৭ বছরের নিরলস চেষ্টার ফল, কান চলচ্চিত্র উৎসবে যাচ্ছে বাঙালি পরিচালকের ছবি ‘দোস্তজী’
ফের বাঙালির জয়যাত্রা। করোনা আক্রান্ত বিষণ্ণ সময়ে মন ভাল করা খবর দিলেন দমদম ক্যানটনমেন্টের ছেলে প্রসূন চট্টোপাধ্যায়। তাঁর প্রথম ছবি কান চলচ্চিত্র উৎসবের ‘মার্শে দু ফিল্মস’-এর ‘গোজ টু কানস’ সেকশনে সারা বিশ্ব থেকে ২০টি ‘ওয়ার্ক ইন প্রোগ্রেস’ প্রোজেক্টর মধ্যে নির্বাচিত হয়েছে। আগামী তিন চারমাসে যে ছবিগুলো তৈরি হয়ে যাবে। সেখানে একমাত্র বাংলা ছবি হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে ‘দোস্তজী’। যার আন্তর্জাতিক নাম ‘টু ফ্রেন্ডস’। ২৩ জুন দুপুরে ‘গোজ টু কানস’-এ প্রদর্শিত হবে ছবিটি।
কেমন বিষয় ছবির? জিজ্ঞাসা করতে প্রসূন জানালেন, “নয়ের দশকের শুরুর দিকে যখন সারা দেশে টালমাটাল পরিস্থিতি, ঘৃণা আর অবিশ্বাসের আবহ, সেই সময়টাই এই ছবির প্রেক্ষাপট। মানে বাবরি মসজিদ কাণ্ড এবং মুম্বই বিস্ফোরণ ঘটে গিয়েছে। তার মাস দুয়েক পরের গল্প। কিন্তু ‘দোস্তজী’ ছবির সঙ্গে এই ঘটনাগুলোর সরাসরি কোনও যোগ নেই। সেই সময় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের এক প্রত্যন্ত গ্রামে থাকা দুই বন্ধুর (পলাশ আর সফিকুল) গল্প এই ছবি। মানে ওই মুর্শিদাবাদের শেষ প্রান্ত আর উলটোদিকে বাংলাদেশের রাজশাহি। দুটো বাচ্চা ছেলের বন্ধুত্বের গল্প এবং একই সঙ্গে তাদের চিরস্থায়ী ও চূড়ান্ত বিচ্ছেদের কাহিনি দোস্তজি।” ছবিতে ব্রাহ্মণের ছেলের ভূমিকায় আসিক শেখ এবং মুসলিম তাঁতির ছেলের ভূমিকায় আরিফ শেখ। যাঁরা অভিনয় করেছেন, তাঁরা বেশিরভাগই নন অ্যাক্টর, স্থানীয় গ্রামবাসী এবং গ্রুপ থিয়েটারের অভিনেতা-অভিনেত্রী।
মুর্শিদাবাদে প্রায় দেড় বছর থেকে ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন পরিচালক। তারপর অভিনেতাদের নির্বাচন করা, প্রশিক্ষণ দেওয়া ইত্যাদি মিলিয়ে প্রায় আড়াই বছর প্রসূন ওই গ্রামেই ছিলেন। প্রসূন নিজে থিয়েটার করেছেন, একটি শর্টফিল্মও বানিয়েছেন। তবে ফিচার ফিল্ম এই প্রথম। ফলে যাত্রাটা সহজ ছিল না। ২০১৮’র মে মাসে শুট শুরু করেছিলেন। এখন ফাইনাল সাউন্ড আর গ্রাফিক্সের কাজ চলছে। ফোনে তিনি বলছিলেন, লকডাউনে কাজ আটকে ছিল। ২০১৭-এ যে শর্টফিল্মটা করেছিলাম সেটাও বিভিন্ন দেশে গিয়েছিল। ২০১৩-তে ‘দোস্তজী’র স্ক্রিপ্ট লিখেছিলাম। সাত বছর লেগে গেল ছবিটা হতে। প্রযোজক পেতে দম বেরিয়ে গিয়েছিল। ২০১৭-এ ক্রাউড ফান্ডিং শুরু করি। মাস তিনেক বেশ সাড়া পাই। তারপর স্তিমিত হয়ে পড়েছিল। কিছুদিন পর আরও দু’জনকে সঙ্গে পাই। ফের ‘দোস্তজী’ নির্বাচিত হয় ‘ওয়ার্ক ইন প্রোগ্রেস’ হিসেবে NFDC Film Bazaar এর Film Bazaar Recommends, বিভাগে। যেটা ‘ইফি’র সঙ্গে হয়। সেই প্রথম ইন্টারন্যাশনাল এক্সপোজার। তারপর ছবিটা ‘গোজ টু কানস’-এ সুযোগ পেল। আরও একটা বিষয়, ফিল্মবাজার থেকে ফেরার পর আমরা তাইওয়ান থেকে কো-প্রোডিউসর পাই। এভাবে পুরো কাজটা সম্পন্ন হল।”
প্রসূন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেই বোঝা যায় তিনি হাল ছাড়ার মানুষ নন। তরুণ পরিচালকের চোখে একরাশ স্বপ্ন আর তা সফল করার অধ্যবসায় আছে তাঁর। এখন অপেক্ষা ২৩ জুনের।