রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

বিকল্প ব্যবস্থায় এগিয়ে রাজ্য

May 11, 2020 | 3 min read

বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস, মাসখানেকের মধ্যেই দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা শিখর ছোঁবে। দেশকে সে পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত করতে শুরু করেছে কেন্দ্র। রোগের প্রকোপ বাড়লে দেশে করোনার চিকিৎসাকেন্দ্রে টান পড়তে পারে, সে সম্ভাবনা মাথায় রেখে খালি হোটেল, লজ ব্যবহারে উদ্যোগী হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক৷ বেড সংখ্যায় টান পড়া ঠেকাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্তদের যাতে দ্রুত ছেড়ে দেওয়া যায়, সে জন্যও শনিবার নির্দেশিকা জারি করেছে আইসিএমআর। প্রশ্ন উঠছে, চিনের মতো ভারতও কি সব রাজ্যে তৈরি করতে পারত না ‘মেক শিফট’ কোভিড হাসপাতাল?

করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করতেই রাতারাতি হাজার বেডের পৃথক হাসপাতাল তৈরি করে বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়েছিল চিন। একটি নয়, করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় শুধু উহানেই তৈরি হয়েছিল ১৬টি মেক শিফট হাসপাতাল। চিনের অনুসরণে স্পেনের মাদ্রিদ কনফারেন্স সেন্টারে ইউরোপের বৃহত্তম, ৫৫০০ বেডের কোভিড হাসপাতাল তৈরি হয়। ইরান সরকারও সেখানকার একটি শপিং মলকে মোবাইল কেবিন হাসপাতালে রূপান্তর করে। লন্ডনেও এক্সেল সেন্টার ট্রেড-শো কেন্দ্রে ৪০০০ বেডের হাসপাতালের ব্যবস্থা হয়েছে। অথচ, জনসংখ্যায় এদের সবার থেকে এগিয়ে থাকা ভারতে এ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় উদ্যোগে রেলের কিছু কোচ ছাড়া মেক শিফট কোভিড হাসপাতাল তৈরি করা হয়নি! মার্চের মাঝামাঝি চিনের এক দৈনিক দাবি করেছিল, ভারতে উহান মডেলে কোভিড হাসপাতাল তৈরি করে দিতে আগ্রহী চিন। সে প্রস্তাবের সত্যতা স্বীকার করা বা চিনের সাহায্য নিয়ে দেশে পৃথক করোনা হাসপাতাল তৈরির উদ্যোগও দেখা যায়নি কেন্দ্রের তরফে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় তুলনামূলক ভালো পদক্ষেপ করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্য। ইতিমধ্যেই রাজ্যের ১৬টি সরকারি এবং ৫২টি বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৮৫৭০ বেড চিহ্নিত করা হয়েছে করোনা চিকিৎসার জন্য। জলপাইগুড়ির কোভিড হাসপাতাল হয়েছে বিশ্ব বাংলা ক্রীড়াঙ্গনে। স্টেডিয়ামের ডরমেটরিতে রাতারাতি তৈরি হয়েছে কোভিড এবং সারি রোগীদের রাখার ব্যবস্থা। ৮টা কেবিনে ভেন্টিলেটর বসিয়ে এইচডিইউও তৈরি হয়েছে। আলিপুরদুয়ারেও কম-ব্যবহৃত আয়ুষ হাসপাতাল রাতারাতি বদলে গিয়েছে কোভিড হাসপাতালে। খাস কলকাতায় তৈরি হয়ে পড়ে থাকা সিএনসিআই-এর দ্বিতীয় ভবনকে রূপান্তরিত করা হয়েছে কোভিড হাসপাতালে। এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘অনেক কোভিড হাসপাতালেই শুধু ভবনটা ছিল। করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য বেড, অক্সিজেন, ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্য সরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাকর্মী পাঠানোরও বন্দোবস্ত হয়েছে।’ করোনা মোকাবিলায় রাজ্যের এক্সপার্ট গ্রুপের সদস্য অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘মাইল্ড কেসে রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি রাখার প্রয়োজনই পড়ে না যদি তিনি ঠিকমতো আইসোলেশন মেনে চলতে পারেন। কিন্তু আমাদের মতো দেশে সেটা সম্ভব নয়। তাই, করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লে যাতে প্রত্যেকে সাধারণ স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর সুযোগটুকু পান, সে ব্যবস্থা প্রয়োজন। রাজ্যে আমরা সেই ব্যবস্থাই করছি।’

কিন্তু কেন্দ্র হোটেল, লজ নিয়ে কী ঠিক করতে চাইছে?

মৃদু-লক্ষণযুক্ত করোনা রোগীদের মধ্যে যাঁরা কোভিড সেন্টার হোটেলে থাকার ভাড়া ও অন্যান্য পরিষেবার মূল্য দিতে পারবেন, তাঁদেরই শুধু হোটেল বা লজে থেকে করোনা চিকিৎসার সুবিধা দেওয়ার কথা বলছে কেন্দ্রের নির্দেশিকা। অর্থাৎ অর্থবানের জন্যই ব্যবস্থা। সাধারণের জন্য কেন্দ্রের কী ভাবনা–অজ্ঞাতই। কোন কোন হোটেল বা লজকে বেছে নেওয়া হতে পারে, তা ঠিক করার ভার দেওয়া হচ্ছে রাজ্যগুলিকে। স্বাস্থ্য মন্ত্রক বলেছে, করোনা কেয়ার হোটেল ও লজগুলির তালিকা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে রাজ্যগুলিকেই। হোটেলগুলি কোয়ারান্টিন সেন্টার না আইসোলেশন কেন্দ্র — কী হিসেবে নথিভুক্ত হতে চায়, তা তাদেরই জানাতে হবে।

প্রসঙ্গত ইতিমধ্যেই কলকাতার বেশ কিছু হোটেল কোয়ারান্টিন সেন্টার হিসেবে নথিভুক্ত রয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরে। যার মধ্যে বেশ কিছু হোটেলে ইতিমধ্যেই কোয়ারান্টিনে থেকেছেন অনেকে। স্বাস্থ্যমন্ত্রক বলেছে, অ্যাটাচড শৌচাগার থাকা ঘরকেই এই পরিষেবার জন্য ব্যবহার করা হবে। করোনা-আক্রান্তের চিকিৎসায় যুক্ত হলে হোটেলের মধ্যেই ২৪ ঘণ্টার জন্য থাকতে হবে ডাক্তার ও নার্সকে। প্রতিদিন একবার করে হোটেলের সব আবাসিকের স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করতে হবে চিকিৎসককে৷ ডাক্তার-নার্স ও হোটেল কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে৷ হোটেল বা লজে থাকতে হবে ওয়াই-ফাই যুক্ত ইন্টারনেট পরিষেবা। যাতে আক্রান্ত আরোগ্যসেতু অ্যাপে যোগাযোগ রাখতে পারেন স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সঙ্গেও।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#West Bengal, #covid19, #hospital

আরো দেখুন