দক্ষিণবঙ্গ বিভাগে ফিরে যান

কোটালের আগেই প্লাবিত গ্রাম

June 5, 2020 | 2 min read

যা শঙ্কা ছিল, তা-ই সত্যি হল। পূর্ণিমার কোটালের দু’দিন আগেই ভেসে গেল নির্মীয়মান নদীবাঁধ। আম্পানের পুর ফের জলে ডুবল হাসনাবাদের নদীবাঁধ ভেঙে প্লাবিত বেশ কিছু এলাকা। হাসনাবাদের বিডিও অরিন্দম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘এনআরইজিএস প্রকল্পের পাশাপাশি সেচ দপ্তরের উদ্যোগে ঝড়ের পর থেকেই বাঁধ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। ব্লকের ৭৪ টি পয়েন্টে নদীর বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তার মধ্য জোয়ারের জলের চাপে তিনটি জায়গায় বাঁধ মেরামতির কাজের মধ্যেই তা ভেঙে গ্রামে জল ঢুকতে শুরু করেছে। ফের বাঁধ বাঁধার চেষ্টা চলছে। বৃহস্পতিবার বসিরহাট মহকুমার সন্দেশখালিতে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের কাজ খতিয়ে দেখতে এসেছিলেন সেচমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। হাসনাবাদের ভাঙা বাঁধের কাজের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সমস্যার কথা শোনা গিয়েছে খোদ মন্ত্রীর গলায়। যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঠিক সময় মত বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু না হওয়াতেই জোয়ারের জল ঢুকে পড়ল গ্রামে।

আম্পানের তাণ্ডবে হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালির ভেঙে যাওয়া বিভিন্ন নদীবাঁধ মেরামতির কাজ চলছিলই। হাসনাবাদের পাটলিখানপুর পঞ্চায়েতের পাশ গিয়ে বয়ে যাওয়া ডাঁসা নদীর বাঁধ ভাঙে টিয়ামারী ও টিলেতে। নদীর উল্টোপারে শুলকুনী মুক্তারচকেও বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় গ্রাম। অন্যান্য জায়গার মতো এই তিন গ্রামেও নদীর বাঁধ মেরামতির কাজ চলছিল। সামনেই পূর্ণিমার কোটাল। তাতে কী হবে, সেই ভেবে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ চলছিল। কিন্তু পূর্ণিমার কোটাল আসার আগেই জোয়ারের জলের তোড়ে এইতিন গ্রামের নির্মীয়মান বাঁধ ভেঙে পড়ল। হু হু করে জল ঢুকতে শুরু করল গ্রামে।

জলে ডুবল হাসনাবাদের নদীবাঁধ প্রতীকী চিত্র

আম্পানের পর পাটলিখানপুরের ১৬ বুথের মধ্যে ১৩টি-ই জলমগ্ন ছিল। তবে জলের উচ্চতা অনেকটাই নেমেছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার জোয়ারের জলে ফের নতুন করে প্লাবিত এল এই এলাকা। এ দিন পাকা রাস্তার উপর দিয়ে জলের স্রোত বয়ে যেতে দেখা যায়। খানিক বাদেই কোথাও কোমর সমান, কোথাও তারও বেশি জল উঠে যায়। পাটলিখানপুর পঞ্চায়েতে খাঁপুকুর, বেলিয়াডাঙা, ঘুনি, খলসিখালি, পাটলি গ্রামের মানুষ ত্রাণ নেওয়ার জন্য উঁচু রাস্তাতেও এক হাঁটু জলে দাঁড়িয়েছিলেন।

খাঁপুকুরের বাসিন্দা মধু সরখেল বললেন, ‘আমারা তো মরেই আছি। এ বার যে জল ঢুকছে তাতে আমরা ভেসে যাব। আমরা ঝড়ের পর থেকে নদীর বাঁধের উপর কাটাচ্ছিলাম। সকালে কাগজপত্র নিয়ে স্কুলে সরকারি বাবুদের দেখাতে গিয়েছিলাম। এখন এত জল ঢুকেছে যে আর বাঁধের কাছে ফিরতে পারছি না। শুনলাম আবার নাকি বাঁধ ভেঙেছে।’ মধুর পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন গোপাল সামন্ত। গোবাল বললেন, ‘দেখুন জোয়ারের জলের স্রোত কেমন বেড়ে গিয়েছে। যখন বাঁধের ভাঙন ছোট ছিল, তখন সারায়নি। এখন ভাঙন বেড়েছে, তাই আর মেরামত করে উঠতে পারল না।’ একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন কবিতা বিশ্বাস। কবিতার চোখে মুখে ভয় গ্রাস করেছে। একরাশ চিন্তা নিয়ে কবিতা বলে উঠলে, ‘এখনই যদি এত জল হয়, শনিবারের পূর্ণিমার কোটালে আমাদের কী উপায় হবে কে জানে। হয়তো আমাদের নদীর জলে ভেসে যেতে হবে।’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Hasnabad, #dam damaged, #Cyclone Amphan

আরো দেখুন