৩০ লক্ষ অ্যাকাউন্টে সরাসরি অর্থ
করোনার চলতে থাকা তাণ্ডবের মধ্যেও আম্পানের ক্ষত মেরামতে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর কথা আগেই ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার প্রায় ৩০ লক্ষ ক্ষতিগ্রস্তের অ্যাকাউন্টে সরকারি তরফে সরাসরি চলে গেল আর্থিক সাহায্যও। এর মধ্যে যেমন রয়েছেন ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া লাখ পাঁচেক মানুষ, তেমনই রয়েছেন ২৫ লক্ষ ৩০ হাজার কৃষকও, যার মধ্যে আছেন দু’ লক্ষ পানচাষিও। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ কথা টুইট করে ঘোষণা করেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীই। তিনি জানান, প্রাথমিক ভাবে ১৩৫০ কোটি টাকার আনুমানিক বাজেট করা হলেও এই বাবদ তাঁর সরকার ইতিমধ্যেই ১৪৪৪ কোটি টাকা খরচ করেছে।
বর্তমানে যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চলছে করোনা ও আম্পানের জোড়া আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়, সে কথাও টুইটে এদিন স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যদিও শত সমস্যা সত্ত্বেও যে তাঁর সরকার ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে কার্পণ্য করছে না, সে কথাও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। সে জন্যই উম্পুনের কয়েক দিনের মাথাতেই ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের জন্য নবান্ন ৬২৫০ কোটি টাকার তহবিল গড়ে। মুখ্যমন্ত্রী টুইটে জানান, অত্যন্ত খুশির সঙ্গে তিনি জানাচ্ছেন যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার পাঁচ লক্ষ মানুষকে ঘরবাড়ি মেরামতির জন্য তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করেছে, দু’ লক্ষ পানচাষি ছাড়াও আরও ২৩.৩ লক্ষ কৃষককেও অর্থসাহায্য করছে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে।
ফলে আম্পানের জেরে একসময়ে মাথায় হাত পড়লেও এখন কিছুটা নিশ্চিন্তবোধ করছেন চাষিরা। যেমন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের ভাণ্ডারবাটি গ্রামের গোলাম জিকারি। রাজ্যের শস্যভাণ্ডার বর্ধমানের এই মানুষটি সম্পন্ন কৃষিজীবী। পারিবারিক ভাবে প্রায় ২৫ বিঘা জমি তাঁদের। কিন্তু বরো ধানের অনেকটাই নষ্ট হয়েছে ঝড়-বৃষ্টির দাপটে। গোলামের তাই আক্ষেপ, ‘লকডাউনে ধান কাটার মজুরের বড় অভাব। তাও বেশি মজুরি দিয়ে লোক জোগাড় করে মাত্র পাঁচ-ছ’ বিঘের ধান কাটাতে পেরেছিলাম। কুড়ি বিঘের ধান ঝড়েই নষ্ট হল। জমি হাঁটু জলে ডুবে। খুব ক্ষতি হয়ে গেল।’
এখন শত হতাশার মধ্যেও খানিক আশার আলো দেখছেন গোলাম। কারণ, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা। নবান্ন সূত্রের খবর, জেলাওয়াড়ি কৃষি দপ্তরের প্রাথমিক বরাদ্দের হিসাবে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা পাচ্ছে যথাক্রমে ২৬ ও ২৭ কোটি, হুগলি ২৩ কোটি, পশ্চিম ও পূর্ব মেদিনীপুর ১৪ ও ১০ কোটি, হাওড়া ৫ কোটি, নদিয়া ১৭ কোটি এবং ঝাড়গ্রাম ৮ কোটি টাকা। এই প্রকল্পে এক একর জমি পর্যন্ত কৃষিজীবীদের মাথাপিছু আর্থিক সহায়তা মেলে বছরে পাঁচ হাজার টাকা। দু’ কিস্তিতে খরিফ ও রবি মরসুমে এই সাহায্য দেয় রাজ্য সরকার।
আম্পানের পরই নবান্ন সিদ্ধান্ত নেয়, দ্রুততার সঙ্গে আর্থিক সহায়তা কৃষকদের পৌঁছে দিতে হবে। কালবিলম্ব না করে রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্কে কৃষকবন্ধু প্রকল্পে যে উদ্বৃত্ত অর্থ ছিল, তা থেকেই কৃষকদের সাহায্য দেওয়া শুরু করে নবান্ন। জেলাগুলির উপ-কৃষি অধিকর্তারা রয়েছেন এই সহায়তা বণ্টনের দায়িত্বে। মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘১৫০ কোটি টাকার এই বরাদ্দ প্রাথমিক সহায়তা। কৃষকবন্ধু খাতেই আরও সহায়তা দেওয়া হবে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলিতে মৌজা ধরে কোথায় কত কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত, তার খতিয়ান নিচ্ছি। কাজ চলছে যুদ্ধকালীন গতিতে। যাতে দ্রুত প্রত্যেকের কাছে আমরা পৌঁছতে পারি।’ নবান্ন সূত্রে খবর, বিভিন্ন জেলা থেকে ক্ষয়ক্ষতির আরও যে হিসাব আসছে তাতে সরকারের কোষাগার থেকে সহায়তা খাতে আরও বেশ কয়েক কোটি টাকা খরচ হবে।