বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

কঠিন সময়ে পাশে, যেন দেবদূত প্রবীণদের কাছে

May 1, 2020 | 2 min read

‘কর্মসূত্রে আটকে বেঙ্গালুরুতে। কলকাতায় সেলিমপুরে বৃদ্ধ বাবা-মা রয়েছেন। ওঁদের ওষুধপত্র, রেশন-বাজার নেই। আপনারা কেউ যদি সাহায্য করেন, খুব উপকৃত হব।’

ফেসবুকে একটি বিশেষ গ্রুপে এমন শ’য়ে শ’য়ে এসওএস লেখা হচ্ছে প্রতিদিন। তবে দুঃসময়েও তো স্বপ্ন বাঁচে। তাই গ্রুপে পোস্ট হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই স্বপ্নের মতো উদয় হচ্ছেন ওঁরা। বাকিটা নিখাদ সত্যি। স্বেচ্ছাসেবকের দল যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, ওষুধ নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন দরজায়। লকডাউনে ‘সামাজিক দূরত্বে’র কথা খুব বলা হচ্ছে। 

কিন্তু এই সাহায্যকারী যুবক-যুবতীরা বলছেন, ভাইরাসকে হারাতে শারীরিক দূরত্ব জরুরি, কিন্তু সামাজিকতার এটাই সময়। কোনও সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হয়ে নয়, সামাজিক মাধ্যমে যুক্ত হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন কলকাতার ‘কেয়ার মংগার’রা। টাকা-পয়সা যথেষ্ট থাকলেও লকডাউনে শহরের বহু মানুষ, বিশেষ করে প্রবীণরা নানা রকম সমস্যায় পড়ছেন। বিপদের দিনে তাঁদের সাহায্যে ব্রতী হচ্ছেন ওঁরা।

বেহালার বাসিন্দা পেশায় রেলের অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার ৮০ পেরোনো সুবর্ণকুমার পতি পারকিনসনের রোগী। হাঁটাচলা প্রায় করতে পারেন না। ৭০ ছুঁই-ছুঁই কিডনির সমস্যায় ভোগা স্ত্রী দীপ্তিময়ীকে নিয়ে একাই থাকেন। ডাক্তার ছেলে রয়েছেন রাঁচিতে। লকডাউন শুরুর কিছু দিন পরেই ওষুধ ফুরিয়ে যায় বৃদ্ধ দম্পতির। অথচ এমন অসুখ যে এক মুহূর্ত ওষুধ ছাড়া চলে না। হেল্পলাইনে ফোন করতেই বাড়িতে পৌঁছে যান স্বেচ্ছাসেবক অধীপ চক্রবর্তী। বেহলা থেকে গার্ডেনরিচে গিয়ে ওষুধপত্র নিয়ে এসে বাড়ির বাজারটাও করে দিয়ে যান অধীপ। বৃদ্ধ সুবর্ণকুমারের কথায়, ‘বড় ভালো ছেলে। দেবদূতের মতো আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।’

কঠিন সময়ে পাশে, যেন দেবদূত প্রবীণদের কাছে

অধীপ আদতে বেঙ্গালুরুতে একটি বড় ই-কমার্স সংস্থার হয়ে বিজ্ঞাপন তৈরির কাজ করেন। লকডাউনের আগে কলকাতায় গোলপার্কের বাড়িতে এসে আটকে পড়েছেন। অধীপের মা-বাবাও প্রবীণ। তিনি বলছিলেন, ‘নিজের বাবা-মার কথা ভেবেই আমি এই কাজটা করতে এগিয়েছি। একই অবস্থা তো আমার বাবা-মার সঙ্গেও হতে পারত।’ বেহালার প্রবীণ দম্পতির কথা বলতে গিয়ে আবেগতাড়িত অধীপ বলেন, ‘কাকু-কাকিমা ওষুধপত্র পৌঁছে দেওয়ার পর আমাকে দইয়ের সরবত খাইয়েছিলেন। ওতে মিশে ছিল ওঁদের অনেক ভালোবাসা আর আশীর্বাদ।’

তেমনই যোধপুর পার্কে ঘরবন্দি প্রবীণ চোপরা দম্পতি মুম্বই-নিবাসী নিকটজনের কাছ থেকে নম্বর পেয়ে যোগাযোগ করেন এই স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে। একাধিক বার রেশন-বাজার, ওষুধ ও অন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন গল্ফ ক্লাব রোডের বাসিন্দা পেশায় ফিনান্সিয়াল অ্যানালিস্ট শুভ্রাংশু মুখোপাধ্যায়। উপকৃত অঞ্জু চোপরা বলছিলেন, ‘মাঝে একদিন তো আমাদের নগদও ফুরিয়ে গিয়েছিল। শুভ্রাংশু নিজের এটিএম থেকে টাকা তুলে দেয়। ওকে আমি চেক কেটে দিই।’

এ ভাবেই প্রাক্তন ফুটবলার প্রশান্ত রায়, একডালিয়ার বাসিন্দা প্রাক্তন কর্পোরেট-কর্তা সুদীপ্ত ভট্টাচার্যদের মতো বহু মানুষের নানা সুবিধা-অসুবিধায় পাশে দাঁড়াচ্ছেন কেয়ার-মংগাররা। এই গ্রুপের সক্রিয় সদস্য নীরব গিলানি বলেন, ‘মাসখানেক আগে বেঙ্গালুরুর এক ভদ্রমহিলা দেশজুড়ে সামাজিক মাধ্যমে কেয়ার মংগার নামে একটি গ্রুপ তৈরি করেন। সেই গ্রুপের হয়েই কলকাতা ও নিকটবর্তী শহরতলিতে পরিষেবায় আমাদের মতো অনেকে যুক্ত হয়েছি।’ একলা মানুষদের অনেকের চিকিৎসার প্রয়োজনেও পাশে থাকছেন ওঁরা।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#senior citizens, #Adhip Chakraborty

আরো দেখুন