রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

পরিযায়ীদের নিয়ে সংঘাত চরমে

May 12, 2020 | 3 min read

পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরা ও ফেরানো নিয়ে রাজ্য সরকার ও বিরোধীদের সংঘাত নতুন মোড় নিয়েছে।

পরিযায়ী শ্রমিকদের অনেক বেশি সংখ্যায়, অনেক বেশি সংখ্যক ট্রেনে করে ফেরানোর ব্যবস্থা রাজ্য সরকারকে করতে হবে বলে বিরোধীরা দাবি তুলেছেন। আবার একই সঙ্গে বিরোধীরা রাজ্য সরকারকে সাবধানও করছেন এই বলে যে, বাইরে থেকে ফেরা শ্রমিকরা ছড়িয়ে পড়লে করোনা সংক্রমণ আরও বেশি হবে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের দাবি, ফিরে আসা শ্রমিকদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা ও কোয়ারান্টিনের ব্যবস্থা রাজ্য সরকারকেই করতে হবে। স্বভাবতই রাজ্য সরকার তথা শাসকদলের পক্ষ থেকে কড়া জবাব এসেছে। রাজ্যের মন্ত্রী ও তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সাফ কথা, ‘বিরোধীরা কুৎসা করেই খালাস। রাজ্য সরকার ভেবেচিন্তে ও সকলের কথা বিবেচনা করেই পদক্ষেপ করছে।’ এই অবস্থায় সিপিএমের আইনজীবী-সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য কেন্দ্র ও রাজ্য দু’পক্ষকে দুষে দুই সরকারের বিরুদ্ধেই মামলা করার পক্ষপাতী। তার উত্তরে পার্থ বলছেন, ‘শকুনেরা মৃতদেহ খুঁজে বেড়ায়। আর বিকাশবাবুর দল শুধু মামলার বিষয় খুঁজে বেড়ায়।’

তৃণমূলের বক্তব্য, পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য রাজ্য সরকার ত্রাণের সুবন্দোবস্ত করতে পেরেছে। যে কারণে তিন দফার লকডাউন শেষ হতে চললেও পশ্চিমবঙ্গের কোথাও ভিন রাজ্যের শ্রমিকদের কোনও বিক্ষোভ হয়নি। যা কখনও মহারাষ্ট্র, কখনও কর্নাটকের মতো রাজ্যে দফায় দফায় হয়েছে। বিরোধীরা এমনও দাবি তুলেছেন যে, ভিন রাজ্য থেকে ফিরে আসা শ্রমিকদের জন্য উপযুক্ত কোয়ারান্টিনের ব্যবস্থা রাজ্য সরকার করতে পারেনি। তৃণমূলের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকারই তাদের নির্দেশিকায় বলেছিল, ভিন রাজ্য থেকে যাঁরা ফিরছেন, তাঁদের যথেষ্ট উপসর্গ না-থাকলে হোম কোয়ারান্টিনে থাকলেও চলবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সে সোমবার এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর কথার সুর ধরেই পার্থ এ দিন বিরোধীদের সমালোচনার জবাব দিয়েছেন। তৃণমূলের বক্তব্য, পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরানো ও এ ক্ষেত্রে করোনা সংক্রমণ ঠেকানোর ব্যাপারে বিরোধীদের গঠনমূলক সমালোচনা করার কিছু নেই, তারা সমালোচনা করতে হয় বলেই রাজ্য সরকারের সমালোচনা করছে।

ভিন রাজ্য থেকে ফিরে আসা কিছু মানুষের শরীরে পরে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ায় পশ্চিমবঙ্গে ভাইরাস আরও ছড়ানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই রাজ্য সরকারের সমালোচনায় নেমেছে বিরোধীরা। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘বিরোধীরা তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কুৎসা করেই খালাস! ওদের তো দায় নেই। শাসকদলের দায় অনেক বেশি। এর পরেও যাঁরা মমতার সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, তাঁরা আসলে বঙ্গ-বিদ্বেষী। তাঁদের সেনাপতি দিলীপ ঘোষ।’

নির্দেশিকা মেনে স্বাস্থ্য পরীক্ষা সত্ত্বেও রাজ্যে ফেরা কিছু লোকের শরীরে পরে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়েছে। কোথাও কোথাও গ্রামবাসীদের বক্তব্য, হোম কোয়ারান্টিনে থাকার কথা বলা হলেও ঘরে ফেরা শ্রমিকদের একাংশ তা শুনছেন না। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ সোমবার দাবি করেন, ‘আমার কাছে খবর আছে, বিভিন্ন জেলার সীমানা দিয়ে পায়ে হেঁটে অনেকেই ঢুকছেন। তাঁরা গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে পড়লে রাজ্যে সংক্রমণ আরও বাড়বে। রাজ্যকেই তাদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা ও কোয়ারান্টিনের ব্যবস্থা করতে হবে।’ তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহাও। লোকসভার কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী এ দিন অভিযোগ করেন, ‘তৃণমূল সুকৌশলে প্রচার চালাচ্ছে, পরিযায়ীদের ফেরালে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। যাঁরা ফিরেছেন, তাঁদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা তো রাজ্য সরকারই করেছিল!’

তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘করোনা এই রাজ্যে পায়ে হেঁটে ঢোকেনি। করোনা ঢুকেছে বিমানে। কেন্দ্রীয় সরকার আন্তর্জাতিক ও অন্তর্দেশীয় বিমান চলাচল বন্ধ করেছে অনেক দেরিতে।’ অভিষেকের কথায়, ‘কেন্দ্রীয় সরকার যখন প্রথম পর্বের লকডাউন ঘোষণা করেছিল, তখন দেশের কোনও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেনি। যাঁরা বাড়ি ফিরতে চান, সেই সব সাধারণ মানুষের জন্য কেন আগে থেকে পরিকল্পনা করা হয়নি? কেনই বা আগে থেকে ট্রেনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়নি?’

সিপিএম অবশ্য তৃণমূল ও বিজেপি, দু’পক্ষের বিরুদ্ধেই সরব। সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এদিন বলেন, ‘যে ভাবে পরিযায়ী শ্রমিকরা মাইলের পর মাইল হাঁটতে গিয়ে হতাহত হচ্ছেন, তার জন্য কেন্দ্র-রাজ্য দুই সরকারই সমান অপরাধী। উভয়ের বিরুদ্ধেই মামলা করা উচিত।’

বিকাশের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর দলকে এ দিন কটাক্ষ করেন পার্থ। তা ছাড়া, তৃণমূলের মহাসচিব এ দিন বলেন, ‘অন্য রাজ্য থেকে বাংলায় ফেরার তাগিদ যতটা, এখান থেকে অন্য রাজ্যে ফেরার আগ্রহ ততটা নয়। এটাই প্রমাণ করছে যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বাংলায় আটকে থাকা ভিন রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ত্রাণের সুবন্দোবস্ত করতে পেরেছে।’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#West Bengal, #Migrant Labourers

আরো দেখুন