে পারে? এক সাধারণ বাঙালি দম্পতির প্রবাসের জীবনপঞ্জি এবং তাদের সন্তানের সাবালক হয়ে ওঠার মর্মস্পর্শী গল্প।
ইয়ে সালি জিন্দেগি (২০১১)
এই সিনেমায় ভালো লাগার মত সব উপাদান রয়েছে। আলতো করেও কিভাবে কমেডি করা যায় তার বড় প্রমাণ এই সিনেমা। খুব সম্ভবত ইরফান খানের সাথে সৌরভ শুক্লার পাঠ এই সিনেমার সব থেকে ভালো দৃশ্য।
পান সিং তমার (২০১২)
ইরফান খান সম্ভবত একমাত্র অভিনেতা যিনি দেশের যে কোন প্রান্তের মানুষের চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলতে পারতেন। এই সিনেমায় ইরফান নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। এই চরিত্রের লড়াই ছিল ভ্রষ্টাচারের বিরূদ্ধে। ইরফান খানের জন্যে এরকম চরিত্র নতুন হলেও তিনি অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন চরিত্রটি।
দ্য লাঞ্চবক্স (২০১৩)
এটা এক অন্য ধরনের প্রেমের গল্প। এক অবসাদগ্রস্ত গৃহবধূ তার স্বামীর জন্যে ভালোবেসে খাবার তৈরী করে পাঠায়। কিন্তু কোনভাবে তা পৌছে অন্য এক অফিসের কর্মীর টেবিলে। এই সিনেমা মুম্বাইয়ের খাবার ডেলিভারি সিস্টেমকে খুব ভালোভাবে তুলে ধরেছে। রোজ একটু একটূ করে প্রেম হতে থাকে দুজনের মধ্যে। এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিন দুর্ধর্ষ অভিনেতা ইরফান খান, নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি এবং নিমরাত কৌর। ভাবতে অবাক লাগে রীতেশ বাত্রার প্রথম ছবিতেই কি অসাধারণ গল্পের বুনন।
তলবার (২০১৫)
২০০৮ সালের নয়ডার জোড়া খুনের ঘটনা অবলম্বনে তৈরী এই সিনেমাটি। এক উচ্চ মধ্যবিত্ত বাড়ির মেয়ে এবং বাড়ির কাজের লোককে একসাথে খুন করা হয়। এখানে ইরফান খানের চরিত্রের নাম অরুন কুমার, মুখ্য তদন্তকারী অফিসার। ইরফানের খানের অভিনয় দর্শকদেরও খুনিকে ঘৃণা করতে বাধ্য করবে।
পিকু (২০১৫)
সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এক বাবা-মেয়ের সম্পর্কে। সিনেমায় দীপিকা পাদুকোণ পিকুর চরিত্রে এবং অমিতাভ বচ্চন তার বাবার চরিত্রে অভিনয় করেন। পিকু আজকালকার স্বনির্ভর স্বাধীনচেতা মেয়ে। অন্যদিকে তার বাবা ভাস্কর বন্দোপাধ্যায় তার শারীরিক সমস্যা নিয়েই সর্বদা ব্যাতিব্যস্ত। এই বাবা মেয়ে দিল্লী থেকে কলকাতা রোড ট্রিপ করে এক ট্যাভেল এজেন্সির মারফৎ। ইরফান খান ওরফে রানা সেই ট্যাভেল এজেন্সির মালিক। অসাধারণ অভিনয় দক্ষতা ও হাস্যরস এই সিনেমাকে এক অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে।
হিন্দি মিডিয়াম (২০১৭)
ভারতে ইংরাজি শুধুমাত্র একটি ভাষাই নয় বরং উচ্চবিত্তের প্রতীক। আপনি ইংরাজি না জানলে বাকিরা আপনার দিকে তির্যক দৃষ্টিতে তাকাবে। জাত-পাত ছাড়াও এও এক অদ্ভুত বৈষম্য এই দেশে। এই অবস্থায় চাঁদনি চকের এক দম্পতির তাদের মেয়েকে সব থেকে ভালো স্কুলে ভর্তি করতে চায় যাতে তারাও এই ‘এলিট গ্রুপ’ এ আসতে পারে। ইরফানের খানের অভিনয়ের জন্যে এই সিনেমা অবশ্যই একবার দেখা উচিত।