পরিযায়ী শ্রমিকরা ফিরতেই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা
পরিযায়ী শ্রমিকরা ফেরার পর গ্রীন জোন বলে চিহ্নিত এলাকাগুলিতে সংক্রমণ শুরু হওয়ায় নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। মালদহ, উত্তর দিনাজপুর এতদিন গ্রীন জোন বলে চিহ্নিত ছিল। ওই দুই জেলার পরিযায়ী শ্রমিকরা বাড়ি ফেরার পর দেখা যাচ্ছে, তাঁদের মধ্যে ১৩ জনের করোনা পজিটিভ। ফলে আতঙ্ক বেড়েছে। গ্রীন জোন পরিবর্তিত হয়েছে অরেঞ্জ এলাকায়। আবার অরেঞ্জ জোন হিসেবে চিহ্নিত মুর্শিদাবাদেও বাড়ি ফেরা তিন পরিযায়ী শ্রমিক করোনা আক্রান্ত হওয়ায়, সেখানেও পরিস্থিতি বিগড়েছে।
এই পরিস্থিতিতে পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফেরানোর আগে এবং আসার পরে সঠিকভাবে তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার দাবী উঠেছে সংশ্লিষ্ট জেলায়। বিশেষ করে তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, গুজরাত এবং পাঞ্জাব থেকে যে সব পরিযায়ী শ্রমিক রাজ্যে ফিরবেন, স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর তাঁদের প্রত্যেককে যাতে বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়, তা নিশ্চিত করার দাবীতে বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের কাছে আর্জি জমা পড়ছে। প্রসঙ্গত, দু’-একদিনের মধ্যেই পাঞ্জাব, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলেঙ্গানা থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে রাজ্যে ফিরবে বিশেষ ট্রেন।
তবে একদিকে পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরানোর দাবী, অন্যদিকে তাঁদের সংক্রমণের তথ্য সামনে আসায় এক জটিল আবর্ত তৈরী হয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিকরা সংক্রমণের শিকার, বিভিন্ন রাজ্য থেকে এই তথ্য সামনে আসার পর আরও সতর্ক হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। ট্রেনে ওঠার আগে বাধ্যতামূলকভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে পরিযায়ী শ্রমিকদের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত মাপকাঠি হেরফের হলে, ফেরানো হবে না তাঁদের, এমন বিজ্ঞপ্তি এদিনই জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
এদিকে, করোনা সংক্রমণ পর্বে এক কোটি জনসংখ্যার নিরিখে কোন রাজ্যের কী অবস্থান, সেই তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। দেখা যাচ্ছে, তালিকার শীর্ষে রয়েছে দিল্লী, ৩ হাজার ৬৪৪ জন। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মহারাষ্ট্র, ১ হাজার ৮৪৮ জন। ১২ রাজ্যের তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের স্থান একেবারে শেষে। প্রতি কোটিতে এ রাজ্যে সংক্রমণের সংখ্যা মাত্র ১৯৪। তবে ঘরে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকরা আক্রান্ত হলে, তালিকার হেরফের হতে পারে বলে মনে করছে ওয়াকিবহল মহল। প্রসঙ্গত, মালদহ, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদু়য়ারের মতো গ্রীন জোনে ট্রেন আর বাসে চেপে বাড়ি ফিরেছেন প্রায় এক লাখ পরিযায়ী শ্রমিক।
গত ৬ই মে রাজস্থান থেকে বাড়ি ফেরেন মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের কয়েকশো শ্রমিক। কোনও উপসর্গই ছিল না তাঁদের। পরে অসুস্থ বোধ করায় রশিদাবাদ ও মহেন্দ্রপুর পঞ্চায়েত এলাকার দশজনের লালারস পরীক্ষা করা হয়। সবার রিপোর্টই পজিটিভ। তাঁরা এখন পুরনো মালদহের নারায়ণপুর কোভিড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আক্রান্তদের সংস্পর্শে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। সিল করা হয়েছে গ্রামগুলি। সূত্রের খবর, একইভাবে দিল্লী থেকে ফেরা মুর্শিদাবাদের সুতির মহেন্দ্রপুরের তিন পরিযায়ী শ্রমিক এখন করোনা আক্রান্ত। এছাড়াও রায়গঞ্জের দু’জন এবং হেমতাবাদের একজন পরিযায়ী শ্রমিক করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রায়গঞ্জের শেরপুর পঞ্চায়েতের ধুরাইল গ্রামে বাড়ি ফিরে এক পরিযায়ী শ্রমিক প্রতিবেশীদের মধ্যে মিষ্টি বিলি করেন। তিনি এখন করোনা আক্রান্ত। যাঁদের তিনি মিষ্টি বিলিয়েছেন, এমন ৩০ জনকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। গ্রীন জোন থেকে অরেঞ্জ জোনে পরিবর্তিত হয়েছে ঝাড়গ্রামও। স্বাস্থ্য দপ্তরের ওই সূত্রটি জানিয়েছে, আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটার রাইছেঙ্গা এলাকায় গোপনে বাড়ি ফিরে আসা এক যুবককে হাসপাতালে ভর্তি করার দাবীতে তুমুল বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়রা। বিক্ষোভের জেরে ওই পরিবারের সবার স্বাস্থ্য পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।
আবার কয়েকটি জায়গায় সংক্রমণ নেই বলে স্বাস্থ্য দপ্তর শংসাপত্র দিলেও নতুন করে কাউকে বাড়ি ফিরতে দিতে চাইছেন না স্থানীয়রা। এই সমস্ত ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি উৎকণ্ঠা বাড়ছে নবান্নেরও।