২০ থেকে ৩০ বছর জীবন আপনাকে যা যা শেখাবে
সদ্য ২০ পেরিয়ে ২১-এ পা রেখেছেন? এবারের জন্মদিনে বিশেষ কিছু প্ল্যান নেই। পড়াশুনো আর চাকরি খোঁজার তাগিদে জেরবার। একই অবস্থা বন্ধুদেরও। তাই সেই মাঝরাতের কেককাটা, উল্লাসগুলো আজ মিসিং। পুরনো দিনের ছবিগুলো দেখলে এখন হাসি পায়। সবাই এখন জীবন নিয়ে বড্ড সিরিয়াস।
এটাই তো সময়। আসলে ২১ এর পর সবার জীবনেই আসে বিশেষ পরিবর্তন। কলেজ শেষ হলেই চেনা যায় কে আসল মানুষ। চেনা যায় নিজের পরিবার-পরিজন আত্মীয়কেও। তোর বন্ধু চাকরি পেয়ে গেল তুই কবে পাবি এই তাড়নায় সারা রাত দুচোখের পাতা এক হতে চায় না। রাতের পর রাত এমনি ভাবেই কেটে যায়। কত চিন্তা, কত স্বপ্ন – আসলে এই ভাবনা শুধু তিতলির নয়।
বিজ্ঞান বলছে এই ২০ থেকে ৩০ যে কোনও মানুষের জীবনেই খুব গুরুত্বপূর্ণ। কত কী যে বদলে যায় এই ১০ বছরে। যেমনঃ
সত্যিকারের বন্ধুর গুরুত্ব
বন্ধু তো জীবনে অনেক আসে। স্কুল-পাড়া-কলেজ..কিন্তু কজন জীবনে প্রকৃত বন্ধু হয়ে ওঠে? সেই জায়গাটাই বা কতজন নিতে পারে? জীবনে বন্ধু চেনা খুবই প্রয়োজন। আসলে বন্ধুত্ব- এই শব্দটির গুরুত্ব খুবই বেশী। এই উপলব্ধি ২০ এর পরেই আসে।
পরিবার-পরিজনদের চেনা যায়
রক্তের সম্পর্ক মানেই কি তাঁর সঙ্গে আপনার খুব ভালো মনের মিল হবে? সম্পূর্ণ ভুল ধারনা। বাস্তবে এরকমটা হয় না। আপনার বাবা-মায়ের সঙ্গেও আপনার মতের অমিল হতে পারে, তুতো ভাইবোনদের সঙ্গেও হতে পারে। ব্যক্তিজীবনে সকলেই কিন্তু খুব স্বার্থপর। আজকের দিনে নিজের ভালোটাই সকলে আগে বোঝে। তাই এড়িয়ে চলাও শিখুন।
ব্যর্থতাতেই জীবনের শেষ নয়
বারবার ব্যর্থতায় হতাশ হবেন না। আপনার কাজ, পরিশ্রম ও নিষ্ঠার দাম আছে। আজ না হলেও কাল সফলতা আসবেই। কাজেই ভেঙে পড়বেন না। অন্য কারোর কথায় কান দেবেন না। জীবনে কোনও এক সময়ে সকলেরই ব্যর্থতা আসে।
নিজের যত্ন নিন
এবার একটু নিজেকে ভালোবাসুন। অনেক তো হল। নিজের যত্ন নিন। তা বলে রূপচর্চা নয়। নিজের পছন্দমতো পড়াশুনো করুন, চাকরির চেষ্টা করুন। খাওয়া দাওয়া করুন। রোগা হন, মোটা হন। হেয়ার কাট করুন। পছন্দের বই পড়া, সিনেমা দেখা, পছন্দের মানুষদের সঙ্গে আড্ডা, ঘুরতে যাওয়া সব করুন। যা যা এতদিন করেননি সব করে ফেলুন। নিজের জীবনে পরিবর্তন আনুন। এবয়সে যা য়া করবেন ৫০ বছর বয়সে গিয়ে ছেলেমেয়েদের সেসব গল্প বলতে পারবেন।
শেখার সবে শুরু
জীবনের কোনও শেখাই ফেলা যায় না। কিন্তু মনে রাখবেন ২০ পেরোলে শেখা সবে শুরু হয়। সে আপনার কর্মক্ষেত্র হতে পারে, জীবন হতে পারে, বয়ফ্রেন্ড, গার্লফ্রেন্ড থেকে শুরু করে যৌন জীবন – সবই শিখবেন।
সফলতার অনেক অর্থ
কখন আপনি নিজেকে সফল বলবেন? ভালো চাকরি পেয়ে? সুন্দরী বউ জুটিয়ে বা মোটা মাইনের ছেলে জুটিয়ে? নাকি শেষ সেমেস্টারে গোল্ড মেডেল পেয়ে? যে কোনও অ্যাচিভমেন্টেই সকলে আপনার পিঠ চাপড়াবে, কিন্তু সেখানেই জীবনের ইতি নয়। জীবন আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।
যা কিছু খারাপ তাকে দূরে সরিয়ে দিন
খারাপ স্মৃতি নিয়ে বাঁচবেন না। যা কিছু আপাত দৃষ্টিতে মনে হবে খারাপ, নিজের চেতনায় যা বাঁধবে তাকে দূরে সরিয়ে দিন। নেগেটিভনেস যত কম থাকবে ততই ভালো।
জীবন মানেই যুদ্ধ
বেঁচে থাকা মানেই যুদ্ধ করা। একটু খেয়াল করুন। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আপনাকে ঠিক কি কি করতে হয়? লড়াইয়ে একঘেঁয়েমি আসে। ক্লান্তি আসে। কিন্তু থেমে পড়লে হবে না। সব যুদ্ধেই জয় আসে না, কিন্তু লড়তে তো হবেই।
জীবিকা আর জীবন গুলিয়ে ফেলবেন না
খুব বড় চাকুরে, মাস ফুরোলেই পকেট উপচে পড়ে এরকম অনেক ব্যক্তিরই কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে সুখ থাকে না। সমীক্ষা তাই বলছে। বেঁচে থাকতে টাকার দরকার। আর আপনি কোন পদে চাকরি করছেন সেই দিয়ে বাকিদের বিচার করবেন না। ওটা একটা তকমা মাত্র। যেদিন তকমা চলে যাবে সেদিন আপনিও আর পাঁচজনের মতোই। কাজেই পা- মাটিতে রাখুন। যেটুকু পেয়েছেন বা পাচ্ছেন তাই দিয়েই সুখে থাকুন।
নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিন
আপনি কি করতে পারেন সেউ বিষয়ে কেউ পরামর্শ দিতে পারে, ভুল করলে সাবধান করতে পারে, কিন্তু নিজের জীবনের সিদ্ধান্তটা আপনি নিজেই নিন। ভুল হলে ঠকবেন আর ঠিক হলে তাও শিখবেন। কিন্তু কারোর উপর ভরসা করবেন না। নিজের পায়ে দাঁড়ান। নিজের জীবনের ঠিক, ভুল নিজের কাঁধে নিন। অন্যকে দোষারোপ করে বাঁচার মধ্যে কিন্তু কোনও শান্তি নেই। আর বেঁচে থাকতে জীবনে অন্তত একটা ভালো মানুষের খুবই প্রয়োজন। তা নিজেই খুঁজে নিন।