ভাড়া কয়েকগুণ বেশি, দোসর সংক্রমণের ভয়
বেসরকারি বাস এবং মিনিবাস পথে নামবে না, সে কথা জানা গিয়েছিল রবিবারই। ফলে সোমবার, আনলক ১-এর প্রথম দিন পথে বেরোলে যে অটোর উপরে অনেকটাই নির্ভর করতে হবে আম জনতাকে, তা একপ্রকার অনিবার্য ছিল। হলও তা-ই। কিন্তু সেই সঙ্গে একটি আশঙ্কাও সত্যি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠল। শহর এবং শহরতলির একাধিক অটো রুটে বেলাগাম বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আবার সরকারি নিয়ম ভেঙে দু’জনের পরিবর্তে কোথাও কোথাও চারজন পর্যন্ত যাত্রী তোলার অভিযোগ এসেছে চালকদের বিরুদ্ধে। এবং সেটি বাড়তি ভাড়ার নিয়েই। অর্থাৎ ভাড়া বেশি পড়ল, সামাজিক দূরত্বের বিধিও লঙ্ঘিত হল। ঘটনা হল, এত কিছু সত্ত্বেও সোমবার দিনভর যাত্রীদের সঙ্গে চালকদের বড়সড় কোনও গোলমালের খবর নেই। ফলে ধরে নেওয়া যায়, বাড়তি ভাড়া দিয়ে এবং দু’জনের বেশি অটোয় সওয়ার হওয়া নিয়ে যাত্রীদেরও অনেকের কোনও আপত্তি ছিল না।
গড়িয়াহাট থেকে রামলাল বাজারের দিকে যাত্রা শুরুর সময় অটোচালকের গ্লাভস, মাস্ক ছিল। অটোয় দু’জন যাত্রী ছিলেন। তা দেখে নিশ্চিন্ত হয়ে ছেড়ে দেন কর্তবরত ট্র্যাফিক সার্জেন্টও। কিন্তু বিজন সেতু থেকে নেমে ডান দিকে ঘুরে চালক সব ভুললেন। আরও দু’জন যাত্রীকে তুলে নিলেন। আপত্তি করলেন না অন্য দু’জন। যাত্রীসংখ্যা দুই থেকে চার হতেই মাথাপিছু ২৪ টাকার ভাড়া নেমে গিয়েছে ১৫ টাকায়। অথচ, সাধারণ সময়ে এই ভাড়া ১০ টাকা। মোটামুটি এটিই ছিল কলকাতা এবং শহরতলির সোমবারের অটো-চিত্র।
৭০ দিন বন্ধ থাকার পরে অটো চালু হতেই এ ধরনের অভিযোগ প্রসঙ্গে সাউথ কলকাতা ডিস্ট্রিক্ট অটোরিকশা ড্রাইভার্স অ্যান্ড অপারেটর্স ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি দেবরাজ ঘোষের বক্তব্য, ‘দু’মাস সকলে ঘরে বসে। এর উপরে সরকারি নিয়মে দু’জনের বেশি যাত্রী তোলা যাচ্ছে না। আমাদের তেল তো কম পুড়ছে না। ভাড়া তো কিছুটা বাড়াতেই হবে।’ অতিরিক্ত যাত্রী তোলার অভিযোগটি তিনি খারিজ করেছেন। বলেছেন, ‘কলকাতায় ১২৫টি অটো-রুট রয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ কলকাতাতেই ৫৫টি রুট। অধিকাংশই রাজপথ দিয়ে। অতিরিক্ত যাত্রী তোলার সুযোগ নেই বললেই চলে।’ সমর্থন করছেন উত্তর কলকাতার অটোরিকশা ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত অশোক চক্রবর্তী— ‘সরকারি নিয়ম মেনেই অটো চলেছে। অতিরিক্ত যাত্রী নিলে জরিমানার নির্দেশ আছে।’
তবে যাত্রীরা বলছেন অন্য কথা। এয়ারপোর্ট ১ নম্বর থেকে নাগেরবাজার ২৫ টাকা, কৈখালি ২০ টাকা এবং বাগুইআটি ৩০ টাকা ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ এসেছে যাত্রীদের থেকে। নারকেলডাঙা মেন রোড থেকে কেশব সেন স্ট্রিট ধরে কাজে যান অলোক গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, ‘জানি এ ভাবে চারজনে ওঠা এখন উচিত নয়। কিন্তু দু’মাস রোজগার নেই। একটাকাও এখন মূল্যবান।’ বিধাননগর থেকে লেকটাউন অটোর নিত্যযাত্রী বাগবাজারের বাসিন্দা সোমনাথ মাইতির কথায়, ‘করোনার ভয় আছে। কিন্তু পকেট খালি। দুই যাত্রী নিয়ে অটো চললে আমাদের মতো মানুষের তো অটোয় চড়াই হবে না।’ আর অটোচালকদের কয়েকজন তো বলেই দিচ্ছেন, ‘চারজনের ভাড়া যত হয়, আমরা সেটাই নেব। সেটা দিলে একজন যাত্রী নিয়েও চালাব।’