দেশ বিভাগে ফিরে যান

ঋণ বাড়িয়ে অর্থনীতি বাঁচাতে সচেষ্ট প্রধানমন্ত্রী

May 11, 2020 | 2 min read

লকডাউনের কঠিন সময়ে ‘জান এবং জাহান’ দুটোই বাঁচানোর কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই ‘জাহান’ বাঁচাতেই এক কদম এগোল মোদী সরকার। লকডাউনে মুমূর্ষু ভারতীয় অর্থনীতিকে বাঁচাতে বাজেট বরাদ্দের অতিরিক্ত ৪.২ লক্ষ কোটি টাকা ধার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। চলতি অর্থবর্ষে মোট ধারের লক্ষ্যমাত্রা ৭.৮ লক্ষ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২ লক্ষ কোটি টাকা করার সিদ্ধান্ত শুক্রবার ঘোষণা করেছে অর্থ মন্ত্রক।

শনিবার সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম টুইট করেন, ‘এতদিন আমাদের আবেদন উপেক্ষা করার পর কেন্দ্রীয় সরকার অবশেষে অতিরিক্ত ৪.২ লক্ষ কোটি টাকা ধার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আশা করি, সরকার ওই টাকা দেশের গরিব মানুষের দুর্দশা দূর করতে এবং অর্থনীতিকে সচল করতে ব্যবহার করবে।’ তবে, এই অতিরিক্ত অর্থ ধার করার ফলে রাজকোষে ঘাটতির পরিমাণও যে বাড়বে, তাও স্মরণ করিয়েছেন কংগ্রেস নেতা। বাজেটে ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা দেশের মোট জাতীয় উৎপাদনের (জিডিপি) ৩.৫ শতাংশে রাখা হয়েছে, অতিরিক্ত ধারের ফলে সেটা একধাক্কায় বেড়ে ৫.৩৮ শতাংশে পৌঁছে যাবে। এই টাকা গরিব মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানো এবং অর্থনীতিকে সচল করার কাজে ব্যবহার না হলে বেশি টাকা ধারের কোনও অর্থ থাকবে না বলে মনে করেন চিদম্বরম।

প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর এই আশঙ্কার কারণ রয়েছে। শুক্রবারই আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থা মুডিজ ইনভেস্টর সার্ভিস জানিয়েছে, চলতি অর্থবর্ষে ভারতীয় অর্থনীতির বৃদ্ধির সম্ভাবনা তারা দেখছে না। এর আগে ব্রিটিশ সংস্থা বার্কলেজ চলতি অর্থবছরে ভারতীয় অর্থনীতির কোনও বৃদ্ধি হবে না বলে জানিয়েছিল। শুক্রবার জাপানি বিশেষজ্ঞ সংস্থা নোমুরাও তাদের পূর্বাভাস পরিবর্তন করে জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে ভারতীয় অর্থনীতি ৫.২ শতাংশ সঙ্কুচিত হতে পারে! এর আগে সংস্থাটি, ০.৪ শতাংশ সঙ্কোচনের আশঙ্কার কথা জানিয়েছিল। করোনা মোকাবিলায় লকডাউনের মেয়াদ তৃতীয় দফায় বাড়ানোয় চলতি অর্থবর্ষে ভারতীয় অর্থনীতি ০.৪ শতাংশ সঙ্কুচিত হবে বলে মনে করছে বহুজাতিক সংস্থা গোল্ডম্যান স্যাক্স-ও। সেই সঙ্গে মুডিজের হুঁশিয়ারি, রাজকোষের অবস্থা আরও সঙ্গীন হলে তারা ভারতের রেটিং কমাবে। যার অর্থ, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভারতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্ক হবেন। এ দিকে, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, হিমাচলপ্রদেশ, হরিয়ানা এবং অসম-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্য শ্রম আইনে ঢালাও ছাড় দিয়ে শিল্পলগ্নি টানতে উদ্যোগী। কিন্তু, কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির অবস্থা যদি ভাঁড়ে মা ভবানী হয় এবং বাজারে ক্রেতা চাহিদা না থাকে, তবে শিল্প সংস্থাগুলি নতুন লগ্নি করবে কেন?

এ প্রসঙ্গে কেয়ার রেটিংসের মুখ্য অর্থনীতিবিদ মদন সবনবীশ বলেন, ‘বর্তমান অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে কেইন্সীয় তত্ত্ব মেনে কেন্দ্রের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কেননা, দেশের কোটি কোটি মানুষ জীবিকা ও কর্মসংস্থান হারাচ্ছেন এবং উৎপাদনের কাজকর্ম প্রায় স্তব্ধ।’ সবনবীশ মনে করেন, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর ঘোষিত ১.৭০ লক্ষ কোটি টাকার (জিডিপির ০.৭৫ শতাংশ) প্রথম দফার আর্থিক প্যাকেজের মেয়াদ আরও একটি ত্রৈমাসিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বাড়ানো হোক। লকডাউন পুরোপুরি কবে উঠবে? নিশ্চয়তা নেই। সব মহল থেকেই আরও বেশি আর্থিক প্যাকেজের দাবি জোরালো হচ্ছে। অন্য দেশগুলির সঙ্গে তুলনা টেনে সমালোচনাও হচ্ছে। ফেব্রুয়ারি এবং এ মাসে দু’দফায় পেট্রল-ডিজেলের উৎপাদন শুল্ক বাড়িয়ে কেন্দ্র ৪ লক্ষ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব ঘরে তুলতে পারবে। আরও ৪.২ লক্ষ কোটি টাকা ধার করলে অর্থ মন্ত্রকের হাতে বড়সড় আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করার মতো অর্থ থাকবে। এখন দেখার সেই আর্থিক প্যাকেজের ঘোষণা কবে আসে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#India, #Economy

আরো দেখুন