শ্রমিকদের ফেরাতে চূড়ান্ত তৎপরতা, রেলকে আরও ৮ ট্রেনের তালিকা দিল নবান্ন
লকডাউনে স্তব্ধ পরিস্থিতির মাঝে নতুন করে চিন্তার বড়সড় কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিকের দল। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আটকে থাকা শ্রমিকরা এখন তড়িঘড়ি বাড়ি ফেরার জন্য মরিয়া। যার জেরে কখনও হেঁটে, কখনও দু’চাকা সঙ্গী করেই দূর থেকে দূরের পথে পাড়ি দিচ্ছেন তাঁরা। ঘটে যাচ্ছে দুর্ঘটনাও। শুক্রবার ভোরে মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় রেলট্র্যাকে ঘুমন্ত ১৬ শ্রমিককে পিষে দিয়ে দিয়েছে মালগাড়ি। এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর নড়েচড়ে বসেছে বিভিন্ন রাজ্য। আর দেরি নয়, দ্রুত বাইরে আটকে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরাতে এখন তৎপরতা তুঙ্গে। এই পরিস্থিতিতেই নবান্নও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য আটটি ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। যাতে ফিরতে পারবেন অন্তত ৩০ হাজার শ্রমিক। ট্রেনগুলি কোথা থেকে কতজন শ্রমিককে নিয়ে কোথায় ফিরবে, তা জানিয়ে রেল মন্ত্রকে একটি তালিকা পাঠিয়েছে রাজ্য সরকার।
সূত্রের খবর, এই আটটি ট্রেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আটকে থাকা মূলত উত্তরবঙ্গ এবং জঙ্গলমহলের শ্রমিকদের জন্য চেয়েছে নবান্ন। ৯, ১০ এবং ১১ মে – তিনদিন ধরে যাতায়াত করবে ট্রেনগুলি। প্রথম দিন বেঙ্গালুরু এবং হায়দরাবাদ থেকে দফায় দফায় ৪টি ট্রেন ছাড়া হবে। প্রথম ট্রেনটি বেঙ্গালুরু থেকে এসে পৌঁছবে বাঁকুড়ায়। সেখানে ঝাড়গ্রাম এবং বাঁকুড়ার ১৮০০র বেশি শ্রমিক ফিরবেন। দ্বিতীয় ট্রেন বেঙ্গালুরু থেকে নিউ জলপাইগুড়ি আসবে। এই ট্রেনে ফিরবেন চার জেলা – আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, কোচবিহার ও কালিম্পংয়ের প্রায় ৩৮০০ জন শ্রমিক। বেঙ্গালুরু থেক থেকে পুরুলিয়াগামী তৃতীয় ট্রেনটি ফিরবে পুরুলিয়া, বীরভূম, পশ্চিম বর্ধমানের হাজার দুয়েক শ্রমিককে নিয়ে।
পরেরদিন ১০ মে জলন্ধর থেকে একটি ট্রেন ব্যান্ডেলে আসবে। তাতে ফিরবেন হুগলি ও নদিয়ার ১৩০০ জন। ১১ তারিখ তিনটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তার মধ্যে দুটি ট্রেন ফেরাবে ভেলোরে চিকিৎসা করতে গিয়ে আটকে পড়া এ রাজ্যের বাসিন্দাদের। ভেলোর থেকে একটি ট্রেন হাওড়ায় আসবে বর্ধমান, উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দাদের নিয়ে। আরেকটি ট্রেন ফিরবে খড়গপুরে। তাতে পূ্র্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলি, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দাদের ফেরানো হবে। একইদিনে আরেকটি ট্রেন চণ্ডীগড় থেকে দুর্গাপুরে আসছে। তাতে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম বর্ধমানের বাসিন্দারা ফিরবেন। আপাতত এমনই পরিকল্পনা করা হয়েছে নবান্নের তরফে। রেল মন্ত্রকের তরফে ট্রেনের ব্যবস্থা করে বাকিটা কার্যকর করার অপেক্ষা। তা হলেই লকডাউনের মাঝেও নিশ্চিন্তে অনেকে ঘরে ফিরতে পারবেন বলে আশা রাজ্য সরকারের।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের আতঙ্কের মাঝে এই পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরানো নিয়ে শুরু হওয়া রাজনীতি ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের বিরুদ্ধে তাঁদের রাজ্যে ফেরাতে অনীহার অভিযোগে সরব হয়েছেন কেন্দ্র ও রাজ্যের বিজেপি নেতারা। স্বয়ং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও এনিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। অন্যদিকে, কেন্দ্রের মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিরোধী নেতৃত্বও। তবে এসবকে বিশেষ গুরুত্ব না দিয়ে আসল কাজটা করতেই বেশি মনোযোগী নবান্ন, আটটি ট্রেনের নিখুঁত পরিকল্পনা বোধহয় তারই প্রমাণ।