ঋতুপর্ণের অসম্পূর্ণ কাজ – বঞ্চিত বাঙালি দর্শক
১৯৯২ থেকে ২০১৩, মাত্র ২১ বছরেই ঋতুপর্ণ ঘোষ বাঙালীকে উপহার দিয়েছেন ১৯ টি কালজয়ী ছবি। সত্যজিৎ, ঋত্বিক, মৃণাল যুগের পরে তিনিই বাংলা সিনেমায় শুরু করেছিলেন এক নতুন অধ্যায়। কিন্তু তা শেষও হয়ে গেল বড্ড তাড়াতাড়ি।
তিনি বাংলা সিনেমাকে দুহাত ভরে দিয়েছেন। কিন্তু বাঙালী বঞ্চিত হল আরো অনেক কিছু থেকে। কারন দাতার জীবন ছিল স্বল্পমেয়াদী। বাংলা সিনেমা খুব তাড়াতাড়িই হারিয়ে ফেলল তার এক অমূল্য রতনকে। তিনি চলে গেলেন কিন্তু রয়ে গেল তাঁর কাজ। আরো রইল তাঁর কিছু অপূর্ণ কাজ। যা বাংলা সিনেমাকে আরো সমৃদ্ধ করত।
ঋতুপর্ণ মৃত্যুর কিছুদিন আগেই টুইট করে জানান সত্যান্বেষীর শুটিং প্রায় শেষ করে ফেলেছেন। কিন্তু শেষ হল না তাঁর সেই কাজ। পরবর্তীতে প্রযোজনা সংস্থা পোস্ট-প্রোডাকশনের কাজ শেষ করে। ২০১৩-র শেষের দিকে মুক্তি পায় ছবিটি। নতুন ব্যোমকেশ বক্সীর চরিত্রে দর্শক পেলেন সুজয় ঘোষকে এবং অজিতের চরিত্রে দেখা গেল অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়কে। এক নতুন আঙ্গিকে ব্যোমকেশ বক্সী। বলা চলে ঋতু আঙ্গিক।
‘অন্য নায়ক’ বলে একটি ছবির চিত্রনাট্য লিখেছিলেন ঋতুপর্ণ। কিন্তু সে ছবিও আর বানানো হয়নি। পরবর্তীতে তাঁর ভাই ইন্দ্রনীল ঘোষ সেইচিত্রনাট্য কৌশিক গাঙ্গুলীর হাতে তুলে দেন। আর তার অনুপ্রেরণাতেই তৈরি কোশিক গাঙ্গুলীর ছবি ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’। যদিও পরবর্তীতে এই সিনেমার কো-রাইটার হিসেবে স্ক্রিপ্ট লেখার দাবী করেন প্রতিম গুপ্ত। তা নিয়ে বেশ খানিকটা জলও ঘোলা হয়।
ঋতুপর্ণ তাঁর বিভিন্ন ইন্টারভিউতে বলেছিলেন মহাভারত নিয়ে তিনি কাজ করতে চান। এই খবর শুনে অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষায় ছিলেন সিনেমা প্রেমীরা। শুরুও করেছিলেন স্ক্রিপ্ট লেখা। নিয়তির নির্মম পরিহাসে সেই কাজও অসম্পূর্ণই রয়ে গেল। তাঁর এই মহাভারত ছিল এক নারীবাদী প্রেক্ষাপট। শোনাতে চেয়েছিলেন পাঞ্চালীর কথা। তাও শোনা হল না দর্শকের। মহাভারতের এই দিকটি আর দেখা হল না বাঙালীর।
আগাথা ক্রিস্টির মিস মারপেল নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন পরিচালক। প্রথম এপিসোডের খানিকটা কাজও করে ফেলেছিলেন। কিন্তু শেষ করা আর হয়নি। প্রযোজনা সংস্থার পক্ষ থেকে সেই কাজ শেষ করে কোনমতে প্রথম এপিসোডটির সম্প্রচার হয়। দর্শক বঞ্চিত হল রাঙাপিসিমার গল্প দেখার থেকে। রাঙা পিসিমার ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল অলকানন্দা রায়কে।
এছাড়া, ঋতুপর্ণ বারবার বলেছিলেন শ্রী চৈতন্যকে নিয়ে কাজ করতে চান তিনি। কিন্তু তাঁর সেই ইচ্ছেও অপূর্ণই রয়ে গেল। শুধু পরিচালক নয়, অভিনেতা ঋতুপর্ণকেও তো হারালাম আমরা। চিত্রাঙ্গদা ছবিটির হাত ধরে আমরা পেয়েছিলাম অন্য এক নতুন ঋতুপর্ণকে। কে জানত, এরপর তিনি সমাজকে কোন পথে এগিয়ে যাওয়ার দিশা দিতেন!
রয়ে গেছে বহু অপূর্ণ কাজ। আরো খানিকটা সময় পাওয়া গেলে বাংলা সিনেমার দর্শক আরও অনেক কিছুই পেতেন ঋতুপর্ণর কাছে। কিন্তু, বিধাতার নিষ্ঠুর পরিহাস খণ্ডাবে কে? এ আফসোস চিরদিনের।