আশাকর্মীরাই রাজ্য জুড়ে আশার আলো
করোনা মেকাবিলায় সামনের সারির যোদ্ধা হিসেবে সবাই জানেন চিকিৎসক থেকে স্বাস্থ্যকর্মীদের। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে করোনা মোকবিলায় নিঃশব্দে কাজ করে চলেছেন আশাকর্মীরা। প্রত্যেক দিন নিজের এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনা সংক্রমণ সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে চলেছেন তাঁরা। কারও কোনও অসুখ থাকলে কীভাবে বাড়িতে থেকে তাঁরা নিজেদের করোনা সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতে পারবেন, তারও পরামর্শ দিচ্ছেন আশাকর্মীরাই। কারও জ্বর, সর্দি–কাশির উপসর্গ দেখতে পেলেই তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব তাঁদের কাঁধেই। কারও করোনার উপসর্গ দেখা দিলেই স্বাস্থ্য দপ্তরে যোগাযোগ করছেন তাঁরা। নিকটবর্তী কোয়ারেন্টিন সেন্টারে গিয়ে প্রাথমিকভাবে দেখভাল করছেন তাঁরাই। নিজেদের সংসার ফেলে রেখে প্রায় ১৪–১৬ ঘণ্টা নিরলস কাজ করে চলেছেন। সরকার থেকে দেওয়া মাস্ক, গ্লাভস, স্যানিটাইজার কোনও সময় হাতের কাছে না পেলে সংক্রমণ আটকাতে নিজেরাই তৈরি করে নিচ্ছেন বর্ম। কিন্তু কাজ থেমে থাকছে না। করোনার হাত থেকে এলাকাকে বাঁচাতে অটল থাকছেন নিজেদের কর্তব্যে।
করোনা সংক্রমিতদের দ্রুত খুঁজে পেতে অ্যাপ ‘সন্ধানে’র সাহায্য নিয়েছে রাজ্য সরকার। সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইলনেস (সারি) এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা আক্রান্তদের খুঁজে বের করছেন আশাকর্মীরা। ইতিমধ্যেই ৬ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছেন তাঁরা। নির্ভীক এই সৈনিকদের সম্মান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তাঁদের ১০ লক্ষ টাকা বিমার আওতায় এনেছেন তিনি। গ্রামাঞ্চলে প্রতি হাজার জনের জন্য ১ জন আশাকর্মী রয়েছেন। করোনা মোকাবিলার পাশাপাশি তাঁরা তাঁদের রোজকার রুটিনও পালন করে চলেছেন। ৩৬ রকম দায়িত্ব রয়েছে তাঁদের ওপর। বর্ষার আগে ডেঙ্গির প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। করোনা–সংক্রান্ত কাজের পাশাপাশি ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতা আর প্রতিরোধের কাজও শুরু করেছেন তাঁরা। এই সময় প্রসূতি মায়েদের যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তাঁদের করোনায় সংক্রমিত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। শিশুদের টিকাকরণের কাজও তাঁরাই করেন। গত এক মাস ধরে করোনার জেরে এই কর্মসূচি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বুধবার থেকে এই কাজ আবার শুরু করে দিয়েছেন আশাকর্মীরা। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে প্রতিষেধক খুবই প্রয়োজন। এছাড়াও শুগার, প্রেশার আছে যাঁদের, তাঁদের প্রতি নজর রাখা, সন্তানসম্ভবাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, বয়স্কদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া, বিশেষ করে চোখে ছানি পড়লে ব্যবস্থা নেওয়ার মতো কাজগুলিও সমানতালে করে চলেছেন আশাকর্মীরা।
রাজ্য সরকার তাঁদের মাসিক সাড়ে ৩ হাজার টাকা করে ভাতা দেয়। নিয়ম অনুযায়ী কেন্দ্র থেকেও ভাতা পাওয়ার কথা। কিন্তু সেই ভাতা তাঁদের কাজ অনুযায়ী পান। তাই কেন্দ্রের ভাতা নির্দিষ্ট নয়। মাস গেলে গড়ে ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা তাঁদের হাতে আসে। আশাকর্মীদের পক্ষ থেকে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন, মাসিক ১০ হাজার টাকা ভাতা হলে তাঁদের সুবিধে হয়।
তথ্যসূত্র: রিনা ভট্টাচার্য , আজকাল পত্রিকা