বিশ্ব নৃত্য দিবসে প্রশ্নে শিল্পীদের ভবিষ্যৎ
ফুল দিয়ে ঘরটা আর এ বছর সাজানো হয়নি। বহু বছর পর এই প্রথম আজকের দিনটা কোনও অনুষ্ঠান, কোনও আড়ম্বর ছাড়াই কাটাবেন ওঁরা। আজ, বুধবার বিশ্ব নৃত্য দিবস। কিন্তু পারফর্মিং আর্টের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই দিনটা করোনা ও লকডাউনের কারণে এক রকম বর্ণহীনই কাটবে। এটাই সঙ্গীত-নৃত্য ও নাট্যশিল্পীদের কাছে যন্ত্রণার কারণ।
এক মাসের বেশি হয়ে গিয়েছে ক্লাসরুম বন্ধ। কবে খুলবে তার ঠিক নেই। দু’টো ক্লাসে প্রায় ৫০ জন ছাত্রীকে নাচ শেখান কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে সদ্য জুনিয়র ফেলোশিপ পাওয়া পৌলোমী চক্রবর্তী। ছাত্রীদের অনেকে এখনও শিক্ষিকার সাম্মানিক দিতে পারেননি। কবে পারবেন, তা জানেন না পৌলোমী। তাঁর ফেলোশিপের টাকা সময়ে আসবে কি না, সেটাও অনিশ্চিত। পৌলোমী বলছেন, ‘ছাত্রছাত্রীদের অনেকে আর শিখতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি রয়েছে।’
আগামী দিন যে খুবই কঠিন হতে চলেছে, তা নিয়ে পারফর্মিং আর্টিস্টদের সন্দেহ নেই। বিশেষ করে, যাঁদের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা সীমিত এবং যাঁদের রোজগার প্রধানত ছোটখাটো জলসা ও অনুষ্ঠানের উপর নির্ভরশীল।
অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে একই রকম অসহায় বোধ করছেন সঙ্গীত ও নাট্য জগতের নামী ব্যক্তিত্বদের একাংশও। তাঁদের অন্যতম মমতা শঙ্কর। উদয়ন গোষ্ঠীর অভিভাবক হিসাবে তিনি বলছেন, ‘আমার প্রতিটি ছেলেমেয়েকে ভালো রাখার দায়িত্ব আমার। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে জানি না। কিন্তু প্রত্যেককে মনোবল না-হারাতে বলব। খুব তাড়াতাড়ি আমরা সবাই আবার একসঙ্গে কাজ করব।’ আগামী দিন কঠিন, সেই বিষয়ে একমত রবীন্দ্রসঙ্গীতশিল্পী শ্রাবণী সেনও। তাঁর কথায়, ‘যাঁদের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে কম, তাঁদের চিন্তা অনেকটাই বেশি। বিশেষ করে অনুষ্ঠানগুলো যে কবে শুরু হবে, তা নিয়েই চরম অনিশ্চয়তা রয়েছে।’
পারফর্মিং আর্ট শেখানোর কি অন্য কোনও উপায় আছে?
জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ওডিশি নৃত্যশিল্পী অলোকা কানুনগো বলছেন, ‘অনলাইনে শেখানোর প্রস্তাবও উঠেছে। কিন্তু পারফর্মিং আর্টের ক্ষেত্রে সেটা করা কঠিন। কাজেই সব কিছু স্বাভাবিক না হলে এই জগতের শিল্পীদের পক্ষে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা সত্যিই কঠিন।’ নাট্যব্যক্তিত্ব দেবশঙ্কর হালদার গোটা পরিস্থিতিকে ‘সার্বিক সঙ্কট’ বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘যাঁরা এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের সবাইকে নিয়েই আমাদের থাকতে হবে।’ দেবশঙ্কর জানাচ্ছেন, ইতিমধ্যেই সংস্কৃতি মন্ত্রকের কাছে আবেদনও পাঠানো হয়েছে।
টেকনো ইন্ডিয়া কলেজের অধ্যাপক এবং নৃত্যশিল্পী ও গবেষক সুগত দাস আজ বিশ্ব নৃত্য দিবসেই কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক ও রাজ্য সরকারের সংস্কৃতি দপ্তরের কাছে এখানকার পারফর্মিং আর্টিস্টদের করুণ অবস্থার কথা জানাতে উদ্যোগী হয়েছেন। তিনি বলছেন, ‘এখানে শিল্পীদের অবস্থাও তো দিন-মজুরদের মতো। কাজ করলে তবেই পয়সা। প্রশাসন না-দেখলে আমরা টিকব কী করে!’