শাহের ফেসবুক সভা নিয়ে সক্রিয় রাজ্য বিজেপি
রাজ্য বিজেপির উদ্যোগে বড় ধরনের জনসভা। সেখানে প্রধান বক্তা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনিই মূল আকর্ষণ। তা ছাড়া, বক্তৃতা দেবেন দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়, রাহুল সিনহারা। জনসভা হবে আগামী মঙ্গলবার, ৯ জুন। জনসভার ভিড় যাতে কোনও ভাবেই কম না-হয়, সেই জন্য রাজ্য বিজেপির নেতারা এখন খুব ব্যস্ত।
করোনা ও লকডাউনে জনসভা? তা হলে কোথায় যাবে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং, স্বাস্থ্যবিধি? সত্যিই এমন জনসভা এখন হওয়া সম্ভব?
সম্ভব। কারণ, এটা ভার্চুয়াল জনসভা।
দিল্লির সদর দপ্তরে বসে অমিত শাহ বক্তৃতা দেবেন। আর সেই বক্তৃতা ‘লাইভ’ হবে ফেসবুক ও ইউটিউবে। তা হলে সভার আগে ‘জন’ শব্দটা বসানো কতটা যুক্তিযুক্ত? এতে কোনও ভুল নেই। কারণ, ফেসবুক ও ইউটিউবে ওই সভা কত জন দেখলেন অর্থাৎ কত ‘ভিউ’ হল, সেই তথ্য টাটকা পাওয়া যাবে। সেই সংখ্যা দিয়েই বিচার করা হবে, জনসভায় কত জন যোগ দিয়েছেন।
বিজেপির রাজ্য নেতারা বলছেন, ব্রিগেডে সভা আয়োজন করার চেয়ে ‘ভার্চুয়াল’ জনসভার আয়োজনে ঝক্কি কিছু কম না। কারণ, ভার্চুয়াল জনসভায় কত জন অংশ নিচ্ছেন, তার খুঁটিনাটি হিসেব সবার চোখের সামনেই থাকবে।
বিজেপির এক রাজ্য নেতার কথায়, ‘সব দলই কোনও বড় জনসভার শেষে ভিড়ের পরিমাণ কিছুটা বাড়িয়ে দাবি করে। এ ক্ষেত্রে কিন্তু জল মেশানোর জো নেই।’ রাজ্যের সাধারণ মানুষকে এই সভার কথা জানাতে বিজেপি কোমর বেঁধে প্রচারে নেমে পড়েছে। দলীয় সূত্রের খবর, সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে ওই সভার বিজ্ঞাপনও দেবে বিজেপি।
ওই জনসভা ৯ তারিখ শুরু হবে বেলা ১১টায়। যেহেতু রাজ্য বিজেপির উদ্যোগে এই কর্মসূচি, তাই অমিত শাহ বলবেন কেবল বাংলার কথা মাথায় রেখেই। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, ব্রিগেডে বা ধর্মতলায় কোনও সভা হলে অমিত শাহ যে ভাবে বাংলা কেন্দ্রিক বক্তৃতা দিতেন, অনুষ্ঠেয় ভার্চুয়াল সভার ক্ষেত্রেও তাই করবেন।
করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউনের কারণে সব রাজনৈতিক দলই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। লকডাউনে বাম-ডান সব দল সাংবাদিক বৈঠকের জন্য অনেকাংশে বেছে নিয়েছে ফেসবুককে। এমনকী, দলের অভ্যন্তরীণ বৈঠকও ভিডিয়ো কনফারেন্সে সেরেছে তৃণমূল, বিজেপি-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। তবে বাংলায় ‘ভার্চুয়াল জনসভা’ করার নজির এই রাজ্যে প্রথম বিজেপি-ই গড়তে চলেছে।
তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা ও রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘ফেসবুকে মুখ দেখিয়ে নয়, আমারা কাজের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছি। ঘরবাড়ি ও রাস্তার পুনর্নির্মাণ করে, মানুষকে সুস্থ করে, মানুষকে খাবার দিয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছি। ফেসবুক ও ইউটিউবের মাধ্যমে বক্তৃতা করে, তার ভিউ কত হচ্ছে, সে সব হিসেব করে কেউ কেউ আত্মসন্তুষ্ট হতে পারেন। তবে আমাদের কাছে ও সব মূল্যহীন।’
‘ভার্চুয়াল সভা’ হলেও বাস্তবে ওই দিন বিজেপির রাজ্য দপ্তরে সভামঞ্চ থাকবে। সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে হাজির থাকবেন দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়, রাহুল সিনহারা, পাশে একটি টিভি স্ক্রিন রাখা থাকবে, ইউটিইউব বা ফেসবুকে অমিত শাহের বক্তৃতা শোনার জন্য। রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুর কথায়, ‘সব কিছু জনসভার মতোই হবে। অমিতজি অনলাইনে আসার আগে আমরা অমিত শাহ স্বাগতম ধ্বনিও তুলব। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তৃতার আগে আমাদের রাজ্য নেতারা বক্তৃতা দেবেন।’
বাংলায় ওই সভার কয়েক দিন আগে বিহার বিজেপিও অমিত শাহর ভার্চুয়াল জনসভার আয়োজন করেছে। রাজ্য বিজেপির লক্ষ্য, ওই সভায় অন্তত পাঁচ লক্ষ মানুষের ‘জমায়েত’ করানো। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘রাজ্যের প্রতিটি মণ্ডল কমিটিতে নির্দেশ গিয়েছে, নিজেদের মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ বানিয়ে সভা শুনতে হবে। পার্টিরই ২ লক্ষের বেশি কর্মী অমিত শাহের সভা লাইভ শুনবেন।’
রাজ্য বিজেপির পদাধিকারীদের কমিটিতে নতুন যাঁদের নেওয়া হয়েছে, এই সভা সফল করার জন্য তাঁদের উপরেও বেশ কিছু দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দলের তৃণমূল স্তরের মহিলা কর্মীদের কাছে অমিতের সভা সম্পর্কে প্রচারের ভার বর্তেছে নতুন রাজ্য সম্পাদক, মহিলা মোর্চার পরিচিত মুখ সংঘমিত্রা চৌধুরীর উপর।
তৃণমূল তো বটেই, বাম-কংগ্রেসও কেন এ রকম সভার বন্দোবস্ত এখনও করতে পারল না? সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের জবাব, ‘বিজেপি যা করছে, আমাদেরও তাই করতে হবে নাকি! তবে আমরাও পার্টির কাজে সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করছি।’ কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘বিজেপি অলীক স্বপ্ন দেখছে। ওদের ওই জনসভা কোনও ভাবেই সফল হবে না।’