বন্ধ হতে পারে দেশের ৩৫% এমএসএমই
টানা দু’মাসের বেশি সারা দেশে লকডাউন চলার পর ভারতের অর্থনীতিকে দ্রুত স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে গতকাল সোমবার থেকে কনটেনমেন্ট এলাকা বাদে সর্বত্র চালু হয়েছে ‘আনলক-১’। কিন্তু, তাতেও করোনা-লকডাউনের সুদূরপ্রসারী প্রভাব থেকে বাঁচার কোনও সম্ভাবনা না দেখতে পেয়ে দেশের প্রায় ৩৫ শতাংশ অতি ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি সংস্থা তাদের ব্যবসা বন্ধ করা শুরু করেছে বলে অল ইন্ডিয়া ম্যানুফ্যাকচারার্স অর্গানাইজেশন (এআইএমও)-এর করা এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে। পাশাপাশি, ছোট ব্যবসায়ীদের মধ্যে ৩৭ শতাংশ তাঁদের নিজেদের ব্যবসার পাততাড়ি গোটাতে শুরু করেছেন।
এআইএমও জানিয়েছে, সরকারের আর্থিক প্যাকেজ এমএসএমই-দের কাছে পৌঁছয়নি এবং একই সঙ্গে লকডাউন সময়কালে তাদের ব্যবসার যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণে ওই প্যাকেজ পর্যাপ্ত নয়। সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘গণ হারে ব্যবসার যে ধ্বংস হয়েছে, তা নজিরবিহীন।’
করোনা মোকাবিলায় গত ২৫ মার্চ থেকে সারা দেশে লকডাউন চালু করে কেন্দ্র। এর ফলে ভারতের সর্বত্র অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড একেবারে স্তব্ধ হয়ে যায়। গত ২১ এপ্রিল থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে অর্থনীতি ফের খোলার কাজ শুরু হয়েছে। আর গত শনিবার কেন্দ্র যে নয়া নির্দেশাবলি জারি করেছে, তাতে ১ জুন থেকে দেশের অধিকাংশ এলাকায় প্রায় স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কাজকর্মকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এআইএমও যে সমীক্ষা চালিয়েছে, তার রিপোর্ট চলতি সপ্তাহে তিনটি অংশে প্রকাশিত হবে, যার মধ্যে প্রথম অংশটি প্রকাশ্যে এসেছে। শিল্প ও বাণিজ্য ক্ষেত্রের বিভিন্ন সংগঠন এবং শিল্পের বিভিন্ন গোষ্ঠীর কাছ থেকে পাওয়া ৪৬,০০০-এরও বেশি উত্তরের উপর সমীক্ষা রিপোর্টটি তৈরি করা হয়েছে।
যে সমস্ত এমএসএমই সমীক্ষায় অংশ নিয়েছিল, তাদের মধ্যে ৩২ শতাংশ জানিয়েছে, ক্ষতি সামলে উঠতে তাদের ৬ মাস সময় লাগবে এবং আর বাকি ১২ শতাংশের হিসেবে ৩ মাসেই অবস্থা সামলে নেওয়া যাবে।
এআইএমও-র সদ্য প্রাক্তন সভাপতি কে ই রঘুনাথন বলেন, ‘ভারতে সাড়ে ৬ কোটিরও বেশি এমএসএমই সংস্থা রয়েছে এবং সব মিলিয়ে এই ক্ষেত্রে কাজ করেন প্রায় ১৫ কোটি মানুষ। পাশাপাশি, ১৩ কোটিরও বেশি মানুষ উপার্জনের জন্য স্বনির্ভর। স্বাধীনতার পর থেকে ভারতে গণ হারে ব্যবসার এই ধ্বংস হওয়া কখনও ঘটেনি।’
কর্পোরেট সংস্থাগুলির মতে, লকডাউনের জন্য তাদের ব্যবসার অবশ্যই ক্ষতি হয়েছে এবং ৪৬ শতাংশ মনে করে পুরোপুরি তাদের ব্যবসা স্বাভাবিক হতে ৩ মাস সময় লাগবে। যদিও ২৬ শতাংশের ধারণা, তাদের ব্যবসা স্বাভাবিক হতে চলতি বছরের বাকি সময়টা লেগে যাবে। লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি এমন সংস্থার সংখ্যা সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মাত্র ৬ শতাংশ। তারা প্রত্যেকেই অবশ্য অত্যাবশ্যকীয় ক্ষেত্রে ব্যবসা করে থাকে।
এআইএমও সাধারণ সম্পাদক কেনি রামানন্দের মন্তব্য, ‘এমএসএমই ক্ষেত্রে শুধুমাত্র প্রচুর সংস্থা বন্ধ হবে না, বিপুল সংখ্যক কর্মীও তাঁদের কাজ হারাবেন। পাশাপাশি, যে সমস্ত এমএসএমই সংস্থা টিকে থাকবে, তারা তাদের মূল ব্যবসা ক্ষেত্রকে অগ্রাধিকার দিয়ে অন্যান্য দিকে ব্যবসা কমাবে।’
দেশের এমএসএমই ক্ষেত্রকে সাহায্য করতে গত মাসে কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে, যার মধ্যে রয়েছে কোনও রকম বন্ধক ছাড়া ৩ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ এবং একটি তহবিল যা ছোট ব্যবসাগুলিকে ৫০,০০০ কোটি টাকা ইক্যুইটি জোগাবে বলে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ঘোষণা করেছেন।