ঝড়ে ভাঙা ঘর গড়ার মরিয়া লড়াই মৌসুনিতে
আম্পানের তাণ্ডবে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এই দ্বীপাঞ্চল। নতুন করে ঘর গোছাতে ব্যস্ত সকলেই। বুলবুলের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নামখানা ব্লকের বিডিও রাজীব আহমেদ আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার অনেক আগেই বাসিন্দাদের তুলে আনা হয়েছিল দ্বীপের বিভিন্ন স্কুল ও সাইক্লোন সেন্টারগুলোতে। সেখানে দুর্গতদের খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়।
ত্রাণ শিবিরে থাকা বহু বাসিন্দার ঘরবাড়ির কিছুই অবশিষ্ট নেই। তাঁদের জন্য ত্রিপলের ব্যবস্থা করা হয়। দেওয়া হয় শুকনো খাবার। আয়লার পর থেকেই মৌসুনি দ্বীপের নদী ও সমুদ্র বাঁধের অবস্থা খারাপ হয়ে পড়ে। দ্বীপের মাঝ বরাবর সমুদ্রতটে বেশ কিছুটা অংশে কংক্রিটের বাঁধ তৈরি হলেও সেই বাঁধের দু’পাশে কোনও বাঁধ নেই।
চিনাই নদী পার করে দ্বীপের ঘাটে একের পর এক গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি, কাঁচা বাড়ি ভেঙে পড়ে রয়েছে। কোনও বাড়ির ছাউনি নেই। মাটিতে মিশেছে পানের বরজ। সমুদ্রের জল ঢুকেছে চাষের জমি ও পুকুরে। এখনও অনেক জায়গায় হাঁটু সমান জল।
বালিয়াড়া, সল্টঘেরিতে বিপর্যয়ের ছবি আরও ভয়াবহ। বছর দু’য়েক আগে মৌসুনিতে হোম স্টে চালু হয়। সল্টঘেরিতে বঙ্গোপসাগরের তটে ঝাউবনের মধ্যে অস্থায়ী ঘর তৈরি করে পর্যটকদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এ রকম ৪০টির বেশি পর্যটন আবাস রয়েছে সেখানে। ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে পর্যটন আবাসগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে পর্যটন আবাস চত্বর। লকডাউনের মৌসুনিতে বন্ধ ছিল পর্যটন। ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে মৌসুনির পর্যটন নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেল।
বর্তমানে এই দ্বীপে প্রায় ২৫ মানুষের বাস। ইতিমধ্যেই অনেক বাসিন্দা ভাঙনের আতঙ্কে দ্বীপ ছেড়েছেন। একান্ত নিরুপায় হয়ে যাঁরা এই দ্বীপে রয়ে গিয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশেরই জীবিকা ধান, পান ও সব্জির চাষ। অনেকেই আবার ভিন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করেন। ভাঙন আর দরিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে দিন কাটাচ্ছিলেন দ্বীপের বাসিন্দারা। আম্পান তাঁদের সেই লড়াই আরও কঠিন করে দিল।