নুন-মাটিতেই ধান ফলাবে সুন্দরবন
বাদাবনের নোনামাটিতে সমুদ্রের নুন ঢেলে দিয়েছে আম্পান। ধুঁকতে থাকা গ্রামীণ অর্থনীতিকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে ওই নোনামাটিতেই ধান চাষের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কয়েকদিন আগে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া ওই প্রস্তাবকে বাস্তবায়িত করতে উঠে পড়ে লেগেছে রাজ্য প্রশাসন।
এক দশক আগের ঘূর্ণিঝড় আয়লায় সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকায় নোনা জল জমিতে ঢোকায় চাষ হবে না বুঝেই মানুষ পাড়ি দিতে বাধ্য হয়েছিলেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শ্রমিকের কাজে। এ বারও বর্ষার মুখেই আমন ধানের চাষ নিয়ে দিশেহারা সুন্দরবনের মানুষকে আশ্বস্ত করতে নোনা জল ঢোকা জমিতেই নোনা সহনশীল ধান চাষ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
লবণাক্ত জমিতে আমন চাষ শুরু করতে বিশেষ প্রজাতির ধানের বীজ প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে চুঁচুড়া নোনা-১, চুঁচুড়া নোনা-২, গোসাবা- ৫ ও গোসাবা- ৬। এছাড়া জারাভা নামের এক প্রকারের ধানও রয়েছে। অতীতে সুন্দরবন এলাকায় যে সব ধানের চাষ হতো সেগুলোও লবণ সহনশীল। এই তালিকায় রয়েছে মরিচশাল, হোগলা, হামাই, গেড়িমুড়ি, দুধেমোটা, কালোমোটা, জ্ঞাতিশাল, রূপশাল, বালান, ড্যানিয়েল ২ ও ৩।
বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিশ্বপতি মণ্ডলের পরামর্শ, জমির নোনাজল বের করে দেওয়ার পর শাক চাষ করলে নোনা ভাব কমবে। কটকের কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে আবিষ্কৃত নোনা সহনশীল ধানের বেশ কয়েকটি প্রজাতির বীজ এনে চাষিদের দেওয়া যেতে পারে। জেলা কৃষি দপ্তর স্থানীয়ভাবে অল্প নোনা সহনশীল দুধেশ্বর ও দাদশাল প্রজাতির ধান চাষেরও পরামর্শ দিচ্ছেন। কারণ বহু বছর ধরে সুন্দরবনের নোনা আবহাওয়ায় এই ধান চাষ করে আসছেন কৃষকরা।
এখন প্রশাসনের প্রথম কাজ হল, ভেঙে যাওয়া নদীবাঁধগুলি দ্রুত মেরামত করা। সেচ দপ্তর যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সেই কাজ শুরু করেছে। একশো দিনের শ্রমিকদের দিয়ে দ্রুত বাঁধ মেরামত করে নতুন করে নোনা জল ঢোকা বন্ধ করা হবে। সেচ দপ্তরের সাহায্যে স্লুইসগেটগুলি ব্যবহার করে জমির নোনা জল বের করা হবে। বর্ষার শুরুতে বৃষ্টির জলও নালার মাধ্যমে জমির বাইরে বার করা হবে। এর পর দ্রুত ধঞ্চে গাছ রোপণ করা হবে। অল্প দিনেই ফুট দুয়েক লম্বা হলে সেই ধঞ্চে গাছ কেটে ওই জমিতেই ফেলে রাখা হবে। গাছ পচে মাটির সঙ্গে মিশে লবণের ভাব কমানোর পাশাপাশি জমিতে নাইট্রোজেন জোগাবে।