সংসার সামলে করোনার যুদ্ধে এই গরবিনী মায়েরা
নামেই মহকুমা। কিন্তু আকারে ঝাড়গ্রাম, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, দার্জিলিং বা কালিম্পং জেলার সমান। সাতটি বিধানসভা এলাকার পাশাপাশি আছে তিনটি পুরসভা। জনসংখ্যা সাড়ে ২২ লক্ষেরও বেশী। বিশাল এই বারুইপুর মহকুমায় করোনা যুদ্ধে সামিল প্রশাসনের বিশাল মহিলা ব্রিগেড।
দিনরাত এক করে অফিস সামলানোর পাশাপাশি গভীর রাতে বাড়ি ফিরে তাঁদের অনেককেই অভিমানী সন্তানের মানভঞ্জন করতে হচ্ছে। কাউকে আবার ধরতে হচ্ছে লকডাউনে বেসামাল সংসারের হাল। ঘর সামলে যে ভাবে তাঁরা বাইরের এই সঙ্কট সামলাচ্ছেন, তার প্রশংসা করে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, ‘আমাদের জেলার মহিলা আধিকারিকরা পরিবার সামলেও গভীর রাত পর্যন্ত অসম্ভব ভালো কাজ করছেন। এটা তারিফ করার মতো।’
কলকাতার রুবি হাসপাতাল লাগোয়া এলাকার পাশাপাশি রাজারহাট-নিউ টাউনের গা ঘেঁষে সুদূর সুন্দরবনের কুলতলি ব্লক মিলিয়ে ১৩৫৫.৪৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সজাগ ও সতর্ক দৃষ্টি রাখছে মহিলা আধিকারিকদের টিম। নেতৃত্বে বারুইপুরের মহকুমাশাসক দেবারতি সরকার। টিমে রয়েছেন রাখি পাল, রোশনী সরকারের মতো দু’জন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর। আছেন সুমিত্রা সেনের মতো মহকুমার বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের আধিকারিক। আবার মহকুমা জুড়ে নারী ও শিশু সুরক্ষা কাজের পাশাপাশি ত্রাণ পুনর্গঠনের কাজ করে যাচ্ছেন বারুইপুর মহিলা থানার আইসি কাকলি ঘোষ কুণ্ডু।
স্বাস্থ্যের কাজ দেখাশোনা করছেন বারুইপুর ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক মধুমিতা বিশ্বাস ও বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালের দুই অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার অনন্যা ভট্টাচার্য এবং বান্টি চক্রবর্তী। নাগরিকদের যাতে সমস্যা না হয়, সে জন্য রাতেও মহকুমাশাসকের দপ্তরে সজাগ থাকছে বিশেষ দল। কোথাও সমস্যা হলে দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছেন দলের সদস্যরা।
এলাকার আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার পাশাপাশি ভিন জেলার শ্রমিকদের বাড়ি পাঠানো, রেশন ব্যবস্থা সচল রাখা, অসুস্থ মানুষদের ওষুধ পৌঁছনো, হাসপাতাল পরিদর্শন থেকে মহকুমাজুড়ে তৈরী ৪১টি কোয়ারান্টিন সেন্টার পরিদর্শন — সবই করছেন তাঁরা। পুরো কর্মকাণ্ডের নেতৃত্বে মহকুমাশাসক দেবারতি সরকার। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে এই লড়াই। অনবরত বেজে চলেছে ফোন।
এ দিকে করোনা, লকডাউনের জেরে বাড়ির কাজে সহায়করা আপাতত আসতে পারছেন না। তাই রাতে বাড়ি ফিরে রান্নাবান্না করা, জামাকাপড় কাচা, ঘর পরিষ্কার করতে করতেই ফোনে ফোনে জেলার সঙ্গে মহকুমা এমনকি ব্লকের নানাবিধ পরিস্থিতি সামাল দিতে হয় এঁদের সকলকেই। মায়ের ভার কিছুটা লাঘব করতে দেবারতির বছর দশেকের ছোট্ট মেয়ে প্রতি রাতে হাত লাগায় রুটি তৈরীতে।
রাখি পালের স্বামীও সরকারি আধিকারিক। বাড়িতে পাঁচ বছরের মেয়ে। রাতে বাবা-মা বাড়ি ফিরলে আর তাঁদের ছাড়তে চায় না শিশু। মায়ের জন্য সারাদিন মুখ ভার করে থাকা রোশনীর বছর তিনেকের মেয়ে বাড়িতে ফিরলেই কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সুমিত্রার চার বছরের ছেলেও তাই। মধুমিতার মেয়ে অবশ্য এদের চেয়ে বয়সে খানিকটা বড়। তাই স্বাস্থ্য আধিকারিক মায়ের দায়িত্ব সে বোঝে।