এ বার দেশ জুড়েই স্বাভাবিক বর্ষার ইঙ্গিত
করোনা সংক্রমণ নিয়ে হাজারো দুশ্চিন্তার মধ্যেই জোড়া সুখবর। সোমবার একেবারে নির্ধারিত দিনেই বর্ষার আগমন হয়েছে কেরালায়। গত বছর বর্ষা পৌঁছেছিল সাত দিন দেরিতে। দ্বিতীয় পর্যায়ের পূর্বাভাসেও মৌসম ভবন জানিয়েছে, এ বছর দেশে স্বাভাবিক বর্ষা হবে। এবং পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হবে দেশ জুড়েই। পশ্চিমবঙ্গেও স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের আশা করছেন আবহবিদরা।
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে সময়ের পাঁচ দিন আগেই আন্দামান সাগরে বর্ষার দৌড় শুরু হয় এ বার। তবে উম্পুন পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের দিকে সরে যাওয়ার পর স্তব্ধ হয়ে যায় মৌসুমি বাতাসের ছড়িয়ে পড়া। আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে বর্ষা ঢোকে ২৭-২৮ মে নাগাদ। আবহবিদরা আশঙ্কা করেছিলেন, কেরালায় বর্ষার বৃষ্টি শুরু হতে হতে ৫ জুন লেগে যাবে। তবে এরই মধ্যে আরব সাগরে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়। যেটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে মহারাষ্ট্র-গুজরাটের দিকে এগিয়ে যাবে। সোমবার সেই নিম্নচাপের হাত ধরেই বর্ষার আগমন হল কেরালায়। আবহবিদরা জানিয়েছেন, গত দু’দিন ধরেই কেরালার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বৃষ্টি হয়েছে। অন্তত ১৪টি আবহাওয়া কেন্দ্রের ৭০ শতাংশ বৃষ্টিপাত পেয়েছে। পূরণ হয়েছে অন্যান্য শর্তও।
স্বাভাবিক ভাবেই এর পরের প্রশ্ন, বাংলায় কবে বর্ষা আসবে? মৌসম ভবনের নতুন নির্ঘণ্ট অনুযায়ী দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা পৌঁছয় ১০ জুন নাগাদ, কলকাতায় ১১ জুন। গত মরসুমে রেকর্ড দেরিতে ২১ জুন বর্ষা ঢোকে কলকাতায়। বাংলাকে বড়সড় বিপদে ফেলেছিল আরব সাগরের ঘূর্ণিঝড় বায়ু। তার প্রভাবে জুনের প্রথম পক্ষে ঝিমিয়েই ছিল বঙ্গোপসাগরের মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ। বর্ষা আসার পরও বৃষ্টি তেমন হয়নি। গোটা জুনে কলকাতা পেয়েছিল মাত্র ৯১ মিলিমিটার বৃষ্টি। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে ঘাটতি দাঁড়ায় ৫৭ শতাংশে। বর্ষা সক্রিয় হয় অগস্টে পৌঁছে।
আবহবিদরা বলছেন, এ বছর ছবিটা তুলনায় ইতিবাচক। আরব সাগরের সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় বঙ্গোপসাগরের মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের উপর খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারবে না। তাছাড়া, জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে মায়ানমার লাগোয়া বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। সেটিই মৌসুমি বাতাসকে ঠেলে ঢুকিয়ে দিতে পারে দক্ষিণবঙ্গে।
শুধু নির্ধারিত সময়ে বর্ষা এলেই চলবে না, দফায় দফায় সক্রিয় হয়ে উঠতে হবে মৌসুমি বাতাসকে। চলতি মরসুমে তেমনই ইঙ্গিত পেয়েছেন আবহবিদরা। তাই মৌসম ভবন জানিয়েছে, দেশে সার্বিক ভাবে ১০২% বৃষ্টি হতে পারে। শতাংশের হিসেবে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি পেতে পারে উত্তর-পশ্চিম ভারত (১০৭%)। দ্বিতীয় ও তৃতীয় মধ্য (১০৩%) ও দক্ষিণ ভারত (১০২%)। একমাত্র উত্তর-পূর্ব ভারতেই (৯৬%) স্বাভাবিকের কাছাকাছি বৃষ্টিপাতের আভাস। দেশের এই অংশেই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। তবে আবহবিদদের বক্তব্য, উত্তর-পূর্ব ভারতের মধ্যে বিহার, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, সিকিমের পাশাপাশি উত্তর-পূর্বের সাত রাজ্যও পড়ে। গত কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে ‘সেভেন সিস্টার্স’-এ স্বাভাবিক বৃষ্টি হচ্ছে না। তাই এ দিনের পূর্বাভাস নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বিচলিত হওয়ার তেমন কারণ নেই। সবচেয়ে বড় কথা, আপাতত যা ইঙ্গিত তাতে দেশে বৃষ্টিপাতের সুষম বণ্টন হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন আবহবিদরা। খরিফ চাষের জন্য যা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। মৌসম ভবন জানিয়েছে, জুলাইয়ে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩% বেশি বৃষ্টি হতে পারে, অগস্টে ৩% কম।
আরও একটি ইতিবাচক দিক রয়েছে। গত কয়েক বছর প্রশান্ত মহাসাগরের উষ্ণ জলতল অর্থাৎ ‘এল নিনো’র প্রভাব পড়েছিল দেশের বর্ষায়। এই মুহূর্তে মহাসাগরের জলের তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। নির্ধারিত অঙ্কের নীচে নেমে গেলেই ‘লা নিনা’ পর্ব শুরু হয়। যা মৌসুমি বাতাসের হাত শক্ত করে। মৌসম ভবন বলেছে, বর্ষার শেষের দিকে দুর্বল লা নিনা পরিস্থিতি শুরু হতে পারে। যা বর্ষাকে জলীয় বাষ্প জুগিয়ে সাহায্য করতে পারে।
স্প্যানিশে এল নিনোর অর্থ, ছোট্ট ছেলে। লা নিনার অর্থ, ছোট্ট মেয়ে। শিশুকন্যার হাত ধরে বর্ষা স্বমেজাজ ধরে রাখতে পারে কি না, সেটাই দেখার।