গঙ্গাজলের ভাইরাস মারতে পারে করোনা! কেন্দ্রের ক্লিনিকাল ট্রায়ালের প্রস্তাব ওড়াল আইসিএমআর
করোনার গবেষণায় এখনই গঙ্গাজল নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নয় ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)। গঙ্গাজল করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে কাজে আসতে পারে এমন দাবি করেছে কেন্দ্রের জল শক্তি মন্ত্রক। আইসিএমআরকে এই ব্যাপারে গবেষণা চালানোর জন্য চিঠি দিয়ে আবেদনও করা হয়। তারই জবাবে আইসিএমআর জানিয়েছে, ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে গঙ্গাজলের ভূমিকা নিয়ে এখনই তেমন কোনও নির্ভরযোগ্য প্রমাণ নেই। তা ছাড়া করোনার চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপির প্রয়োগ নিয়েও এখন উচ্চপর্যায়ের গবেষণা চলছে আইসিএমআরে।
গঙ্গাজলে এমন ভাইরাস মিলেছে যা করোনাভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে পারবে, এমন দাবি করেছে জল শক্তি মন্ত্রক। অতুল্য গঙ্গা নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনেরও দাবি এমনটাই। সেই কারণে গঙ্গাজল নিয়ে গবেষণা শুরু করার জন্য আইসিএমআরকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
গত ৩ এপ্রিল আইসিএমআর ও প্রধানমন্ত্রীর দফতরে চিঠি দিয়ে অতুল্য গঙ্গা জানায়, গঙ্গার জলে ‘ব্যাকটেরিওফাজ’ ভাইরাসের খোঁজ মিলেছে। এই ভাইরাস যে কোনও সংক্রামক ব্যাকটেরিয়াকে নিকেশ করতে পারে। তাই মনে করা হচ্ছে সার্স-কভ-২ ভাইরাসকে থামাতে এই ব্যাকটেরিওফাজ ভাইরাস কাজে আসতে পারে।
এই ব্যাকটেরিওফাজ কী? সংক্ষেপে ‘ফাজ’ ভাইরাসও বলা হয়। ব্যাকটেরিয়া-বিনাশকারী ভাইরাস বলেই এমন নাম। ফেলিক্স ডি হেরেলি প্রথম ব্যাকটেরিওফাজ আবিষ্কার করেছিলেন। এদের অনেক প্রকারভেদ, আকারেও ভিন্ন। সাধারণত ব্যাঙাচির মতো দেখতে এই ভাইরাসদের মাথা ষড়ভূজাকৃতি। মাথা আর লেজ—শরীরের দুটো সক্রিয় অংশ। আর আছে বেসপ্লেটে ছ’ টি স্পর্শক তন্তু, অনেকটা পায়ের মতো। দৈর্ঘ্যে সাধারণত ১০০ ন্যানোমিটার ও ব্যাস ২৫ ন্যানোমিটারের মতো। আকারে সাধারণ ভাইরাসের চেয়ে বড়। এরা ব্যাকটেরিয়ার ভেতরে ঢুকে প্রতিলিপি তৈরি করে সংখ্যায় বাড়তে থাকে। একটা সময় ব্যাকটেরিয়াকেই নষ্ট করে দেয়।
অতুল্য গঙ্গার সদস্য কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) মনোজ কিশওয়ার বলেছেন, আইআইটি কানপুর, কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (সিএসআইআর)-ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টক্সিকোলজি রিসার্চের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে যে গঙ্গাজলে ব্যাকটেরিওফাজ রয়েছে। তিনি বলেছেন, এই ব্যাপারে সিএসআইআরের ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (NEERI)-এর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারাও ভিডিও কনফারেন্সে আইসিএমআরকে জানিয়েছে, গঙ্গার জলে ভাইরাস প্রতিরোধী কী কী উপাদান রয়েছে সেটা খতিয়ে দেখতে।
গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করার কেন্দ্রীয় প্রকল্প ‘নমামি গঙ্গে’-র তরফেও আইসিএমআরকে চিঠি দিয়ে গঙ্গাজলের ক্নিনিকাল ট্রায়াল করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আইসিএমআরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, এই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। কোনও সংস্থা বা মেডিক্যাল ফার্ম যদি এই গবেষণা চালাতে চায় তাহলে তারা সেটা করতে পারে। কিন্তু আইসিএমআরে এই মুহূর্তে প্লাজমা থেরাপি নিয়ে জরুরি গবেষণা চলছে। তাই এখনই গঙ্গাজল নিয়ে ক্লিনিকাল ট্রায়াল করা সম্ভব নয়।