‘বাইটে’ শুধুই দিলীপ কেন, ঠান্ডা যুদ্ধ পদ্মে
যাবতীয় রাজনৈতিক কার্যকলাপ কার্যত বন্ধ। রাস্তায় বেরিয়ে জনসমর্থন ঝালিয়ে নেওয়ারও উপায় নেই। তাই করোনা-আবহে নিজেদের প্রাসঙ্গিক রাখতে সংবাদমাধ্যমের মুখ চেয়েই থাকতে হচ্ছে রাজ্য বিজেপির নেতাদের। আর সেটাকে কেন্দ্র করেই ‘ঠান্ডা-যুদ্ধে’র আঁচ পাওয়া যাচ্ছে দলের অন্দরমহলে।
দিলীপ ঘোষ রাজ্য সভাপতি। পদমর্যাদায় বাকিদের থেকে এগিয়ে। নিয়ম করে দিনে দু’বার নিজের বাড়ি থেকে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হচ্ছেন ভিডিয়ো কনফারেন্সে। যে কোনও বিষয়ে কড়া সমালোচনা করছেন রাজ্য সরকারের। ঘরে বসে রাজ্য বিজেপির অন্য নেতাদের তা দেখে যেতে হচ্ছে। দলের মধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, বাকিরা কি ফ্যালনা! করোনা-প্রকোপের আগে মুকুল রায়, রাহুল সিন্হার মতো নেতারাও ছুটে বেরিয়েছেন জেলায় জেলায়। সংবাদমাধ্যমে ‘বাইট’ দিয়েছেন ঘণ্টায় ঘণ্টায়। তা হলে এখন কেন শুধুই দিলীপ?
দলের এক রাজ্য সম্পাদকের কথায়, ‘করোনা আজ বাদে কাল চলে যাবে। তার পরেই তো ভোটের লড়াই। দিলীপ ঘোষ আমাদের নেতা। কিন্তু তিনি তো একা যুদ্ধ করবেন না। মুকুলদা, রাহুলদার মতো নেতাদের এই করোনা-আবহে ব্রাত্য রাখলে চলবে কী ভাবে!’
অনুগামীদের পরামর্শে তেড়েফুঁড়ে নেমেছেন রাহুল। সাংবাদিক বৈঠক সে ভাবে না করলেও সংবাদমাধ্যমে তিনি নিয়মিত পৌঁছে দিচ্ছেন ভিডিয়ো-বার্তা। রেশন দুর্নীতির অভিযোগ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক প্যাকেজ—সব ইস্যুতেই সরব। কোনও বিষয়ে দিলীপ সাংবাদিকদের কাছে হয়তো নিজের মতামত রাখছেন। ঠিক সেই সময়েই একই বিষয়ে রাহুলও ব্যস্ত নিজের মতামত মোবাইল ক্যামেরায় রেকর্ড করতে। এ বার তিনিও শনিবার থেকে নিয়ম করে দুপুর বারোটায় ভিডিয়ো কনফারেন্সে সাংবাদিক বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রাহুলের কথায়, ‘শনিবার থেকে প্রতিদিন দুপুর বারোটায় সাংবাদিক বৈঠক করব। দিলীপদা তো করছেনই। আমরা সবাই এক সঙ্গে লড়াই চালাচ্ছি তৃণমূলের বিরুদ্ধে।’
করোনা-আবহে শুরুর দিকে এক রকম নিশ্চুপই ছিলেন আর এক শীর্ষ বিজেপি নেতা মুকুল রায়। সল্টলেকের ভাড়াবাড়িতে সারাদিন কাটিয়ে রাতে ফিরছিলেন কাঁচরাপাড়ায় নিজের বাড়িতে। মাঝখানে দু’একদিন রাজভবনে যাওয়া ছাড়া সে ভাবে মুকুলকে দেখাই যায়নি রাজনীতির ময়দানে। কিন্তু আচমকা তিনিও বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছিলেন। তবে তাঁর বক্তব্যে নতুন বিষয় তেমন ছিল না। রাজ্য বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘ওই দিন মুকুলদার সাংবাদিক বৈঠক যে নিতান্তই প্রসঙ্গিক হয়ে ওঠার জন্য, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। করোনা পরিস্থিতিতে রাজ্যের মানুষ বহুদিন পর ওঁকে অন্তত তো দেখতে পেলেন।’ দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কথায়, ‘সবাইকেই প্রেস মিট করতে বলা হয়েছে। সংবাদমাধ্যম থেকে ফোন করে আমার কাছে বাইট চাওয়া হয় বার বার। সারাদিন তো আর এ সবের জন্য সময় দেওয়া যায় না। তাই দিনে দু’বার সময় নির্দিষ্ট করেছি। বাকিরাও সাংবাদিকদের মুখোমুখি হচ্ছেন। ভালোই।’ সেই সঙ্গেই অবশ্য তাঁর তাৎপর্যপূর্ণ সংযোজন, ‘প্রেস কাকে কতটা গুরুত্ব দেবে সেটা প্রেসের বিষয়। আমার কী বলার থাকতে পারে!’
মুকুলেরও ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, ‘দিলীপদা দলের রাজ্য সভাপতি। ওঁকে প্রেস মিট করতেই হবে। আমিও ভেরি মাচ আছি। তবে নিয়মিত ভাবে সাংবাদিক বৈঠক করার সমস্যা আছে আমার। প্রচুর লোকের ভিড় হয়ে যাচ্ছে। এতে পাড়ার লোকদেরও সমস্যা হতে পারে।’