লকডাউনে ৮০ হাজার মানুষকে পরিষেবা দিয়ে নজির এসবিএসটিসির
লকডাউনে পরিযায়ী শ্রমিক, স্বাস্থ্যকর্মী মিলিয়ে প্রায় ৮০ হাজার মানুষকে পরিষেবা দিয়ে নজির গড়ল দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা(এসবিএসটিসি)। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভিন রাজ্যে গিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের পৌঁছে দিয়ে মানবতার নিদর্শন তুলে ধরেছেন সংস্থার কর্মীরা। ২১ মার্চ থেকে বুধবার পর্যন্ত ২ হাজার ৬৬৬টি বাস রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে। খড়গপুর হোক বা ডানকুনি, যাত্রীদের কাছ থেকে এক টাকাও ভাড়া না নিয়ে এই পরিষেবা দেওয়া হয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের আনা নিয়ে রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার এই উল্লেখযোগ্য পরিসংখ্যান রাজ্যের মুখ যথেষ্ট উজ্জ্বল করেছে বলেই অনেকে মনে করছেন।
পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পরিবহণদপ্তর নীরবে কাজ করে চলেছে। কোনও শ্রমিকের কাছে এক টাকাও নেওয়া হয়নি। অর্থদপ্তর টাকা দিচ্ছে। আমরা কাজ করি, শুধু প্রচার করি না।
মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকেই করোনা ভাইরাস রোধে লকডাউন শুরু হয়েছিল দেশ তথা রাজ্যে। তারপরই থমকে যায় সমস্ত গণ পরিবহণ ব্যবস্থা। ট্রেন, বিমান থেকে বেসরকারি বাস পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এই পরিস্থিতিতেও রাস্তায় থেকে অতি প্রয়োজনীয় পরিষেবাকে সচল রেখেছে দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা। প্রথম লকডাউনে রাজ্য যখন কার্যত সিল, সেই সময়েও স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসকদের নিয়ে এসবিএসটিসির বাস এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ছুটে বেড়িয়েছে। আজও প্রতিদিন গড়ে ২৬টি বাস এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। এরপর পরিযায়ী শ্রমিকদের নিজের বাড়িতে ফেরাতেও মুশকিল আসান হয়ে দাঁড়িয়েছে সংস্থার এই নীল সাদা বাসগুলিই। বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমানা থেকে রাজ্যের নানা জেলায় পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে যাওয়াই হোক বা ভিন রাজ্য থেকে স্টেশনে এসে থামা শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনের পরিযায়ী শ্রমিকদের নিজ নিজ জেলায় পৌঁছে দেওয়া, সবটাই করেছেন এই সংস্থার চালকরা। গ্রিন জোনে বাস চালানোও শুরু করেছে এসবিএসটিসি। বর্তমানে তারা গড়ে ১২টি বাস চালাচ্ছে। ২১ মার্চ থেকে ১৩ মে পর্যন্ত মোট ৭৮ হাজার ২৬৮জনকে বিনা ভাড়ায় নিজ গন্তব্যে পাঠাতে সক্ষম হয়েছে এসবিএসটিসি। যার মধ্যে ৯৫ শতাংশের বেশি পরিযায়ী শ্রমিক। এদিনও খড়গপুরে আসা শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন নামা পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে আসার জন্য সংস্থার ৬০টি বাসকে পাঠানো হয়।
এসবিএসটিসির এমডি কিরণ কুমার গোদালা বলেন, রাজ্য সরকারের নির্দেশে আমরা প্রয়োজনীয় বাস ও চালক দিয়ে সাহায্য করছি।
প্রসঙ্গত, দেশজুড়ে চলা এই মহামারীর প্রকোপেও রাজনৈতিক ময়দান সরগরম পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে। এই অবস্থায় শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনের ভাড়া নিয়ে যথেষ্ট রাজনৈতিক জল ঘোলা হয়েছিল। এমনকী পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরাতে রাজ্য সরকার আন্তরিক নয় বলে চিঠি দিয়ে বিতর্ক বাড়িয়েছিলেন খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেই পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকারের অধীনে থাকা পরিবহণ সংস্থার এই পরিসংখ্যান রাজ্য সরকারের আন্তরিকতাকেই তুলে ধরেছে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা। বিশেষ করে এই সংস্থা ভিন রাজ্যে গিয়েও শ্রমিকদের পৌঁছেছে, এমনকী হেনস্তার শিকার হয়েও চালকরা নিজ কর্তব্যে অনড় থেকেছেন। সংস্থার চেয়ারম্যান তমোনাশ ঘোষ বলেন, আমরা শুধু রাজ্যে নয়, ভিন রাজ্যেরও ৫০০জনের অধিক শ্রমিককে সে রাজ্যে গিয়ে তাঁদের বাড়ি পৌঁছে দিয়েছি।