রেশন নিয়ে ক্ষোভের আগুন জেলায় জেলায়
শুরুটা হয়েছিল জঙ্গলমহল দিয়ে। এ বার অন্য জেলাতেও করোনাভাইরাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রেশন কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সংক্রমিত হতে শুরু করেছে। খাদ্য দপ্তর প্রাথমিক তদন্তের পর একাধিক জায়গায় অভিযুক্ত রেশন ডিলারদের সাসপেন্ড করলেও দুর্নীতি বন্ধ হয়নি। বরং বিভিন্ন জেলাতে দায় এড়াতে শাসকদলের স্থানীয় নেতাদের ঘাড়েই দোষ চাপাচ্ছেন ডিলাররা।
বিষয়টি এতদিন ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও শনিবার রেশনে খাদ্যশস্য কম দেওয়ার অভিযোগে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় মুর্শিদাবাদের সালার থানার পুনাশী গ্রাম। ন্যায্য রেশনের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন উপভোক্তারা। পরে অভিযুক্ত রেশন ডিলার হালিম শেখের বাড়ি লক্ষ করে ইটবৃষ্টি, দোকান ভাঙচুর ও রেশন দ্রব্য বাইরে ফেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। রেশন নিয়ে বিক্ষোভে অশান্তি ছড়ায় পূর্ব বর্ধমান, হুগলির সিঙ্গুর এবং নদিয়াতেও।
পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রাম-১ ব্লকের আনখোনা গ্রামে রেশন ডিলারের মেয়েকে মারধর করাই শুধু নয়, গণ্ডগোল থামাতে গেলে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি ও তাঁর স্ত্রীকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। বর্ধমান শহরের মেহেদিবাগান এলাকায় চাল কম দেওয়ার অভিযোগে রেশন দোকানে বিক্ষোভ দেখান এলাকার বাসিন্দারা। কালনা-২ ব্লকে তিনটি রেশন দোকানে অসঙ্গতি সামনে আসায় সংশ্লিষ্ট ডিলারদের শোকজ করেছে খাদ্য দপ্তর। এই পরিস্থিতিতে রেশন ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে শনিবার বেশ কিছু রেশন দোকান পরিদর্শন করেন রাজ্যের কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার।
তিনি বলেন, ‘রেশন নিয়ে কোথাও কোনও অভিযোগ আছে কি না, তা দেখতেই বেরিয়েছিলাম। ডিলার, গ্রাহক ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি।’ এদিকে, রেশনের চাল পাচার করতে গেলে গ্রামবাসীরা গাড়ি-সহ হাতেনাতে পাকড়াও করেন একজনকে। ঘটনাটি ঘটে সিঙ্গুর থানার গোপালনগর পালপাড়া এলাকায়। অভিযোগ, রেশন ডিলার অসীম সাহা রেশনের চাল সিঙ্গুরের কৃষাণমান্ডি থেকে গাড়িতে বোঝাই করে পালপাড়া এলাকায় রামকুমার সাউ নামে এক আলু ব্যবসায়ীর বাড়িতে পৌছে দেওয়ার সময় ধরা পড়ে যান। খবর পেয়ে সিঙ্গুর থানার পুলিশ এসে চালক-খালাসি, আলুর ব্যবসায়ীকে আটক করে।
রেশনের চাল পাচার করার অভিযোগ উঠেছে নদিয়ার রানাঘাটেও। রাইস মিলে লরি ভর্তি চাল ঢুকতে দেখে উত্তেজনা দেখা দেয় রানাঘাট থানার হবিবপুরের একটি রাইস মিলে। লরি ভর্তি চালের বস্তায় কেন্দ্রীয় সরকারের স্বচ্ছ ভারত ছাপ রয়েছে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা চাল পাচারের অভিযোগ তুললে ঘটনাস্থলে আসেন রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার।
সাংসদেরও অভিযোগ, ‘এগুলো রাজ্য সরকারকে দেওয়া কেন্দ্রীয় সরকারের চাল। বস্তায় স্বচ্ছ ভারতের ছাপ রয়েছে। মিল মালিক মিথ্যা বলছেন। পুলিশও ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টে মিল মালিকের অভিযোগের ভিত্তিতে ভিড় জমানোর অভিযোগে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।’ যদিও অভিযুক্ত মিল মালিক শ্রীকৃষ্ণ সাউয়ের ব্যাখ্যা, ‘লকডাউনের বাজারে জুটের বস্তা মিলছে না বলে পুরোনো ছাপমারা বস্তা ব্যবহার করা হয়েছিল।’
তবে রেশন দুর্নীতি ঘিরে সবচেয়ে বড় ঝামেলার ঘটনা ঘটে শনিবার মুর্শিদাবাদে। পরিস্থিতি এতটাই মারাত্মক আকার নেয় যে কান্দি ও সালার থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আটক করা হয় রেশন ডিলার ও তাঁর স্ত্রীকে। ভরতপুর ২ ব্লকের বিডিও পরিতোষ মজুমদার ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে শান্ত হয় বিক্ষোভকারীরা।