করোনা হাসপাতাল বাড়াচ্ছে রাজ্য
কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার কিংবা পাহাড়ে পরিকাঠামো তৈরি না-হওয়ায় রোগীর ভিড় উপচে পড়ছে শিলিগুড়ির কোভিড-১৯ হাসপাতালে। ১০০ শয্যা রয়েছে। সেখানে কোচবিহারেরই ৮৭ জন রোগী চিকিৎসাধীন। এর পাশাপাশি শিলিগুড়ি এবং পাহাড়ের রোগীদেরও ভিড় রয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজ্য সরকার শিলিগুড়ির মাটিগাড়ায় তৈরি কোভিড হাসপাতালের শয্যা আরও ২০টি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নবান্ন সূত্রের খবর, বিভিন্ন জেলায় নতুন করে অন্তত দশটি কোভিড হাসপাতাল তৈরির জন্য স্বাস্থ্য দপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোচবিহার, বীরভূম, আলিপুরদুয়ার, উত্তর দিনাজপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদিয়ায় পরিযায়ী শ্রমিক আসার কারণে নতুন করে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে। অথচ এরমধ্যে অনেকগুলো গ্রিন জোন হিসেবে চিহ্নিত ছিল। রাজ্যে এই মুহূর্তে কোভিড হাসপাতালের সংখ্যা ৬৯। এর মধ্যে ৫৩টি বেসরকারি হাসপাতালকে কোভিড হাসপাতাল হিসেবে চিহ্নিত করেছে রাজ্য।
সরকারি সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে ১৫০টি ট্রেন পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে রাজ্যে পৌঁছেছে। ১০ জুনের মধ্যে আরও ৮৫টি শ্রমিক স্পেশাল ছাড়াও সাধারণ যাত্রীদের নিয়ে দূরপাল্লার ট্রেনও রাজ্যে আসছে । নবান্ন পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, শুধু পরিযায়ী শ্রমিক নয়, করোনাপ্রবণ পাঁচ রাজ্য থেকে দূরপাল্লার ট্রেনে আসা সাধারণ যাত্রীদের জন্য একই স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। অর্থাৎ চোদ্দ দিন সরকারি কোয়ারান্টিনে থাকতে হবে। রাজ্যগুলি হল দিল্লি, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, গুজরাত এবং মধ্যপ্রদেশ।
নবান্ন সূত্রের খবর, পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্যে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশেষ করে গ্রিন থাকা জেলাগুলিতে এখন করোনা সংক্রমিত হচ্ছে।
ফলে দেশ জুড়ে আটকে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকেরা রাজ্যে ফেরার পর পরিস্থিতি কোনদিকে গড়ায় তা আগাম অনুমান করে গ্রাম পঞ্চায়েত ভিত্তিক কোয়ারান্টিন সেন্টার তৈরির কাজেও নেমেছেন প্রশাসনিক কর্তারা। এখন ব্লক পিছু একটি করে কোয়ারান্টিন সেন্টার রয়েছে। কিন্তু ভিন রাজ্যের শ্রমিকেরা ফেরা শুরু করায় কোয়ারান্টিন সেন্টারে যেভাবে ভিড় বাড়ছে তাতে পরিষেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে ব্লক প্রশাসনের কাছে। গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে কোয়ারান্টিন সেন্টার হলে শ্রমিকে পরিবারই খাবার পৌঁছে দিতে পারবে বলে অনুমান স্বাস্থ্য দপ্তরের। তাতে জেলায় জেলায় কোয়ারান্টিন সেন্টারগুলিতে বিক্ষোভ সামাল দেওয়া সম্ভব হবে। ইতিমধ্যেই শিলিগুড়িতে দুটি টাস্ক ফোর্স তৈরি করা হয়েছে করোনা সংক্রান্ত সমস্ত স্থানীয় সমস্যা মেটানোর জন্য। একই ভাবে জোর দেওয়া হচ্ছে করোনা পরীক্ষার কেন্দ্র তৈরির কাজে। জলপাইগুড়িতে করোনা পরীক্ষা কেন্দ্র তৈরির জন্য সোমবারই রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব জলপাইগুড়ির জেলাশাসককে বিধায়ক তহবিল থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছেন। জিটিএ’র পক্ষ থেকে দার্জিলিংয়ের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তের কাছে আর্জি জানানো হয়েছে করোনার পরীক্ষা কেন্দ্র তৈরির ব্যাপারে আইসিএমআরের অনুমতি আদায়ে উদ্যোগী হওয়ার জন্য।
উত্তর দিনাজপুরের কর্ণজোড়ার একটি বেসরকারি নার্সিংহোম অধিগ্রহণ করে কোভিড-১৯ হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু কোচবিহারে এখনও কোভিড-১৯ হাসপাতালই তৈরি করা সম্ভব হয়নি। কোচবিহারের চকচকায় একটি বেসরকারি নার্সিংহোম অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সেটিকেই কোভিড-১৯ হাসপাতাল হিসাবে চালু করার প্রস্তুতি চলছে। একই পরিস্থিতি আলিপুরদুয়ার কিংবা পাহাড়েও। পর্যটন মন্ত্রী অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, ‘কোচবিহারের কোভিড-১৯ হাসপাতাল ৩-৪ দিনের মধ্যে চালু হয়ে যাবে।’ কিছুদিনের মধ্যেই আলিপুরদুয়ার এবং পাহাড়ের তিস্তাবাজারের কাছে ত্রিবেণীতে কোভিড হাসপাতালও তৈরি হয়ে যাবে বলে পর্যটন মন্ত্রী দাবি করেন। আলিপুরদুয়ারের তপসিখাতায় তৈরি সারি হাসপাতালকেই কোভিড-১৯ হাসপাতাল করার প্রস্তুতি চলছে। রাজ্য সরকারের অনুমান, দেশ জুড়ে আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফেরাতে আরও অন্তত পনেরো দিন সময় লাগবে। তার আগেই সমস্ত পরিকাঠামো তৈরি করে ফেলা সম্ভব হবে।