ঘরে ফিরে আসার প্রভাব কী, বুঝতে নবান্নর সমীক্ষা
অন্যান্য রাজ্য থেকে পশ্চিমবঙ্গে ফিরছেন বহু মানুষ। সামগ্রিক ভাবে রাজ্যের উপর এর প্রভাব কী, তার আঁচ পেতে কার্যকরী বিশেষ সমীক্ষা করাবে রাজ্য সরকার। বুধবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে এই কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘বাইরে থেকে প্রচুর মানুষ আসছেন। এর প্রভাব তথা আগাম গতিপ্রকৃতি জানার জন্য আমরা একটি মডেল তৈরি করেছি। সেই অনুযায়ী একটি সেন্টিনেল সার্ভে (প্রহরী সমীক্ষা) বা কার্যকরী বিশেষ সমীক্ষা করাবে রাজ্য সরকার। দেশের মধ্যে আমরাই প্রথম কাজটি করছি।’
মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদদের একাংশ। তাঁদের মতে, এত সংখ্যক মানুষের ফিরে আসার জের কী হতে পারে, তার পূর্বাভাস পেতে এই ধরনের সমীক্ষা করা খুবই জরুরি।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘যত মানুষ আসবেন, তত মেলামেশা বাড়বে। ইতিমধ্যে চারটি গ্রিন জোন অরেঞ্জ জোন হয়ে গিয়েছে। মুম্বইয়ে প্রচুর মানুষ আক্রান্ত। সেখান থেকেও লোক আসছেন। গুজরাট, দিল্লি, বেঙ্গালুরু থেকেও মানুষ আসছেন। সাধারণ ভাবে এর জেরে কী পরিস্থিতি হতে পারে, তা আগাম বোঝার জন্য সমীক্ষা করা দরকার। বিশ্বব্যাপী মহামারির মোকাবিলায় এটা জরুরি পদ্ধতি।’
মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত অর্থনীতিবিদদের অনেকেই। ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক অভিরূপ সরকার বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী যে সমীক্ষার কথা বলেছেন, তা চলতি পরিস্থিতিতে আবশ্যক। কারণ, যে সব মানুষ আসছেন, তাঁরা কত সংখ্যায় কোথা থেকে আসছেন, তা জানা জরুরি। বিশেষ করে পরিযায়ী শ্রমিকরা কখন আসাযাওয়া করছেন, তার খতিয়ানও দরকার। এই ধরনের কাজ আমাদের দেশে খুব একটা হয়নি।’ অভিরূপের বক্তব্য, ‘শুধু এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে নয়, রুজির সন্ধানে মানুষ রাজ্যের মধ্যে এক জেলা থেকে অন্য জেলাতেও যান। সেই সংখ্যাটাও কম নয়। ফলে আগামী দিনে কী প্রভাব পড়ছে, তা বুঝতে সমীক্ষা দরকার।’
সিস্টার নিবেদিতা গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান চন্দ্রকান্ত সাহার কথায়, ‘আমরা এতদিন যা দেখতে অভ্যস্ত ছিলাম, তার বিপরীত ছবিটা দেখছি। সাধারণত মানুষ গ্রাম থেকে শহরে যেতেন। এখন শহর থেকে গ্রামে ফিরছেন। অর্থাৎ, রিভার্স মাইগ্রেশন।’ চন্দ্রকান্ত মনে করেন, ‘এই অবস্থার ফলে আমাদের রাজ্যেও কৃষি অর্থনীতির উপর চাপ বাড়তে বাধ্য। আবার এই মানুষগুলোর মধ্যে একটা বড় অংশই অদক্ষ শ্রমিক। যাঁরা ঘরে ফিরে কী কাজ পাবেন, সেটা কিছুটা অনিশ্চিত। আবার ভিন রাজ্য থেকে এত মানুষের আসার জেরে স্বাস্থ্যসূচকেও নানা ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। ফলে, তার মোকাবিলায় দিশা জোগাবে সমীক্ষা।’
তবে সমীক্ষার কথা ঘোষণা করার আগেই মুখ্যমন্ত্রী যে একশো দিনের কাজের উপর জোর দিয়েছেন, তা ঘরে ফেরা এই মানুষদের আর্থিক পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে অনুঘটক হিসাবে কাজ করতে পারে বলে অর্থনীতিবিদদের ধারণা। এই ব্যাপারে চন্দ্রকান্তর অভিমত, আপৎকালীন এই পরিস্থিতির জন্য অর্থনীতি পুরোপুরি মুখ থুবড়ে পড়বে, এতটা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণের কোনও অর্থ হয় না। লকডাউন কাটলে আবার কয়েক মাসের মধ্যে অর্থনৈতিক পুনর্জীবনের লক্ষণ দেখা দেবে। তার আগে ঘরে ফেরা মানুষদের যেন দুবেলা অন্ন সংস্থান হয়, সেটা প্রাথমিক ভাবে নিশ্চিত করা দরকার। চন্দ্রকান্ত বলেন, ‘সমীক্ষা করে ওই মানুষের হালহকিকত বুঝে একশো দিনের কাজে তাঁদের কর্মসংস্থান করলে সমস্যার অনেক সমাধান হতে পারে।’