নিজের বৃত্তেও বেনজির ক্ষোভের মুখে মার্কিন প্রেসিডেন্ট
সাম্প্রতিক অতীতে প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের ইরাক অভিযান ঘিরে শেষবার এমন বিতর্ক দেখেছিল আমেরিকা। সেই ঘটনা দেশকে আড়াআড়ি ভাবে ভাগ করে দিয়েছিল। কিন্তু, সে বারও প্রশাসনিক কর্তারা প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছেন, এমন নজিরবিহীন দৃশ্য দেখতে হয়নি কাউকে! বিরোধীরা সরব হয়েছেন, শান্তিকামী মানুষ পথে নেমেছেন এই পর্যন্ত, এ ভাবে পুলিশ আধিকারিক থেকে পেন্টাগন কর্তা, প্রত্যেকেই প্রকাশ্যে প্রেসিডেন্টের বক্তব্যকে নস্যাৎ করছেন, এমন দৃশ্যের নজির বিশ্বের প্রাচীনতম গণতন্ত্রে ছিল না। সেই অর্থে, ইতিহাস গড়লেন ট্রাম্প!
বুধবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের বর্তমান প্রতিরক্ষা সচিব মার্ক এসপারের কথায় প্রথম তাল কেটেছিল। বৃহস্পতিবার কার্যত একই পথে হাঁটলেন তাঁর প্রাক্তন সচিব জিম ম্যাটিসও। সরাসরি প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে বিভাজনের রাজনীতি করার অভিযোগ তুলে বললেন, ‘ট্রাম্প আমার দেখা প্রথম প্রেসিডেন্ট যিনি দেশে ঐক্যরক্ষার চেষ্টা করেন না, এমনকী লোক দেখানো চেষ্টাটুকুও করেন না।’ দ্য অ্যাটলান্টিকে ম্যাটিস লিখেছেন, ‘গত তিন বছর ধরে যে পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে, আমরা আজ তারই ফল দেখছি। তিন বছর ধরে চলা অপরিণত নেতৃত্বের ফল এটা।’ পথে নেমে বিক্ষোভ দেখানো মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ট্রাম্পের প্রাক্তন সহযোগীর বক্তব্য, ‘কয়েকজন বিক্ষোভকারী কী করলেন, সেটা বিষয় নয়। লক্ষ লক্ষ মানুষ যাঁদের বিবেক বলে কিছু আছে, যাঁরা দেশের মূল্যবোধকে বাঁচিয়ে রাখতে চান, দেশকে বাঁচিয়ে রাখতে চান, তাঁদের প্রত্যেকেই প্রতিবাদ করছেন।’
এক জন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসারের হাঁটুর চাপে শ্বাসরোধ হয়ে এক জন কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যুর পর প্রেসিডেন্ট যে ধরনের মন্তব্য করেছেন, কখনও গুলি চালানোর হুমকি দিয়েছেন তো কখনও সেনা নামানোর, তাতে বেজায় ক্ষুব্ধ ম্যাটিস। এটাকে নেতৃত্ব নয়, ক্ষমতার অপব্যবহার বলেই মনে করেন তিনি। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ম্যাটিসকে পেন্টাগনের দায়িত্ব দিয়েছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু, সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ঘিরে বিরোধ বাধে দু’জনের মধ্যে। সরে দাঁড়ান ম্যাটিস। এ দিন তাঁর সমালোচনা প্রকাশ্যে আসায় টুইটারে তীব্র ভাষায় তাঁকে পাল্টা আক্রমণ করেছেন ট্রাম্প। ম্যাটিসকে ‘অকাজের জেনারেল’ এবং ‘খ্যাপা কুকুর’ বলে কটাক্ষ করেছেন তিনি! প্রাক্তনী ওবামাকে টেনে লিখেছেন, ‘বারাক ওবামার সঙ্গে আমার একটাই মিল ছিল, দু’জনেই ম্যাটিসকে তাড়ানোর সুযোগ পেয়েছিলাম।’ প্রাক্তন বসের এমন নজিরবিহীন আক্রমণের অবশ্য ম্যাটিস কোনও জবাব দেননি।
ম্যাটিসের উত্তরসূরি মার্ক এসপার তো চাকরির মায়া না করে এক দিন আগেই জানিয়ে দিয়েছেন যে প্রেসিডেন্ট যাই বলুন না কেন, এখনই সেনা নামানোর তিনি পক্ষে নন। তাঁর মতে, সেনাবাহিনীকে অসামরিক কাজে তখনই লাগানো উচিত যখন আর কোনও বিকল্প পথ খোলা থাকে না। এসপারের এমন ‘স্পর্ধা’য় প্রেসিডেন্ট ক্ষুব্ধ হলেও তাঁর চাকরি এখনও অবধি যায়নি বলেই হোয়াইট হাউস জানিয়েছে। তবে, আগামী দিনে যে তাঁর চাকরি যাবে না, তেমন কোনও নিশ্চয়তা মেলেনি।
ঘটনা হল, এসপার কিংবা ম্যাটিস প্রশাসনের উপরতলার মানুষ, কিন্তু, তাঁদের থেকে নিচুস্তরে থেকেও হিউস্টনের পুলিশ প্রধান আর্ট অ্যাসেভেডো ক’দিন আগে যেভাবে প্রেসিডেন্টকে ‘মুখটা বন্ধ রাখতে’ বলেন, তাতেই বোঝা যাচ্ছে যে ট্রাম্পের নিজের ঘরের পরিস্থিতি কতটা তপ্ত। পুলিশ প্রধানকে প্রশ্ন করা হয়েছিল প্রেসিডেন্টের ‘সেনা নামিয়ে বিক্ষোভ দমানোর’ পরামর্শ নিয়ে। জবাবে ক্ষুব্ধ অফিসার বলেছিলেন, ‘গঠনমূলক কিছু বলার না থাকলে মুখটা বন্ধ রাখুন প্রেসিডেন্ট।’ এমন কথা সে সময়ে ডেমোক্র্যাটদের হাতে থাকা ‘হাউস’-এও শুনতে হয়নি বুশকে। ঘরে-বাইরে এই ক্ষোভ ট্রাম্প কী ভাবে সামাল দেন, এখন সেটাই দেখার।