স্বাস্থ্য বিভাগে ফিরে যান

গবেষণায় ক্লিনচিট বাদুড় চামচিকেদের

May 13, 2020 | 2 min read

ওরা কোভিড-১৯-এর ধারক। ওদের শরীর থেকেই ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। বাদুড়ের উপর আনা এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করছেন ছয় দেশের ৬৪ বিজ্ঞানী। ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বিভিন্ন জায়গায় যে ভাবে সম্পূর্ণ অযথা ভাবে বাদুড় নিধন শুরু হয়েছে, তার ফলে আগামী দিনে পরিবেশের ভয়াবহ ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বাদুড়-বিশেষজ্ঞের দল।

রোমানিয়ার পাহাড়চুড়োর ভয়াল প্রাসাদটার নাম ভুলেও মুখে আনতেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। ওই প্রাসাদেই বাস ছিল রক্তপিপাসু পিশাচ কাউন্ট ড্রাকুলার। কখনও তিনি রূপ নিতেন বাদুড়ের। ১৮৯৭ সালে ব্রাম স্টোকারের লেখা ‘ড্রাকুলা’ই বাদুড়কুলকে চিরকালের জন্য ভিলেনের আসনে বসিয়ে দিয়েছে।

১২৩ বছর পার করে ফের গোটা বিশ্বে নতুন করে ভিলেন হয়েছে বাদুড়ের দল। গত চার মাসের মধ্যে বিশ্বে দু’লক্ষেরও বেশী মানুষের প্রাণহানির দায় পড়েছে নিরীহ ওই উড়ন্ত রাতচরাদের উপর। কিন্তু যে অপরাধের জন্য তাদের দায়ী করা হচ্ছে, তার সত্যতা কতটা? উত্তর পেতে গবেষণা করছিলেন ভারত-সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ছ’টি দেশের ৬৪ জন বিজ্ঞানী। সেই গবেষণায় করোনার ধারক-বাহক হিসাবে বাদুড় বা চামচিকেদের দায়ী করার মতো প্রমাণ মেলেনি বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

৬৪ গবেষকের অন্যতম ছিলেন বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সেস-এর কস্তুরী সাহা। তিনি বলছেন, ‘যে ধরনের নভেল করোনাভাইরাস থেকে কোভিড-১৯ হচ্ছে, সেই ভাইরাসের প্রকৃত উৎস এখনও জানা যায়নি। করোনাভাইরাসের যে নিকটতম প্রজাতি বাদুড়ের দেহে পাওয়া যায়, সেটা একেবারেই আলাদা। ফুসফুসে করোনাভাইরাসের আটকে থাকার জন্য যে রিসেপ্টর প্রয়োজন, বাদুড়ের শরীরে সেই রিসেপ্টর পাওয়াই যায় না।’

গবেষণায় ক্লিনচিট বাদুড় চামচিকেদের

বিজ্ঞানীদের যে দল কোভিড-১৯ ভাইরাসটি আবিষ্কার করেন, সেই দলেরই অন্যতম সদস্য অরিঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় কানাডার ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক। করোনাভাইরাসের সংক্রমণে বাদুড়ের ভূমিকা প্রসঙ্গে অরিঞ্জয় বলছেন, ‘বন্যপ্রাণীদের এলাকায় মানুষের অনধিকার প্রবেশের ফলে নতুন ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে। কিন্তু, তার জন্য কোনও প্রমাণ ছাড়াই বাদুড়কে দায়ী করা হবে কেন?’ চিনের উহান প্রদেশের যে মাংসের বাজার থেকে এই সংক্রমণ শুরু বলে মনে করা হচ্ছে, সেখানে বহু রকম মাংসই বিক্রি হচ্ছিল বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

ভাইরাসের সংক্রমণের পর থেকে যে ভাবে বিভিন্ন জায়গায় বাদুড় ও চামচিকে মারা হচ্ছে এবং তাদের স্বাভাবিক বাসস্থান নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে তাতে চিন্তা প্রকাশ করেছেন ভারতের বাদুড় সংরক্ষণ বিভাগের রাজেশ পুট্টাস্বামাইয়া। তিনি বলছেন, ‘বাদুড় ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ খেয়ে আমাদের কৃষিতে প্রভূত উপকার করে। এখানেই শেষ নয়, বিভিন্ন ধরনের গাছের পরাগমিলনে বাদুড় ও চামচিকের প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে। সুতরাং ওদের মারলে আমরা সব দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হব।’ 

পুট্টাস্বামাইয়া বলছেন, ‘সম্প্রতি যাচাই না করে প্রকাশ করা বিভিন্ন মতামতের জন্য আতঙ্কের বশে গাছ কেটে, ধোঁয়া দিয়ে ওদের জীবন বিপন্ন করা হচ্ছে। ভারতে ১১০ প্রজাতির বাদুড় ও চামচিকেই অরক্ষিত। এদের সুরক্ষা দেওয়া একান্ত জরুরি।’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Coronavirus, #bat, #ticks

আরো দেখুন