থমকে থাকা কাজ শুরুর অনুমতি
ঝুঁকি রয়েছে। তবু কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে থমকে থাকা প্রকল্পের কাজ শুরু করতে চলেছে রাজ্য সরকার। টানা একান্ন দিন লকডাউনের পরে সোমবার শিলিগুড়িতে সরকারি আধিকারিকদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেন রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব। সেখানে হাজির ছিলেন পূর্ত, সেচ, বন, বিদ্যুৎ, এসজেডিএ ও পর্যটন দপ্তরের আধিকারিকরা।
রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ভিন রাজ্য থেকে সবে শ্রমিকরা এ রাজ্যে ফিরতে শুরু করেছেন। এই পরিস্থতিতে কাজে নামার মূল লক্ষ্য যে কর্মসংস্থান তৈরি করা, তা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন পর্যটন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘করোনাকে নিয়েই আমাদের চলতে হবে। তাই বলে সরকারি কাজকর্ম বন্ধ থাকতে পারে না। বিশেষ করে কর্মসংস্থান তৈরি করে মানুষের রুজির ব্যবস্থা করাটা এখন ভীষণ জরুরি। তবে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং বজায় রেখেই সব কিছু করা হবে।’
এ দিন পূর্ত দপ্তরকে বকেয়া কাজে নামার পাশাপাশি গজলডোবার পর্যটন প্রকল্প ‘ভোরের আলো’ থেকে লাটাগুড়ি পর্যন্ত সড়ক তৈরির কাজ শুরু করার পরামর্শ দিয়েছেন মন্ত্রী। শিলিগুড়িতে বর্ধমান রোডের ফ্লাইওভারের কাজও শেষ করতে বলা হয়েছে। সেচ দপ্তরকে প্রাক-বর্ষা বাঁধ মেরামতির কাজে নামার পাশাপাশি পাম্প হাউস-সহ ভোরের আলোর সমস্ত অসমাপ্ত কাজ দ্রুত শেষ করতে বলা হয়েছে।
করোনাভাইরাস ঠেকাতে গত ২০ মার্চ জনতা কার্ফুর পরে ২২ মার্চ থেকে টানা লকডাউন শুরু হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় জরুরি পরিষেবা ব্যতীত অন্য সমস্ত সরকারি কাজকর্ম। পরবর্তী কালে বেশ কিছু সরকারি অফিস খোলা হলেও এই প্রথম সরকারি দপ্তরগুলোকে বকেয়া কাজে নামার নির্দেশ দেওয়া হল। রাজ্যের সমস্ত সরকারি ট্যুরিস্ট লজ মেরামতির অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে পর্যটন দপ্তরকে।
ঘটনাচক্রে এ দিনই উত্তরবঙ্গের চা-বাগানগুলিতে পঞ্চাশ শতাংশ শ্রমিককে কাজে যোগ দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে রাজ্য সরকার। লকডাউনের দ্বিতীয় পর্যায়ে মাত্র ২৫ শতাংশ শ্রমিককে কাজে যোগ দিতে বলা হয়েছিল। তা নিয়ে চা-বাগানের শ্রমিক এবং মালিকপক্ষের মধ্যে চাপা ক্ষোভও ছিল।
টি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার তরাই শাখার সচিব সুমিত ঘোষ বলেন, ‘চা-বাগানে এখন সেকেন্ড ফ্ল্যাশ চলছে। এই চা পাতার পুরোটাই দেশের বাজারে বিক্রি হয়। সেকেন্ড ফ্ল্যাশের আয়েই কার্যত সমস্ত চা-বাগান চলে।’
চা-বাগানের সঙ্গে পূর্ত দপ্তরকে রাস্তা ও সেতু তৈরির কাজে নামতে বলায় কয়েক হাজার নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে বলে মনে করছেন দপ্তরের আধিকারিকরা। রাজ্যে অবশ্য একশো দিনের কাজও চলছে। তবে এ বার একশো দিনের কাজে আরও জোর দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পর্যটন মন্ত্রী।
ট্রেন, বিমান, গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গোটা দেশেই পর্যটন শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। তার পরেও গজলডোবায় ভোরের আলোর অসমাপ্ত কাজ শুরু করার উপরে জোর দেওয়ার কারণও ওই কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।
পর্যটন মন্ত্রী বলেন, ‘যে এলাকায় ভোরের আলো তৈরি হয়েছে সেখানে কর্মসংস্থার সৃষ্টি করা দরকার। সেই কারণেই ভোরের আলোর অসমাপ্ত কাজ শেষ করার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। ভোরের আলোয় যাঁরা হোটেল, স্পা ইত্যাদি তৈরি করতে চান তাঁদের নিয়েও কয়েক দিনের মধ্যেই আলাদা করে বৈঠক করা হবে।’ এসজেডিএও গ্রামীণ এলাকায় কাজে নেমেছে বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন।