গ্রামে ভরসা হবে স্বনির্ভর গোষ্ঠীও
করোনা-সন্ধানে আশা-কর্মীদের কাজে নামানোর পর জনসচেতনতা প্রসারে স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে ব্যবহারের জন্য রাজ্য সরকারকে পরামর্শ দিল অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন রাজ্যের গ্লোবাল অ্যাডভাইসারি বোর্ড। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এই গোষ্ঠী করোনা প্রতিরোধে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে বিবেচনায় বোর্ডের সর্বশেষ বৈঠকে এই সুপারিশ করা হয় রাজ্যকে।
বোর্ডের যুক্তি, পরিবারকে সতর্ক ও সচেতন করতে মহিলারাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সিংহভাগ সদস্যই মহিলা। তাই সচেতনতা প্রসারে তাঁদের ব্যবহার করলে গ্রাম-বাংলায় বাড়তি সুবিধা মিলবে।
রাজ্যে এই মুহূর্তে সক্রিয় স্বনির্ভর গোষ্ঠী রয়েছে এগারো লাখের কিছু বেশি। এর মধ্যে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের অধীনে রয়েছে আট লাখের কিছু বেশি। সমবায় দপ্তরের অধীনেও এক লাখ ষাট হাজার গোষ্ঠী সক্রিয়। সব মিলিয়ে গ্রামের প্রায় এক কোটি মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য। যাঁরা আবার রাজ্য গ্রামীণ লাইভলিহুড মিশনের অধীনে কাজ করেন। এর বাইরে পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের অধীনেও কিছু স্বনির্ভর গোষ্ঠী রয়েছে।
গ্লোবাল অ্যাডভাইসারি বোর্ড মনে করেছে, রাজ্যে করোনার কমিউনিটি বা গোষ্ঠী সংক্রমণ প্রতিহত করার একমাত্র পথ সচেতনতা বাড়ানো। মানুষকে বোঝাতে হবে। এই কাজে বাড়ির মেয়েদের আগে সচেতন করতে হবে। তবেই লক্ষ্যপূরণ সহজ হবে। রাজ্য সরকার গ্লোবাল অ্যাডভাইসারি বোর্ডের পরামর্শ পেয়েই স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে নিয়ে প্রচারের রূপরেখা তৈরির কাজ শুরু করেছে। আশা কর্মীদের মতো তাঁদেরও সন্ধানী অ্যাপে সংযুক্ত করার প্রস্তাবও বিবেচনা করা হচ্ছে।
নবান্নের কর্তারা মনে করেছেন, জেলা শহরে নানা ধরনের প্রচারমাধ্যম রয়েছে। গ্রামাঞ্চলে স্বনির্ভর গোষ্ঠী সংখ্যাগত ভাবে অনেক বেশি। গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিকাঠামো অনেকটাই দুর্বল। সেখানে গোষ্ঠী সংক্রমণ হলে সামাল দেওয়া কঠিন হবে। শুধু প্রচার নয়,স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে মন্দা কাটিয়ে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙা করতে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছে গ্লোবাল অ্যাডভাইসারি বোর্ড।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর পরই এই সুপারিশ কার্যকর করতে করোনা মোকাবিলায় তৈরি মন্ত্রিগোষ্ঠীর প্রথম বৈঠকে রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে ডেকে এ নিয়ে পরিকল্পনা তৈরির নির্দেশ দেন।
রাজ্য গ্রামীণ লাইভলিহুড মিশনের অধিকর্তা ও পঞ্চায়েত দপ্তরের সচিব ছোটেন লামা বলেন, ‘স্বাস্থ্য দপ্তর ইতিমধ্যে কিছু ভিডিয়ো ক্লিপিংস পাঠিয়েছে। তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর পোস্টার তৈরি করেছে। এগুলো আমরা একাধিক স্বনির্ভর গোষ্ঠী নিয়ে তৈরি মহাসঙ্ঘের নেতৃত্বকে দিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি। করোনা মোকাবিলায় কী করতে হবে, কী করা যাবে না, বাইরে থেকে বাড়ির লোকেরা ফিরলে কী করতে হবে, বিশেষ করে কর্মসূত্রে যাঁরা বাইরে থাকেন তাঁরা বাড়ি ফিরলে কী করবেন—ছবি-সহ এই প্রতিটি বিষয় বোঝানো হবে। মহাসঙ্ঘের নেতৃত্ব প্রতিটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের পাঠ দেবেন। যাতে গোষ্ঠীগুলি নিজ-নিজ এলাকায় ঘরে-ঘরে প্রচার করতে পারে। ইতিমধ্যে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি মাস্ক ও স্যানিটাইজারও তৈরি করছে।’