বিশেষ সম্প্রদায়কে টার্গেট করেই ছড়ানো হচ্ছে ফেক নিউজ
হাসপাতালে নার্সদের গায়ে থুথু ছেটাচ্ছেন একটি সম্প্রদায়ের মানুষ। বলিউড তারকা আমির খান আটার প্যাকেটের মধ্যে ১৫ হাজার করে টাকা বিলিয়েছে। দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সময় এমন বহু ‘ফেক নিউজ’ ঘুরে বেড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
এই ‘ফেক নিউজ’-এর এমনই ক্ষমতা যে, তার ফাঁদে পা দিয়েছে অনেক নামিদামী সংবাদমাধ্যমও। তবে বহু সংবাদ মাধ্যমই প্রকৃত ঘটনা যাচাই করে ধরিয়ে দিয়েছে, কোনটা সঠিক খবর, আর কোনটা ফেক বা ভুয়ো।
শুধু ফ্যাক্ট চেক করা নয়, এই সব ফেক নিউজের চরিত্র বা প্রকৃতি বুঝতে বিশ্লেষণও করেছে একটি জাতীয় সংবাদমাধ্যম। রিপোর্টে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাস পর্বে তাঁরা মোট ১৭৮টি ভুয়ো, ভুল, অসত্য বা বিভ্রান্তিকর ‘খবর’-এর সত্যতা যাচাই করেছে। সেগুলির মধ্যে আবার কোনটি কোন ফর্ম্যাটে, কোন মাধ্যমে বা কোন উদ্দেশ্যে ছড়ানো হয়েছে, তাও বিশ্লেষণ করেছে ঐ সংবাদমাধ্যম।
বিশ্লেষণে উঠে এসেছে যে, এই ফেক নিউজগুলির মধ্যে একটা বড় অংশেই টার্গেট করা হয়েছে মুসলিম সম্প্রদায়কে। সেই বিশ্লেষণেই উঠে এসেছে সোশ্যাল মিডিয়ায় যে সব ভুয়ো, ভিত্তিহীন, মিথ্য বা অসত্য, ভুল অথবা বিভ্রান্তিকর খবর ছড়িয়েছে, সেগুলি ৩৫শতাংশের কাছাকাছি এসেছে ভিডিওর মাধ্যমে। টেক্সট ফর্ম্যাটে এসেছে তার প্রায় কাছাকাছি ২৯শতাংশের মতো। অডিয়োতে ছড়িয়েছে ২শতাংশের কিছু বেশী। আর প্রচলিত সংবাদ মাধ্যমের খবর হিসেবে ছড়িয়েছে প্রায় ৪শতাংশ ফেক নিউজ।
ভারতে প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল জানুয়ারিতে, কেরলে। সেখানে চীন ফেরত তিন জনের দেহে প্রথম করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। তারপর থেকে সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করেছে। মার্চের শেষ দিকে আন্তর্জাতিক উড়ান বন্ধ হয়েছে, দেশব্যাপী লকডাউন হয়েছে। এ ছাড়াও জনতা কার্ফু, তালি-থালি বাজানো, বারান্দায় মোমবাতি-প্রদীপ জ্বালানোর মতো ঘটনাও ঘটেছে দেশে। আর এই সময় থেকেই ফেক নিউজের বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে ভারত। কিন্তু উদ্বেগ বাড়ানোর মতো একটা প্রবণতা লক্ষ করা গিয়েছে এই সময় অর্থাৎ এপ্রিল মাসে। এই সময় উঠে এসেছে সাম্প্রদায়িক ‘ফেক নিউজ’।
এইসময় বহু ফেক নিউজে নিশানা করা হয়েছে মুসলিম সম্প্রদায়কে। দিল্লীর তবলিঘি জামাতের ঘটনা সামনে আসার পর এই ধরনের ফেক নিউজ ছড়িয়েছে ভুরি ভুরি। আবার কয়েক বছর আগেকার একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবী করা হয়েছিল, মুসলিম সম্প্রদায়ের কয়েক জন মানুষ থালায় থুথু লাগিয়ে করোনাভাইরাস ছড়াচ্ছেন।
কিন্তু পরে দেখা যায়, আসলে ভাল উদ্দেশ্যে তৈরী হয়েছিল ভিডিওটি। থালা চেটে পরিষ্কার করে খেয়ে খাবার নষ্ট না করার বার্তা দিতে চেয়েছিলেন তাঁরা। বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, এই ধরনের ফেক নিউজ ছড়ানো হয়েছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই।