সুন্দরবনে দ্রুত গতিতে চলছে নাইলন ফেন্সিং মেরামতি
একবুক জল। নীচে প্রায় হাঁটু ডুবে যাওয়া কাদা। এর মধ্যে দাঁড়িয়েই ব্যাঘ্র প্রকল্পের কোর এলাকায় ছিঁড়ে যাওয়া নাইলন ফেন্সিং মেরামত করছেন বনকর্মীরা। যে কোনও মুহূর্তে জঙ্গল থেকে বাঘ বা কুমির বেরিয়ে আসতে পারে। তখন ভরসা বলতে পাশে রাখা মোটরবোট। যদি ঠিক সময়ে লাফ দিতে পারেন, প্রাণ বাঁচবে!
আম্পান-পরবর্তী বিপর্যয় মোকাবিলায় এ ভাবেই সুন্দরবন বাঁচানোর কাজে নেমেছে প্রশাসন। গোটা জেলার সঙ্গে বিধ্বস্ত এই এলাকাও। তাও সোমবার সকালে ভয় আর আনন্দ মিশে গিয়েছিল বনকর্মীদের মনে, যখন আচমকাই রেইকি করতে করতে বাদাবনের পাশে দেখা মেলে দক্ষিণরায়ের। নাইলন ফেন্সিং নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কোনও বাধা ছাড়াই সে বেরিয়ে পড়েছে নদীতে সাঁতার কাটতে। মারণ ঝড়ের শেষে প্রাণের সন্ধান। ঘূর্ণিঝড়-বিধ্বস্ত পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ রামসার সাইটে এর থেকে অমূল্য ‘সাইটিং’ আর কী হতে পারে!
ঝড়ের পরে বাঘের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছিল সর্বস্তরে। কিন্তু ঝড়ের পরদিন থেকেই বাঘেদের স্বাভাবিক চলাফেরা নজরে আসতে শুরু করেছে ব্যাঘ্র প্রকল্পের কর্মীদের চোখে। শুধু এই কদিনেই বাঘের দেখা মিলেছে হরিখালি, খাটোয়াঝুড়ি, সুধন্যখালি, দোবাঁকিতে। সেই তথ্য জঙ্গলে থেকেই পর্যালোচনা করছেন ব্যাঘ্র প্রকল্পের দুই সহ-ক্ষেত্র অধিকর্তা অনিন্দ্য গুহঠাকুরতা ও সৌমেন মন্ডল।
এ দিকে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ক্ষেত্র অধিকর্তা সুধীরচন্দ্র দাস ও সহ-অধিকর্তা দীপক এমের নেতৃত্বে আড়াইশো জন স্থায়ী ও অস্থায়ী কর্মী উম্পুনের পরদিন থেকেই নেমে পড়েছে জলে জঙ্গলে, ক্ষতিগ্রস্ত নাইলনের জাল সারাই করতে। মাস ছয়েক আগে বুলবুল ঘূর্ণিঝড়ে নাইলনের জাল ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তা সারানোর কিছু মাসের মধ্যেই হাজির উম্পুন। রোজ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত প্রায় গলা জলে নেমে বা কোথাও নৌকায় করে সেই কাজ করা হচ্ছে। কর্মীদের সঙ্গেই রয়েছেন সজনেখালি ও বসিরহাট রেঞ্জের আধিকারিক বিশ্বজিৎ দাস ও বিপ্লব ভৌমিক।