লকডাউনেও বেড়েছে ঘি, চা এবং ভোজ্য তেলের দাম
গত ২৫ মার্চ থেকে সারা দেশে চলছে করোনা-লকডাউন। এর জেরে ক্রেতা চাহিদা একেবারে তলানিতে নেমে গিয়েছে। ফলে, এপ্রিলে ভোগ্যপণ্য বিক্রিতেও চরম ভাটা পড়ে। কিন্তু, তা সত্ত্বেও ভোজ্য তেল, নরম পানীয়, ঘি ইত্যাদির দাম লকডাউন সময়কালে অনেকটাই বেড়েছে বলে জানিয়েছে বাজার গবেষণা সংস্থা নিয়েলসেন।
তাদের যুক্তি, করোনা-লকডাউন সময়কালে দামে ছাড় বেশিরভাগ পণ্যেই ছিল না। এমনকী, কোনও পণ্যের প্রোমোশন সংক্রান্ত অফারও দেয়নি সংস্থাগুলি। ফলস্বরূপ, কার্যত দাম লকডাউনের আগের সময়ের থেকে বেড়ে যায় এবং ক্রেতাদের বেশি দাম দিয়ে পণ্য কিনতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন নিয়েলসেন, প্রেসিডেন্ট, দক্ষিণ এশিয়া প্রসূন বসু।
ভোজ্য তেল, ঘি ইত্যাদি কিছু ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ার আর একটা বড় কারণ বেশ কিছু জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের বাজারে সরবরাহ না থাকা। ফলে, অনেকেই অপেক্ষাকৃত বেশি দামের ব্র্যান্ড কিনতে বাধ্য হয়েছেন বলে প্রসূনের ব্যাখ্যা।
নিয়েলসেনের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বছরের মার্চের শেষ সাত দিন ও গোটা এপ্রিলে নরম পানীয়র যে গড় দাম ছিল তার তুলনায় লকডাউনের প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় দাম ২৪ শতাংশ বেড়েছে। একই ভাবে দ্বিতীয় দফার লকডাউনের দু’সপ্তাহে প্যাকেজজাত ঘি, প্যাকেজজাত চা, আটার প্যাকেট ও রিফাইনড তেলের দাম বেড়েছে যথাক্রমে ১৮, ১২, ১২ ও ১৪ শতাংশ।
তবে এপ্রিলে পাড়ার দোকান ও মডার্ন ট্রেড মিলিয়ে ভোগ্যপণ্য বিক্রি ৩০ শতাংশের বেশি কমেছে। তার মধ্যে চিরাচরিত বিপণি ও পাড়ার দোকানগুলিতে গত বছরের একই সময়কালের তুলনায় বিক্রি ৩৮ শতাংশ কমেছে। অন্য দিকে, মডার্ন ট্রেডের বিপণিগুলিতে বিক্রি ৫ শতাংশ বেড়েছে। লকডাউন সময়কালে গড়ে ১২ দিন পাড়ার মুদি দোকান, ওষুধের দোকান ইত্যাদি বন্ধ ছিল এবং সেই কারণে বিক্রি অনেকটাই কমে গিয়েছে।
যদিও আশার কথা শুনিয়েছে নিয়েলসেন। তাদের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘ক্রেতারা এখন পণ্য কেনার সময় সবথেকে বেশি সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রাখবেন। তবে ক্রেতারা লকডাউনের আগে যে সমস্ত ব্র্যান্ড কিনতে পছন্দ করতেন এবং সেগুলি না পাওয়ায় অন্য ব্র্যান্ড বাধ্য হয়ে কিনেছেন, সমস্ত কিছু স্বাভাবিক হলে তাঁর ফের তাঁদের পুরনো পছন্দের ব্র্যান্ডে ফিরে যাবেন।’ পাশাপাশি, যেহেতু অনলাইনে এখন কেনাকেটা করতে ক্রেতা সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে, তাই ভোগ্যপণ্য সংস্থাগুলি ই-কমার্সে তাদের পণ্য বেশি করে বিক্রি করতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী কৌশল নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
তবে বছরের বাকি সময়টাও ভোগ্যপণ্য সংস্থাগুলির ব্যবসার পক্ষে তেমন একটা ভাল যাবে না বলেই পূর্বাভাস বাজার নিয়ে গবেষণা করা সংস্থাটির। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ব্যবসা বৃদ্ধির হার ৭.৫ শতাংশ হলেও মার্চে তা কমে দাঁড়ায় ৪ শতাংশে। আর জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতে ভোগ্যপণ্যের ব্যবসা বৃদ্ধি হবে ৫-৬ শতাংশ বলে জানিয়েছে নিয়েলসেন। সেই কারণেই ২০২০ ক্যালেন্ডার বছরে তারা সংশোধিত ভোগ্যপণ্য ব্যবসার বাজার বৃদ্ধির হার আগের হিসাব (৯-১০ শতাংশ) থেকে কমিয়ে ৫-৬ শতাংশ করেছে।