পরিযায়ী ফেরানোর সিদ্ধান্ত দেরিতে, কেন্দ্রকে বিঁধল টাস্ক ফোর্সের রিপোর্ট
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেনই, এ বার এই কথা বলছেন দেশের তাবড় জনস্বাস্থ্য-এপিডেমিয়োলজি বিশেষজ্ঞরাও। ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অফ এপিডেমিয়োলজি, ইন্ডিয়ান পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন এবং ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অফ প্রিভেনটিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিনের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত টাস্ক ফোর্স তাঁদের যে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন কেন্দ্রের কাছে, তাতে বলা হয়েছে, ভাইরাস এতটা ছড়িয়ে যাওয়ার আগেই পরিযায়ীদের ঘরে ফেরানো হলে এতটা বিপদ হত না দেশজুড়ে। ঘটনা হল, টাস্ক ফোর্সের এই বক্তব্য যখন প্রকাশ্যে এল তখন, যখন দেশের করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দু’ লাখ পেরোচ্ছে আর বাংলায় একদিনে মিলল সর্বোচ্চ (৩৯৬ জন) করোনা-আক্রান্তের খোঁজ।
লকডাউন শিথিল হওয়ার মুখে পরিযায়ী শ্রমিকদের ‘ঘর ওয়াপসি’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল যে সমস্ত রাজ্য, পশ্চিমবঙ্গ তাদের মধ্যে অন্যতম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়িতে ফিরে আসা সমর্থন করলেও তাঁদের ঘরে ফেরানোর জন্য কেন্দ্র যে সময় বেছে নিয়েছে, তার বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, পরিযায়ী শ্রমিকেরা লকডাউনের সময়টা অত্যন্ত কষ্টে আধপেটা খেয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাটিয়েছেন। করোনায় সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা তাঁদের যে বেশি, সে আশঙ্কাও প্রকাশ করেছিলেন তিনি। মে মাসের মাঝামাঝি থেকে এ পর্যন্ত ৬ লক্ষেরও বেশি পরিযায়ী ফিরেছেন বাংলায়। আর পরিযায়ী নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর আশঙ্কা যে অমূলক ছিল না গত কয়েক সপ্তাহে রাজ্যের করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রমাণ দিয়েছে তার। প্রতিদিন গড়ে ৩০০ জন করে করোনা আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে গত এক সপ্তাহে। স্বাস্থ্যদপ্তরের অন্দরের হিসেব বলছে এ যাবৎ দেড় হাজারেরও বেশি করোনা আক্রান্ত পরিযায়ী শ্রমিকের খোঁজ মিলেছে রাজ্যে। যদিও এই সংখ্যাটাকে হিমশৈলের চূড়া বলেই মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। কারণ, এখনও পর্যন্ত ঘরে ফেরা পরিযায়ীদের মধ্যে শুধুমাত্র করোনার উপসর্গ থাকা ব্যক্তিদের ক্ষুদ্র একটি অংশেরই টেস্টের রিপোর্ট হাতে এসেছে স্বাস্থ্য দপ্তরের। দপ্তরের এক কর্তার কথায়, ‘বড় একটা সংখ্যার টেস্টের রিপোর্ট আসা এখনও বাকি। তার উপর রয়েছে উপসর্গহীন পরিযায়ীরাও।’
করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তেই ফলে, আন-লকডাউন পরিস্থিতিতেও হুহু করে বেড়েছে রাজ্যের কনটেনমেন্ট জোনের সংখ্যাও। মঙ্গলবার সন্ধ্যার খবর বলছে, রাজ্যে ৮২০-রও বেশি কনটেনমেন্ট জোন রয়েছে। মঙ্গলবারই কলকাতায় একধাক্কায় ১১৬ জন করোনা আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে, যা এ যাবৎ সর্বোচ্চ।