লকডাউনের ছাড়ের মধ্যেই রাজ্যে দেড় কোটি শ্রমদিবস
গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১০০ দিনের কাজকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তাঁর নির্দেশেই রাজ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প শুরু হয়েছে। পঞ্চায়েত দপ্তর সূত্রের খবর, লকডাউন পর্বে কাজ শুরুর পর থেকে রবিবার পর্যন্ত এই প্রকল্পে উপকৃত রাজ্যের ৯ লক্ষ ১৬ হাজার পরিবার। কর্মদিবস তৈরি হয়েছে ১ কোটি ৫৩ লক্ষ। এখনও পর্যন্ত এই খাতে খরচ হয়েছে ১ হাজার ১০৯ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। উল্লেখ্য, লকডাউনে আটকে পড়া ভিনরাজ্যের শ্রমিকদেরও এই কাজে যুক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
গত ২২ মার্চ থেকেই কার্যত ১০০ দিনের কাজ থমকে যায়। ফলে ২০১৯-’২০ আর্থিক বছরে কর্মদিবস সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যায়নি। গত আর্থিক বছরে লক্ষ্যমাত্রা ২৮ কোটি থাকলেও, তা শেষ পর্যন্ত দাঁড়ায় ২৭ কোটি ২৩ লক্ষ ৫৫ হাজারে। চলতি আর্থিক বছরে এই লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ২২ কোটি করেছে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। লকডাউনে কাজ বন্ধ থাকায় গ্রামীণ অর্থনীতির কথা চিন্তা করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত ২১ এপ্রিল পঞ্চায়েত দপ্তরকে এক নির্দেশে ১০০ দিনের প্রকল্পের অধীনে পুকুর খনন, সেচ খাল কাটা, বৃক্ষরোপণ প্রভৃতি কাজ শুরু করতে বলেন। কারণ, তিনি মনে করেন, এর ফলে গ্রামের মানুষের হাতে কিছু টাকা যাবে।
এরপরেই পঞ্চায়েত দপ্তর সব জেলাকে নির্দেশ পাঠায়। সেই মতো শুরু হয় কাজ। দিন পিছু ২০২ টাকা করে পেয়েছেন শ্রমিকরা। এই কাজের পরিমাণ আরও বাড়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাংলার আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির কাজেও ১০০ দিনের প্রকল্পে যুক্ত শ্রমিকদের ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।
এই প্রকল্পে গত কয়েক বছর ধরেই পশ্চিমবঙ্গ প্রথম স্থানে রয়েছে। শুধু শ্রমদিবস বা কর্মদিবস তৈরি নয়, কাজের গুণগত মানের দিক থেকেও অন্য অনেক রাজ্যকে ছাপিয়ে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের মান খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিনিধিরা দফায় দফায় রাজ্যে এসেছেন, নানা ধরনের কড়াকড়ি করেছেন, অনেক জব কার্ড বাতিল করেছেন। তাসত্ত্বেও গত আট-ন’ বছরে গ্রামের অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন হয়েছে, লক্ষ লক্ষ পরিবার এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। রুটি-রুজির সংস্থান হয়েছে অসংখ্য অভুক্ত মানুষের।
গত ১৩ মে পঞ্চায়েত দপ্তরের ভিডিও কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করে প্রত্যেক জেলাশাসক এবং জেলা পরিষদের সভাধিপতিকে ১০০ দিনের কাজে জোর দিতে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে জেলায় জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত দপ্তরের কর্মী-অফিসাররা ঝাঁপিয়ে পড়ায় ড়ে গিয়েছে কর্মদিবসের সংখ্যা। এটা রাজ্যের গ্রামীণ অর্থনীতির পক্ষে খুশির খবর বলেই মনে করছেন নবান্নের অফিসাররা।