আম্পানকে জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণার দাবি বিরোধীদের
কথা ছিল, ২২টি কেন্দ্র-বিরোধী দলের ভিডিয়ো-বৈঠক হবে কেন্দ্রের লকডাউন নীতি ও আর্থিক প্যাকেজের বিরুদ্ধে। কিন্তু শুক্রবার সর্বদলীয় ভিডিয়ো-বৈঠক শুরুই হল ঘূর্ণিঝড় উম্পুনের অভিঘাতে বাংলার বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়া নিয়ে। বিরোধী দলগুলি একযোগে দাবি তুলল, বাংলার যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তাকে ‘জাতীয় বিপর্যয়’ আখ্যা দিক নয়াদিল্লি।
কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীর আহ্বানে একটি সর্বসম্মত প্রস্তাবও পাশ হয়েছে বৈঠকে৷ ঘূর্ণিঝড়ে বাংলায় প্রাণ হারানো ৮৬ জনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতাও পালন করেছেন বিরোধী দলের নেতারা৷ সবক’টি দল এই বিপদে একযোগে বাংলারপাশে দাঁড়াবে, এমনটাই সিদ্ধান্ত বিরোধী নেতৃত্বের৷
এই সিদ্ধান্ত যখন নেওয়া হচ্ছে, তখনও বৈঠকে ছিলেন না প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বসিরহাট সফরে ব্যস্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের তরফে তাঁর জায়গায় ছিলেন ডেরেক ও’ব্রায়েন। মমতা ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ে ঢুকতে পারেন দুপুর তিনটে চল্লিশের সময়। ১৪ মিনিটের সংক্ষিপ্ত ভাষণ৷ তার মধ্যেই বৈঠকের অভিমুখ বেঁধে দিলেন মমতা৷ তাঁরা যে রাজনীতি করতে চান না, বিরোধীদের সামনে অবশ্য স্পষ্ট করে দিলেন তাও। সওয়াল করলেন বিরোধী ঐক্য জোরদার করার পক্ষেও।
এই ভিডিয়ো-বৈঠকে মূলত আলোচনা হয়েছে তিনটি বিষয় নিয়ে। এক, কেন্দ্রের দেওয়া আর্থিক প্যাকেজ। দুই, লকডাউন থেকে বেরনোর ‘এগজিট’ পলিসি। তিন, অ-বিজেপি রাজ্যগুলির সঙ্গে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের আচরণ। প্রথমেই আর্থিক প্যাকেজকে তুলোধোনা করেন বিরোধীরা৷ সনিয়া অভিযোগ তোলেন, প্রধানমন্ত্রীর ২০ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা এবং পরের পাঁচ দিন ধরে অর্থমন্ত্রীর বিশদ বিবরণ ঘোষণা আসলে নিষ্ঠুর রসিকতা৷
তাঁর কথায়, ‘এই প্যাকেজে কৃষকদের কথা ভাবা হয়নি৷ যাদের ছাঁটাই করা হয়েছে, তাঁদের কথা ভাবা হয়নি৷ লকডাউনের মাঝে দেশের গরিবদের হাতে টাকা ছিল না৷ তাদের পকেটে সরাসরি টাকা দেওয়ার কথা বলা হল না কেন?’ মমতাও দ্ব্যর্থহীন ভাবে জানান, কোভিডের সঙ্গে লড়াই করার জন্য রাজ্যগুলির হাতে যে পরিমাণ টাকা থাকা প্রয়োজন, তা একেবারেই নেই৷
তাঁর কথায়, ‘নো আর্নিং, ওনলি বার্নিং। একসঙ্গে কতগুলো কাজ করতে হবে, ভেবে পাচ্ছি না৷ আমাদের রাজ্যে বিরাট বিপর্যয় ঘটে গিয়েছে৷ একদিকে করোনা, অন্য দিকে ঘূর্ণিঝড়৷ ৬ কোটি লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ তার মধ্যেই প্রতিদিন ৫০,০০০ লোক আসছে, তাদের বাড়ি পাঠাতে হচ্ছে, করোনা পরীক্ষা করতে হচ্ছে৷ মাস্ক, পিপিই কিট সংক্রান্ত বিরাট খরচ আছে৷ অসংগঠিত ক্ষেত্রে সমস্যা আছে, লোকের হাতে টাকা নেই৷ আমাদের হাতেও টাকা নেই।’
করোনা-লড়াইয়ে বাংলা ৬০০ কোটি টাকা খরচ করে ফেললেও কোনও কেন্দ্রীয় সহায়তা পায়নি, সে কথাও জানিয়েছেন মমতা৷ কেন্দ্রীয় প্যাকেজের তীব্র সমালোচনা করেন ডিএমকে প্রধান এম কে স্টালিন এবং ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনও৷ কেন্দ্রীয় প্যাকেজের বিকল্প ব্যবস্থাও চেয়েছেন বিরোধীরা।
তাঁদের দাবি, এই প্যাকেজকে বাতিল করে অবিলম্বে নতুন প্যাকেজ ঘোষণা করতে হবে৷ আগামী ছ’মাসের জন্য বিশেষ আর্থিক সহায়তা দিতে হবে সেই সব মানুষকে, যাঁরা আয়করের আওতায় পড়েন না৷ প্রতি মাসে তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৭৫০০ টাকা করে বিশেষ অনুদান দিতে হবে। এর মধ্যে ১০,০০০ টাকা দিতে হবে অবিলম্বে। গরিবদের প্রত্যেককে প্রতি মাসে ১০ কিলোগ্রাম করে খাদ্যশস্য দিতে হবে। পরিযায়ী শ্রমিকদের বিনা খরচে বাড়ি পৌঁছে দিতে হবে৷