বঙ্গে ‘ট্রেন্ড’ বুঝতে সেন্টিনেল সমীক্ষা
আগেই ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ বার স্বাস্থ্য দপ্তরও নির্দেশিকা দিয়ে জানাল রাজ্যের ২৩ জেলায় করোনা সংক্রমণের ‘ট্রেন্ড’ বুঝতে সেন্টিনেল সার্ভে শুরুর কথা। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, সার্ভের প্রথম পর্যায়ের জন্য ইতিমধ্যেই প্রত্যেক জেলা থেকে ১০০ জন কম ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি এবং ১০০ জন বেশি ঝুঁকিপূর্ণর সোয়াব নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আগামী বুধবারের মধ্যে তা বিশ্লেষণ করে রাজ্যের বর্তমান করোনা পরিস্থিতির আভাস পাবেন রাজ্যের স্বাস্থ্য এবং প্রশাসনিক কর্তারা।
কী ভাবে হবে এই সেন্টিনেল সার্ভে? স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর, রাজ্যের সমস্ত জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লো এবং হাই রিস্ক ব্যক্তিদের নমুনা সংগ্রহ করবে প্রত্যেক জেলার জন্য বরাদ্দ ৫ সদস্যের একটি দল। প্রসূতি, বিভিন্ন হাসপাতালের বহির্বিভাগে আসা অথবা ইন্ডোরে ভর্তি রোগী, যাঁদের শ্বাস কষ্ট, ফুসফুসে সংক্রমণ বা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো উপসর্গ নেই — এঁরা সবাই কম ঝুঁকিপূর্ণ বা লো রিস্ক ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হবেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তর। চিকিৎসক, নার্স, আশা কর্মী, এএনএম-সহ অন্য চিকিৎসাকর্মী, যাঁরা প্রতিদিন নানা ভাবে সম্ভাব্য করোনা আক্রান্তের কাছে ‘এক্সপোজড’ হয়েছেন — তাঁরা সবাই বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত হবেন সার্ভেতে। সার্ভের দায়িত্ব থাকা এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘আমরা গ্রিন, রেড, অরেঞ্জ — সব জোনেরই হাই এবং লো রিস্ক জনসংখ্যার নমুনা সংগ্রহ করে সেই রিপোর্ট বিশ্লেষণ করব। প্রতি ১৫ দিন অন্তর এই নমুনা বিশ্লেষণ করে দেখা হবে রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে। সেই অনুযায়ী জনস্বাস্থ্য কর্মসূচি চূড়ান্ত হবে। লকডাউন তোলা বা ফের লকডাউনের মতো সিদ্ধান্তও নেওয়া হবে।’
সেন্টিনেল সার্ভে নিয়ে স্বাস্থ্য দপ্তরের নির্দেশিকা প্রকাশের দিনই রাজ্যের মোট করোনা আক্রান্ত আড়াই হাজারের গণ্ডি পেরিয়েছে। শনিবার স্বাস্থ্য দপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ১১৫ জন নতুন করোনা আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে রাজ্যে। ফলে মোট আক্রান্ত হয়েছে ২৫৭৬। করোনা আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ হারিয়েছেন ৭ জন। ফলে এ পর্যন্ত মোট ২৩২ জন করোনা আক্রান্তের মৃত্যু হল রাজ্যে। আবার গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৬৩ জন। ফলে, রাজ্যে বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ১৪৫২ জন।
রাজ্যের করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আড়াই হাজার পেরোলেও শনিবার কিছুটা স্বস্তির খবর কলকাতার জন্য। পুরসভা সূত্রে খবর, গত বুধবার পর্যন্ত কন্টেনমেন্ট জোনের সংখ্যা ৩৪০ থেকে শনিবার তা কমে হয়েছে ২৬৯। এ দিন পুরসভায় এক বৈঠকে এই নয়া কন্টেনমেন্ট জোনের তালিকা তৈরি হয়েছে। তালিকায় শহরের গ্রিন জোন হিসেবে ৯৮টি এবং অরেঞ্জ জোন হিসেবে ৬৩টি জায়গাকে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে পুরসভা সূত্রে খবর। গ্রিন জোনের তালিকায় চলে এসেছে বেলগাছিয়া বস্তিও। শনিবার কলকাতা পুরসভার প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘যেখানে সংক্রমণ বেশি ছড়াচ্ছে, সেখানে মানুষ সচেতন হচ্ছেন। ফলে সেই এলাকা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে। আক্রান্তের সংখ্যা কমছে। কিন্তু শহরের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্ত ভাবে ব্যক্তি বিশেষের মধ্যে সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে।’
বেলগাছিয়া এলাকার ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটর শান্তনু সেনের কথায়, ‘গোড়া থেকেই এই এলাকায় করোনার প্রভাব কমাতে একাধিক পদক্ষেপ করা হয়েছে। তার জেরেই আজ তা গ্রিন জোনে নাম লেখাল।’ চেতলা, বেহালা, খিদিরপুর, ভবানীপুরের মতো কিছু জায়গায় নতুন করে সংক্রমণ দেখা দিয়েছে বলে পুরসভা সূত্রে খবর। তবে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় নিত্যনতুন সংক্রমণের হার অনেকটাই কমানো সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফিরহাদ।