সাইক্লোন আম্পান – নবান্নে ২৪ ঘন্টার কন্ট্রোল রুম
আম্পানের জন্য দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব-পশ্চিম মেদিনীপুর ও কলকাতা-হাওড়ার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সোমবার কলকাতার অরণ্য ভবনে বিশেষ বৈঠকে বসেছিলেন বনমন্ত্রী রাজীব। আলোচনার শেষে তাঁর মন্তব্য, ‘এ বার বিপর্যয়ের সম্ভাবনা মারাত্মক। বিএসএফের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রেখে সর্বত্র মাইকে প্রচার চালাচ্ছি। মোট ৬ জেলায় সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য চার দিনের মতো জল ও খাবার তৈরি রেখেছি। কলকাতা কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে যা সব নজরে রাখবে। আর ঝড়খালির কন্ট্রোল রুম থেকে গোটা সুন্দরবনে নজর রাখা হবে। তৈরি হয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপও, তাতে আমি ছাড়াও শীর্ষ বনাধিকারিক, কর্মী থাকছেন। ঝড়ের পর উদ্ধারকাজের জন্য স্পিডবোট তৈরি থাকবে।’
ঝড় এবং তার পরে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য সমস্ত বনাধিকারিককে প্রতি ঘণ্টায় রিপোর্টিং করতে বলা হয়েছে। বন দপ্তরের তরফে সোমবার জঙ্গল সন্নিহিত এলাকার মানুষকে সতর্ক করার জন্য মাইকে প্রচার হয়েছে। লকডাউন ভেঙে নদীতে যে সমস্ত মৎস্যজীবী মাছ-কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিল, তাদেরও ঘরে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে জানাচ্ছেন জেলার বিভাগীয় বনাধিকারিক সন্তোষ জি আর। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের সহযোগিতায় জোগাড় করা হয়েছে প্রচুর জলের পাউচ।
২০১৯ সালে বুলবুল সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকার ব্যাপক ক্ষতি করেছিল। বছর ঘুরলেও সেই ক্ষত পুরোটা সারেনি। ম্যানগ্রোভ নষ্ট হয়েছে, বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল ব্যাঘ্র প্রকল্পের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর লাগোয়া বন দপ্তরের ৬টি ক্যাম্পের সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থাও। এ বার তাই আগে থেকেই নেতিধোপানি, হলদিবাড়ি-সহ ৬টি ক্যাম্পের কর্মীদের নিরাপদ এলাকায় তুলে আনা হচ্ছে। তবে ক্যাম্পে নজর থাকবে। সোলার প্যানেলও খুলে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে ক্যাম্পের ভিতরে।
সুন্দরবনের খাঁড়ি এলাকায় দোবাঁকি, সুধন্যখালির মতো ক্যাম্পে যেমন বনকর্মীরা থাকছেন। তার জন্য অন্তত ৪ দিনের রেশন ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ব্যাঘ্র প্রকল্পের উত্তর দিকে কোর এরিয়া-সহ জঙ্গলে ১০৫ কিমি দীর্ঘ নাইলন ফেন্সিং রয়েছে যা সাইক্লোনে তছনছ হয়ে যেতে পারে। সেই পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে তৈরি থাকছে বন দপ্তরের দুটি স্পিড বোট।
রাজ্যের বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘জন্তু-জানোয়ার প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বাইরে বেরিয়ে আসতেই পারে। ব্যাঘ্র প্রকল্পের বেশ কিছু এলাকায় উল্টোদিকে গ্রামে বসতি রয়েছে। তাই কোনও ঝুঁকি নেওয়া হচ্ছে না। খাবার, ওষুধ মজুত হয়েছে। বুলবুলের থেকে অনেক বেশি তৈরি হয়ে আম্পানের মোকাবিলায় নামছি আমরা।’ করোনার জেরে চলা লকডাউন মোকাবিলার জন্য পাওয়া ত্রাণের একাংশও এক্ষেত্রে বিপর্যস্ত মানুষের কাজে লাগাতে চাইছে বন দপ্তর। ত্রাণ হিসেবে কাঁচামাল বিলি না-করে প্রয়োজনে রান্না করা খাবার বিলি করার জন্যও প্রস্তুতি থাকছে।