পরিবেশ দূষণ ও গাছের ভূমিকা
পরিবেশ দূষণের কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে এবং নাতিশীতোষ্ণ দেশগুলি ক্রমে চরমভাবাপন্ন দেশে পরিণত হচ্ছে। ভারসাম্যহীন পরিবেশের জন্য ঝড়, ঘূর্ণিঝড়, নিম্নচাপ, সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস, খরা, তাপপ্রবাহ, অনাবৃষ্টি, অসময়ে বৃষ্টি, শিলা বৃষ্টি, বন্যা, ধস, শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশার সৃষ্টি হচ্ছে।
বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশে প্রতি বছর সুনামি, আয়লার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টি হওয়ায় ঘরবাড়ি, গাছপালা, মানুষ, গবাদিপশু, বন্যপ্রাণী, জলজপ্রাণী, মাঠের ফসল, পুকুর, বাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
নির্বিচারে গাছ কাটা এবং প্রাণী শিকারের কারণে বিভিন্ন জাতের উদ্ভিদ ও পশুপাখি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। অতি সাধারণ প্রাণী, যেমন- শিয়াল, বেজি, খরগোশ, কাঠবিড়ালি, বানর, হনুমান, চিল, শকুন, ডাহুক, বাবুই সহ আরও অনেক পশুপাখি আগের থেকে অনেক কমে এসেছে।
তাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে গাছ বাঁচাতে এই পদক্ষেপগুলি নেওয়া জরুরীঃ
১. সড়কপথ, রেলপথের দু-ধার, পাহাড়, টিলা, উপকূলীয় বিস্তীর্ণ এলাকা, নদ-নদী, খাল-বিলের পাড়, বাঁধ, বেড়িবাঁধ, হাটবাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বসতবাড়ির আশপাশে ফাঁকা জায়গায় প্রচুর পরিমাণে ফলদবৃক্ষ, ইত্যাদি রোপণ করে বাগান ও সামাজিক বনায়ন সৃষ্টি করতে হবে।
২. নির্বিচারে গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে।
৩. কাঠের ফার্নিচারের বিকল্প হিসেবে প্লাস্টিক, লোহা ও স্টিলের তৈরি ফার্নিচার ব্যবহার করতে হবে। খড়ির বিকল্প হিসেবে চারকোল, গ্যাস, কয়লা ও ঘুটের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে।
৪. যানবাহনে সীসামুক্ত জ্বালানি ও সিএনজি ব্যবহার করতে হবে। শিল্পকারখানা এবং ইটভাটার চিমনি অনেক উঁচু করে তৈরি ও ধোঁয়া নির্গমণ হ্রাস করতে হবে। বিষাক্ত বর্জ্য ও ক্ষতিকারক গ্যাস নির্গমণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
৫. শিল্পকারখানার বর্জ্য খাল, বিল ও নদীতে না ফেলে ইটিপি স্থাপনের মাধ্যমে শোধন করতে হবে। বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনের মাধ্যমে ডাস্টবিনের ময়লা-আর্বজনা এবং জৈব বর্জ্য দ্বারা বায়োগ্যাস, বিদ্যুৎ ও জৈব সার উৎপাদন করতে হবে। বায়োটেকনোলজি প্রযুক্তির সাহায্যে সুপার ফাঙ্কশানাল ব্যাকটেরিয়া উৎপাদন করে বর্জ্য বা আবর্জনাকে দ্রুত পচনশীল করার মাধ্যমে সার্বিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে উন্নত করতে হবে।
৬. উপকূলীয় অঞ্চলের বাঁধ, বেড়িবাঁধ, স্লুইস গেট এবং অন্যান্য স্থাপনাগুলো মজবুত করে তৈরি করতে হবে যেন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
৭. কৃষি গবেষণার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার ফসলের শীত, তাপ, বন্যা ও লবণসহিষ্ণু নতুন জাত উদ্ভাবন এবং কীটনাশক ও আগাছানাশকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পাশাপাশি জৈব কৃষির ওপর বেশি জোর দিতে হবে।
৮. পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা ও বিস্ফোরণ ঘটানো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
৯. নিয়মিত এয়ার মনিটারিং এর মাধ্যমে বায়ুদূষণের উপাদানগুলোর পরিমাণ নির্ণয় করতে হবে।
১০. বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য শিল্পোন্নত দেশগুলোই বেশি দায়ী। তাই ক্ষতিপূরণ হিসেবে এ দেশগুলোর ওপর গ্রিনট্যাক্স, কার্বনট্যাক্স কার্যকর করে একটি অর্থ তহবিল গঠনের মাধ্যমে বিশ্ব পরিবেশ উন্নয়নে ওই অর্থ দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে দিতে হবে।