ছন্দে ফিরছে শহরের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল
ভাবা হয়েছিল, লকডাউন মিটলে মস্তিষ্কের জটিল অপারেশনটা করা হবে। কিন্তু ব্রেন টিউমারের গতিপ্রকৃতি সময় দেয়নি। দু’জনেরই সফল ব্রেন টিউমার অপারেশন হয়েছে বাঙুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সেসে (বিআইএন)। সময় লেগেছে প্রায় আট ঘণ্টা।
অপেক্ষার সুযোগ দেননি দক্ষিণ কলকাতার তিন রোগিণী ও দুই রোগীও। চিকিৎসক বুঝেছিলেন, লকডাউন ওঠা পর্যন্ত সবুর করলে স্তন ও থাইরয়েড গ্রন্থীর ক্যান্সার ডালপালা মেলতে পারে পাকস্থলি বা ফুসফুসেও। এসএসকেএমের জেনারেল সার্জারি বিভাগে তিনদিনে ওই পাঁচ জনের সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে।
এনআরএসের রক্তরোগ বিভাগের আইসোলেশনের ছবিটাও বিশ্বজোড়া কোভিড মহামারীর আবহে অন্য রকম। গত ক’দিনে দুই রোগীর অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের মতো জটিল ও বিরল প্রক্রিয়া চলছে। নতুন অস্থিমজ্জা ফোঁটা ফোঁটা করে তাঁদের ধমনিতে নতুন প্রাণসঞ্চার করছে করোনার চোখরাঙানি উপেক্ষা করেই।
শহরের তিনটি সরকারি হাসপাতালের ছবিতে ইঙ্গিত, কোভিড জর্জিরত রোজনামচায় ধীরে হলেও ফিকে হচ্ছে অনিশ্চয়তা আর অপেক্ষার হতাশা। ক্রমেই স্বাভাবিক হচ্ছে সাধারণ স্বাস্থ্য পরিষেবা। গুরুতর অসুস্থরা ফের পেতে শুরু করেছেন বহুকাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা, গত কয়েক সপ্তাহে যা অধরা হয়েছিল।
কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালও গা-ঝাড়া দিয়ে উঠছে। কোভিড পজিটিভ হয়ে বড় অংশের চিকিৎসাকর্মী আইসোলেশনে। ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীদের এ ভাবে ধরাশায়ী হয়ে পড়া আর করোনার ছোঁয়ায় বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল যেখানে সাময়িক বন্ধ–সেই পরিস্থিতিতেও বেশ কিছু হাসপাতালে দেখা যাচ্ছে উল্টো ছবি। যা করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়েও আমজনতার আস্থা ও মনোবলে অক্সিজেন জোগাবে নিঃসন্দেহে।
লকডাউন শুরুর পর থেকে সবচেয়ে বেশী সমস্যায় পড়েছিলেন কিডনি ও ক্যান্সার রোগীরা। লিভার ও অন্য অঙ্গের ক্রনিক রোগীদেরও সঙ্কটে পড়তে হয়। গণপরিবহণের অভাবে অসুস্থকে হাসপাতাল পর্যন্ত আনাই বাড়ির লোকের পক্ষে দুষ্কর হয়ে ওঠে। ফলে ডায়ালিসিস, কেমোথেরাপি, রেডিয়োথেরাপি-সহ জীবনদায়ী চিকিৎসা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছিলেন অনেকে। যার জেরে প্রাণসংশয়, এমনকী মৃত্যুর নজিরও রয়েছে।
সম্প্রতি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের তরফে বিষয়টি নিয়ে তৎপরতা শুরু হয়। এখন দেখা যাচ্ছে, বহু হাসপাতালই স্বাভাবিক পরিষেবার প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে।