শহরে গাছের ধরন বদলানোর প্রস্তাব
আম্পানের তাণ্ডবের পর চার দিন কেটে গিয়েছে। উপড়ে যাওয়া গাছ সরেছে শহরের অনেক জায়গা থেকে। কিছু এলাকায় ফিরেছে বিদ্যুৎ, পানীয় জলের সরবরাহ। তবে মোবাইল নেটওয়ার্ক, কেবল পরিষেবা এখনও বহু অঞ্চলে বিপর্যস্ত। মেরামতির কাজ চলছে যুদ্ধকালীন তৎপরতায়। তবে এই মেরামতি ও পুনর্নির্মাণের সময়েই এই ঝড়ের শিক্ষায় পরিকল্পনামাফিক কাজ হোক, চাইছেন বিশেষজ্ঞরা।
অভিজ্ঞ স্থপতি, নগর-পরিকল্পকরা বলছেন, কলকাতা বা অন্যত্র সব কিছু ভেঙে নতুন করে ঘূর্ণিঝড়-প্রতিরোধী করে গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তবে সাইক্লোনের তাণ্ডবে গাছ, বিদ্যুৎ, পানীয় জল, মোবাইল নেটওয়ার্ক, কেবলের মতো পরিষেবার যে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে–তা মেরামতির সময়েই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে এগোনো প্রয়োজন।
কলকাতা পুরসভার তথ্য বলছে, শুধু শহরেই ১৪ হাজারের মতো গাছ পড়েছে। নিশ্চয়ই নতুন করে গাছ বসানো হবে। বিজ্ঞানসম্মত ভাবে গাছ বসানোর জন্য ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেক্টের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের দাবি, ঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়ার পরেই বিশেষ করে বড় গাছগুলির প্রুনিং, অর্থাৎ ডালপালা ছাঁটা, বড় ও মাঝারি হোর্ডিংগুলি খুলে ফেলা উচিত ছিল। তা হলে ঝড়ের সময় সেগুলি উপড়ে বিদ্যুতের তার সহজে ছিঁড়ত না।
অধ্যাপক সঞ্জীব নাগের ব্যাখ্যা, ‘শহরের বিভিন্ন জায়গায় যে সব গাছ উপড়ে পড়েছে–সেগুলি প্রধানত কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, ইউক্যালিপটাস। এই গাছগুলির ডালপালা তাড়াতাড়ি বড় হয়ে সবুজে ভরে গেলেও শিকড় সেই অনুপাতে মাটির গভীরে যায় না। তাই আম, শিশুর মতো গাছ লাগানো যেতে পারে।
অনেকের মতে, কেবলের তার নিয়ে যাওয়ার সময়ে বিদ্যুতের খুঁটি বা রাস্তার ধারে তারের জটলা না-করে জংশন বক্সের মধ্য দিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত। কোনও একটি পাড়ার জন্য জাংশন বক্সে নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে সেখান থেকে বাড়ি-বাড়ি তার টানা যায়। এতে ঝড় হলেও কেবল-সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা কমবে।
বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, বর্তমান পর্যায়ে মেরামতির আগেই বিদ্যুৎ, কেবল, মোবাইল সংস্থা, পুরসভা-সহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার দরকার। প্রয়োজন বিপর্যস্ত এলাকার রিস্ক অ্যানালিসিসেরও।