উত্তরবঙ্গ বিভাগে ফিরে যান

দূষণ কম, রুপোলী শস্যের বংশবৃদ্ধিতে উচ্ছ্বসিত মৎস্য দপ্তর

June 5, 2020 | 3 min read

লকডাউনের সুফলে নিস্তার পেল জেলার নদীগুলি। বাড়ছে নদীয়ালি উত্তর দিনাজপুর জেলার নাগর ও মহানন্দা নদীর অন্যতম রুপোলি সম্পদ রায়খোর, ফলি মাছ, পাবদা, কাঁকলা। প্রাক বর্ষায় এই সময় রায়খোর পাটদা চিতলের প্রজনন ঋতু। প্রতি বছর এই সময় উত্তর দিনাজপুর জেলার কুলিক নাগর সহ একাধিক নদীতে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে মৎস্য দপ্তর। বিশেষ করে ছোট জাল দিয়ে ছোট মাছ ধরার ওপর কার্যকর করা হয়। এবছরেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

মৎস্য দপ্তরের দাবি, এই নিষেধাজ্ঞা অন্যান্য বছরের তুলনায় এই বছর অনেক কার্যকর হয়েছে। যার কারণ লকডাউন। উত্তর দিনাজপুর জেলা মৎস্য আধিকারিক অভিজিৎ সাহা জানান, লকডাউনের কারণে এই বছর খুব কম মৎসজীবীকে মাছ ধরতে নদীতে দেখা গিয়েছে। যারা মাছ ধরছেন তারা বড় জাল দিয়ে মাছ ধরছেন। এতে ছোট মাছের বিপদ অনেকটাই কমেছে। পাবদা, কাঁকলা, চিতল, ফলি, বাটা মাছের বংশ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যা শুভসংকেত। পাশাপাশি লক ডাউনে নদী দূষণের মাত্রাও অনেকটা কমে গিয়েছে। তাতে জলে অক্সিজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই সমস্ত মাছের বংশবৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলেছে অনুমান তাদের।

তিনি আরো জানান, লকডাউনে অনেক মৎস্যজীবী মাছ ধরতে যেতে না পারায় অর্থনৈতিক ভাবে চাপের মুখে পড়লেও ভবিষ্যতে তাদের জন্য ভরে উঠছে মৎস্য ভান্ডার। আগামীতে নদী থেকে পর্যাপ্ত মাছের যোগান পাবেন। ফলে অচিরেই আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন তারা। তবে লকডাউনের জেরে কিছু বিলুপ্ত মাছ দেখা যাচ্ছে বলে মৎস্য দপ্তরের দাবি। এই সমস্ত নদীতে রুপোলী শস্যের সংখ্যা বৃদ্ধির ইঙ্গিত মিলায় সাধ্যের মধ্যে ক্রেতারা সাধ পূরণ করতে পারবেন বলে মৎস্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে। এরা বোরলির সঙ্গে এক গোত্রে পড়ে না ঠিকই। কিন্তু এদেরও কদর কোনো অংশে কম ছিল না।

তেচোখা, পাথরচাটা, কাজলি, বুথুম, মহাশোল, চাপিলা এক এক বাজারে দেখা মিলত তাদের। হুমড়ি খেয়ে পড়তেন ক্রেতারা। বর্ষায় নদীর বুকে সব মাছ ধরতে রীতিমতো উৎসবের আয়োজন করা হতো। দু’কূল ছাপানো কুলিক নদীতে ভেসে আসত সাটি মাছ। আগুনে পুড়িয়ে চামড়া ছাড়িয়ে নিয়ে আদা-লঙ্কা-তেল দিয়ে মেখে তা খাওয়ার আমেজটাই ছিল আলাদা। এখনও সেসব মনে পড়লে জিভে জল চলে আসে। উত্তর দিনাজপুরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কুলিক নদীতে রাইখোর মাছের কৌলিন্যই আলাদা। বাটা মাছের মতো দেখতে এদের গায়ে লালচে শিরা, ঠোঁটটাও লাল। ইটাহারের সুঁই নদীতে আবার ‘কাক’ মাছ। ঠোঁটটা কাকের মত।

রুপোলী শস্যের বংশবৃদ্ধিতে উচ্ছ্বসিত মৎস্য দপ্তর

স্থানীয়রা একে ‘কাউয়া’ আবার অনেকে কাঁকলা মাছও বলে থাকেন। দিনের-পর-দিন কার্যত বাজার থেকে উধাও হওয়ার মুখে উত্তরের এসব নদীয়ালি মাছ। আজ আর দেখা মেলেনা খয়েরি রঙের রিঠে মাছ, সাদা কালো ছোপ ছোপ তিন কাঁটা মাছের। দুর্গাপূজোর পর পরই পেটে ডিম ভর্তি বেতরঙ্গি মাছ উঠত বাজারে। অনেকটা জেব্রার মতো হলুদ খয়েরি ডোরাকাটা। আবার ন্যাদোস বা নন্দাই মাছের দেখা মিলত মাঠে ঘাটে। মহানন্দায় তারা সংখ্যায় ছিল প্রচুর। উত্তরের নদী থেকে কেন হারিয়ে যাচ্ছে একের পর এক মাছ? মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “নগরায়নের ফলেই হারিয়ে যাচ্ছে এই মাছ। তার সঙ্গে রয়েছে কীটনাশকের মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব।

নন্দাই মাছের অন্যতম বৈশিষ্ট্য— জলের মান একটু খারাপ হলেই সেখানে আর থাকে না তারা। কৃষি জমিতে লাগামছাড়া কীটনাশক ব্যবহারে ধান ক্ষেতের আলে আজ আর দেখা যায় না তাদের। হারিয়েছে সবুজ আভা যুক্ত ট্যাপা মাছও। একসময় উত্তরে অন্তত আট প্রজাতির পুঁটি মিলত। ছিল বেলে মাছ। এখন সবই অধরা। হারিয়ে যেতে বসা এসব নদীয়ালি মাছ ফেরাতে মৎস্য দপ্তর অবশ্য উদ্যোগী হয়েছে। পুকুরে বোরোলি চাষ করা যায় কিনা তা নিয়েও চলছে গবেষণা, “ইতিমধ্যেই ফলুই, পুঁটি ফেরাতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিভিন্ন পরিত্যক্ত জলাশয়, পুকুর,খাল, বিল, দীঘিতে লুপ্তপ্রায় দেশি মাছের ‘ইন্ডিজেনাস স্পিসিস’ সংরক্ষণে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।” ভয়াবহ ট্যাংরা এবং পাবদা মাছ পুকুরে চাষে উৎসাহিত করতে মৎস্য দপ্তরের উদ্যোগে নিখরচায় বিলি করা হচ্ছে চারাপোনাও‌। উত্তর দিনাজপুর জেলার মৎস্য আধিকারিক অভিজিৎ সাহা বলেন,”ইনভার্টার ব্যবহার করে নদীতে বৈদ্যুতিক উপায়ে মাছ ধরার প্রবনতা বাড়ছে। এর ফলে একসঙ্গে প্রচুর মাছের মৃত্যু হচ্ছে। টেংরা এবং পাবদা মাছ পুকুরে চাষে উৎসাহিত করতে মৎস্য দপ্তরের উদ্যোগে নিখরচায় বিলি করা হচ্ছে চারাপোনা।”

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#fisheries department, #rupoli crop breeding, #lock down

আরো দেখুন