অনির্দিষ্টকাল লকডাউন সমাধান নয়, বিকল্প সন্ধানে মরিয়া কেন্দ্র
অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন চালানো সম্ভব না। তাই বিকল্প ব্যবস্থার মরিয়া সন্ধান করছে কেন্দ্র। আর মাত্র সাতদিন পরই সমাপ্ত হবে লকডাউনের তৃতীয় দফার সময়সীমা। পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে এখন থেকে দিশাহারা কেন্দ্র রাস্তা খুঁজছে কেমন করে স্বাভাবিকতার পথে ফিরে যাওয়া সম্ভব। গুজরাত নিয়ে সবথেকে উদ্বিগ্ন কেন্দ্র গতকালই অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সের ডিরেক্টর ডঃ রণদীপ গুলেরিয়াকে বিশেষ কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি হিসেবে আমেদাবাদে পাঠিয়েছিল। আজ এইমস ডিরেক্টর শহরের হাসপাতালগুলি পরিদর্শন করে এবং মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানির সঙ্গে বৈঠকের পর জানিয়েছেন, লকডাউন অন্তহীন সময়ের জন্য চলতে পারে না। তাই দেশবাসীকে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে সমস্ত গাইডলাইন দীর্ঘদিন মেনে চলার জন্য। পাশাপাশি স্বাভাবিকতায় ফিরতে হবে। তিনি বলেছেন, সর্বাগ্রে দরকার হল, যত দ্রুত করোনা পজিটিভ ধরা পড়া। দেশজুড়ে দেখা যাচ্ছে মানুষ প্রাথমিকভাবে উপসর্গ থাকলেও হাসপাতালে বা চিকিৎসকের কাছে যেতে সংকোচ বোধ করছেন। সামাজিক একটা সংস্কার শুরু হয়েছে। আর তাই রোগ ধরা পড়তে দেরি হচ্ছে এবং তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। তাঁর কথা থেকেই স্পষ্ট কেন্দ্রীয় সরকার এখন চাইছে সতর্কতা বজায় রেখে লকডাউন থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে।
আজ কেন্দ্রীয় সরকারের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কে ভি সুব্রহ্মণ্যম বলেছেন, এখনই সব স্বাভাবিক কাজকর্ম শিল্পমহল শুরু করুক। কেন্দ্রীয় সরকার শীঘ্রই আর্থিক প্যাকেজ ও অন্যান্য সহায়তা দিতে চলেছে বলেও তিনি বলেছেন। আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতীন গাদকারি ভিডিও কনফারেন্স করেছেন সর্বভারতীয় রিটেলার সংগঠনের সঙ্গে। খুচরো বিক্রেতাদের সর্বভারতীয় সংগঠনকে গাদকারি বলেছেন, ব্যাঙ্কগুলিকে যে সহায়তা দিতে বলা হয়েছে, সেরকম সাহায্য যদি আপনারা না পান, আমাদের ব্যাঙ্কের নাম করে অভিযোগ পাঠান। আমরা খতিয়ে দেখব। যত দ্রুত সম্ভব খুচরো ব্যবসা শুরু করে দিতে চাইছি আমরা। মন্ত্রী বলেছেন, কেন্দ্র ও রাজ্য একযোগে এই সহায়তা করবে।
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, আগামীকাল থেকে আরও বেশি পরিমাণ শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন চালানো হবে। আগামীকাল ৯৮টি ট্রেন চলবে। বস্তুত সরকারি সূত্রে জানা যাচ্ছে, এভাবে প্রাথমিকভাবে শ্রমিক স্পেশাল বেশি বেশি করে চালু রাখার মাধ্যমেই আগামীদিনে প্যাসেঞ্জার ট্রেনও চালুর রূপরেখা তৈরি করা হচ্ছে রেলমন্ত্রকে। প্রাথমিক প্ল্যান হল শ্রমিক স্পেশালের মতোই নন স্টপ এবং পয়েন্ট টু পয়েন্ট ট্রেন চালানো। এদিকে লকডাউনের তৃতীয় পর্ব সমাপ্ত হওয়ার আগেই ধীরে ধীরে বিভিন্ন রাজ্য স্বাভাবিক জীবনযাপন চালু করে দিচ্ছে নিজেরাই। আজ পাঞ্জাব এবং কর্ণাটক ঘোষণা করেছে, আগামীকাল থেকে রেস্তরাঁ, হোটেল, পাব, বার ইত্যাদি ওই রাজ্যগুলিতে খুলে দেওয়া হবে। তবে আপাতত শুধুমাত্র খাবার অথবা মদ কিনে নিয়ে যাওয়া যাবে। অথবা অর্ডার করা যাবে। হোম ডেলিভারি এবং টেকঅ্যাওয়ে দুটোই চলবে। তামিলনাড়ু সরকার আজ ঘোষণা করেছে, অত্যাবশ্যক পণ্য ছাড়াও অন্য দোকানপাট খোলা রাখার সময়সীমা বাড়িয়ে দেওয়া হবে। যে দোকানপাট এখন দুপুর একটায় বন্ধ করে দিতে হচ্ছে, সেগুলি সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত খোলা রাখার অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। একইভাবে গোটা রাজ্যে আগামীকাল থেকে বেসরকারি অফিস পুরোদমে চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বস্তুত তৃতীয় দফার লকডাউন সমাপ্ত হওয়ার পর একঝাঁক ছাড় যে আসতে চলেছে সেরকমই আভাস পাওয়া যাচ্ছে সরকারের আচরণে। আর সেক্ষেত্রে রাজ্য গুলির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে।