সংক্রমণ এড়ানোর দায় স্বাস্থ্যকর্মীর সুপ্রিম কোর্টে বলল কেন্দ্রীয় সরকার
বৃহস্পতিবারের পরিসংখ্যান বলছে, চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মী মিলিয়ে দিল্লি এইমসে এখনও পর্যন্ত নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৪৮০ জন! বেশ কয়েকজনের মৃত্যুও হয়েছে। দেশের অন্য জায়গাগুলির ছবিও খুব একটা আলাদা নয়। এমনই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক শীর্ষ আদালতকে জানাল, চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীরা সংক্রমণের হাত থেকে কী ভাবে নিজেদের রক্ষা করবেন, তার দায়িত্ব তাঁদেরই নিতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টে পেশ করা হলফনামায় মন্ত্রক বলেছে, ‘সংক্রমণ কী ভাবে প্রতিহত করতে হবে তার চূড়ান্ত দায়িত্ব স্বাস্থ্যকর্মীদেরই৷ চিকিৎসার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর্মীরাই সামনে থাকেন, ফলে তাঁদের সংক্রমণের আশঙ্কাও থাকে৷ ফলে, নিজেকে যথাযথভাবে প্রশিক্ষিত করে তোলা তাঁদের কর্তব্য৷’ কেন্দ্রের আরও বক্তব্য, ‘সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যাবলী পরিচালনার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ কমিটির হাতে থাকে৷ কিন্তু, এক্ষেত্রে সংক্রমণ প্রতিহত করার চূড়ান্ত দায়িত্ব চিকিৎসাকর্মীদেরই৷’ করোনা পরিস্থিতিতে চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত মানুষের স্বাস্থ্য-শঙ্কা নিয়ে উদয়পুরের চিকিৎসক আরুশি জৈনের করা জনস্বার্থ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এই হলফনামা দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক৷
কেন্দ্রের এমন হলফনামার পরেই প্রশ্ন উঠছে, এতদিন ধরে যাঁদের ‘প্রথম সারির করোনা যোদ্ধা’ বলে অভিনন্দন জানানো হল, তাঁদের সুস্থ রাখার দায়িত্ব কি সরকার নিজের হাতে রাখতে চাইছে না? বিশেষ করে এমন সময়ে যখন দেশে সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এমন অবস্থানের তীব্র সমালোচনা করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ ও ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি শান্তনু সেন৷ তাঁর কথায়, ‘চিকিৎসাকর্মীদের সম্মান জানানোর জন্য ক’দিন আগে থালা-বাটি বাজানো হল, মোমবাতি জ্বালানো হল, এমনকী কোটি কোটি টাকা খরচ করে আকাশ থেকে ফুলও ফেলা হল! তা হলে সেই সবের অর্থ কী? এ দিনের হলফনামার অর্থ হল, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা কোটি কোটি করোনা-যোদ্ধার নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে সরকার রাজি নয়৷ উল্টে সেই দায়িত্ব তাঁদেরই ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হল।’ একই সঙ্গে তৃণমূল নেতার বক্তব্য, ‘মোদী সরকারের কাছ থেকে এর বেশি কিছু আশা করাও অন্যায়, কারণ এরা তো এমন ভয়ানক রোগের সঙ্গে লড়াই করার জন্য চিকিৎসাকর্মীদের পর্যাপ্ত সংখ্যায় পিপিই পর্যন্ত দেয়নি৷ ১৪৫ শতাংশ বেশি দাম দিয়ে ‘বন্ধু’ দেশ চিন থেকে ত্রুটিপূর্ণ কিট কিনে এনেছে, সেই দেশই এখন আমাদের ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করছে৷ এর থেকে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’
কেন্দ্রের এমন আচরণকে দায়িত্বজ্ঞানহীন বলেছেন কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী। তাঁর কথায়, ‘লজ্জাজনক শব্দটা ব্যবহার করার পরে মনে হচ্ছে আরও কঠোর কোনও শব্দ থাকলে ভালো হত৷ করোনা-যোদ্ধাদের পিপিই দিতে পারেনি এই সরকার। জীবনের মায়া না করেই লড়াই চালাচ্ছেন তাঁরা। এর পরেও বলা হচ্ছে, নিজেদের মতো করে বাঁচো, মরো৷’
উল্লেখ্য, মন্ত্রকের তরফে এ দিন আদালতে দাবি করা হয়েছে, রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির সঙ্গে যৌথ ভাবে স্বাস্থ্যকর্মীদের সংক্রমণ প্রতিরোধ করার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, তাতেই কি যাবতীয় দায়িত্ব সারা হয়ে যায়? সে প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে।